কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : ১ জুন একেবারে শেষ দফায় নির্বাচন রয়েছে উত্তর কলকাতায়। ভোটের আগে আবারও চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে এই কেন্দ্র। এবার এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। কিছুদিন আগেই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদান করেছেন তাপস। তখন থেকেই এই কেন্দ্রে একেবারে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। আর এবার কুণাল ঘোষ উত্তর কলকাতার বিজেপি সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষকে নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করলেন। তাঁর বক্তব্য, 'উত্তর কলকাতায় বিজেপির যিনি জেলা সভাপতি রয়েছেন, তিনি তৃণমূলকে সাহায্য করছেন।' যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তমোঘ্ন। পাল্টা তাঁর দাবি, 'উনি (কুণাল ঘোষ) বরানগর উপনির্বাচনে আমাদের সাহায্য করছেন। উত্তর কলকাতাতেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী করে হারানো যায় তার টিপস উনি পাঠিয়ে দিচ্ছেন আমাদের কাছে।' এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, উত্তর কলকাতার ভোটযুদ্ধে কে কার 'বিভীষণ' ? কার্যত সম্মুখসমরে কুণাল-তমোঘ্ন।


এদিন কুণাল দাবি করেন, 'উত্তর কলকাতায় বিজেপি যে জেলা সভাপতি রয়েছেন, তিনি তৃণমূলকে সাহায্য করছেন বলে তৃণমূলের ছেলেদের কাছে রিপোর্ট পাচ্ছি। তৃণমূল স্তর থেকে নানারকম রিপোর্ট আসে। বিজেপির জেলা সভাপতি দেওয়াল ছেড়ে দেওয়া থেকে শুরু করে পুরনো বিজেপি কর্মীরা যাতে ঠিকঠাক না নামেন, তিনি আমাদের সহযোগিতা করছেন। ফলে, সেটা তাপস রায়ের পক্ষে ঘাটতির। নিশ্চিতভাবে আমাদের পক্ষে বা আমাদের প্রার্থীর পক্ষে অত্যন্ত শুভ ইঙ্গিত। একদিকে যেমন মানুষ আছেন, তেমনি নিশ্চিতভাবে বিজেপির একটা অংশ...এটা ভাল ...আমাদের ছেলেরা বিজেপির জেলা সভাপতির প্রশংসাই করছেন।'  


তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি একটা সময় বলেছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিরই প্রার্থী । সেখানে এরকম একটা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করছেন, বিজেপির একটা অংশ, এমনকী জেলা সভাপতিও তৃণমূলকে সাহায্য করছেন ?


এর উত্তরে কুণাল বলেন, 'সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী। আমরা তো চাইব, তৃণমূলকে বাকি সকলে অন্য দলকে ভোট না দিয়ে সব দলের ভোটাররাই তৃণমূলকে ভোট দিন। সুদীপদাকেই ভোট দিন। সেটা তো আমরা চাই। এখন তার মাঝে ভোটে নামার পর বিভিন্ন পাড়ায় যে জটলা, চায়ের দোকান, আমাদের ছেলেরা যেখানে যেখানে দেওয়াল লিখছেন সেখান থেকেই বিশেষ খবর আসছে। তারপরে ওদের মধ্যে কিছু ঝগড়া। ওঁরাই বলছেন, সেটা জেলা সভাপতি এমনভাবে করে রেখে দিচ্ছেন যে ভোটের আগে আর বিজেপি এক হতে পারবে না। ক'দিন আগে ওদের হলে কী সব হয়েছে। আমাদের ছেলেরা বিজেপির জেলা সভাপতির প্রশংসা করছিল। বলছিলেন দাদা, উনি (পড়ুন তমোঘ্ন) একটা সেকশনকে বসিয়ে রেখে দিচ্ছেন। আমাদের মোটামুটি দেওয়াল ছেড়ে দিচ্ছেন। তাহলে সিপিএম-কংগ্রেস অন্য দলকে যাঁরা ভোট দেন তাঁদের বলব, তৃণমূলকেই ভোট দিন। তৃণমূলই মানুষের পাশে আছে। তৃণমূল এত উন্নয়ন করছে। সেখানে বিজেপির জেলা সভাপতি সত্যিই যদি এভাবে তৃণমূলকে সাহায্য করে থাকেন সেটা তো ভাল কথা । ভোটের পর ওঁকে ফেরত নেওয়া যায় কিনা দল নিশ্চয়ই দেখবে।'


যদিও সেই দাবি নস্যাৎ করে পাল্টা তোপ দেগেছেন তমোঘ্ন। তিনি বলেন, 'এক, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কলকাতায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হারবেন। দুই, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়কে জেতানোর জন্য। বাজি রাখছি, চ্যালেঞ্জ করে দিলাম, উত্তর কলকাতা থেকে বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়কে জিতিয়ে দেখাব। তিন, আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে, উনি (কুণাল ঘোষ) বরানগর উপনির্বাচনে আমাদের সাহায্য করছেন। উত্তর কলকাতাতেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী করে হারানো যায় তার বিভিন্ন টিপস তো উনি পাঠিয়ে দিচ্ছেন আমাদের কাছে। তার সঙ্গে আরও একটা তথ্য দিচ্ছি, উনি জেলে যাওয়ার আগে এবং জেল থেকে বেরনোর পর, সাউথ দিল্লিতে কোন ফ্ল্যাটে কতবার গেছেন বিজেপিতে যোগদান করার জন্য, যদি দরকার পড়ে তার ফুটেজ বিজেপি দিয়ে দেবে। তাছাড়া উনি বিভিন্ন রকম ইনপুট নিয়ে আমাদের কাছে পাঠাচ্ছেন। তার জন্য ওঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। '


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।