কলকাতা: তৃণমূলে থাকাকালীন বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানোর ক্ষেত্রে বারেবারে দেখা গিয়েছিল তাঁর সক্রিয়তা। বিরোধী শিবিরে ভাঙানোয় তাঁর ভূমিকা বারবার দেখা গিয়েছে। এবার সেই ভূমিকা নিয়েই এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রথমবার মুখ খুললেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।  দলবদলকারীদের বেশ কয়েকজনের নাম নিয়ে নানা দাবি করলেন তিনি। জানালেন কেউ এসেছেন টাকার জন্য়, কেউ এসেছেন রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার জন্য। 


দলবদল এই রাজ্য়ের রাজনীতিতে আর নতুন নয়। কখনও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে, কখনও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে (TMC) যোগদানের ছবি এখান কার্যত স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে দলবদলের এই ঢল পশ্চিমবঙ্গে মূলত শুরু হয়েছিল তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর। বাম-কংগ্রেসের গড়, মালদা-মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার নেপথ্য়ে শুভেন্দু অধিকারীই অন্য়তম কারিগর ছিলেন বলে সেই সময় অভিযোগ উঠত। এবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, তা নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন বর্তমান বিরোধী দলনেতা। 


এবিপি আনন্দের (ABP Ananda Exclusive) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে বলেন, 'আপনি নিজে যখন দল ছাড়লেন। ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ সালে দল ছাড়লেন। নিজে কিন্তু পদত্য়াগ করেন, যাতে নৈতিকতার প্রশ্ন না তুলতে পারে। কিন্তু, আপনি যখন তৃণমূলের হয়ে একটার পর একটা জেলা পরিষদ খালি করে দিতেন, কেউ পদত্য়াগ করত না। এইটা কেন?' এই প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'আমাকে দিয়ে ভাঙিয়েছে অনেক। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। মালদা-মুর্শিদাবাদে আমি ১৪টা MLA ওঁকে এনে দিয়েছি।' তিনি আরও বলেন, 'ওঁর পলিসি আমি ইমপ্লিমেন্ট করেছি। আমার কোনও ব্য়াপার না। উনি মুর্শিদাবাদ, মালদা ওখানে, মুকুল রায়কে দিয়ে পারেননি। পূর্ণেন্দু বোসকে পাঠিয়েছিলেন, পারেননি। ইন্দ্রনীল সেনকে কিছুদিন পাঠিয়েছিলেন, পারেননি। অনেক টেস্ট করেছেন উনি।'


কীভাবে কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতাদের ভাঙিয়ে তৃণমূলে আনা হতো? অর্থের বিনিময়ে? এবিপি আনন্দে সুমন দে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে নাম নিয়ে চাঞ্চল্য়কর দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানান, কিছু MLA তো টাকা নিয়ে জয়েন করেছে। আবার কিছু কিছু লোকজন পরিস্থিতির বশেও এনেছেন। তিনি জানান, অনেকে মনে করেছেন কংগ্রেসের ভবিষ্যতে নেই- সেই সুযোগটাই তৃণমূল নিয়েছে। এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে জিজ্ঞেস করেন, 'কীরকম টাকা পয়সা খরচ হয়? মানে কত টাকায় পশ্চিমবঙ্গে MLA কেনা যায়?' তার উত্তরে বিরোধী দলনেতা বলেন, 'আমি এগুলো বলব না। আমি মাইকে বলেছি। আমি শাওনি সিংহ রায় কত টাকা নিয়েছে, আপনার আশিস মারজিৎ কত নিয়েছে, কানাই মণ্ডল কত নিয়েছে, জলঙ্গির রেজ্জাক কত নিয়েছে, আমি বিভিন্ন সময়ে বলেছি।'


তৃণমূলের হয়ে দল ভাঙানো নিয়ে বিস্ফোরক শুভেন্দু। কিন্তু এই দাবি মানতে চাননি আশিস মারজিৎ, আব্দুর রজ্জাক, কানাই মণ্ডলরা। পাল্টা মিথ্যে অভিযোগ করার দাবি করেছেন তাঁরা। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে, তৃণমূলের রাজ্য় সম্পাদক শাওনি সিংহ রায় বলেন, 'না শুনে কিছু বলব না।'


শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari Exclusive) মুখে উঠে এসেছে কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারের নামও। যিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'আমি ওঁদের পলিটিক্য়াল সিচুয়েশন বুঝিয়েছি। ওনাদের যাদের প্রয়োজনীয়তা আছে, পূরণ করেছি। যাদের এলাকার ডেভলপমেন্টের কিছু কমিটমেন্ট আছে, সেগুলো মিটিয়েছি। যেমন কান্দির অপূর্ব সরকার, তাঁর রাজনৈতিক প্রয়োজন ছিল, তাঁকে লোকসভা লড়াতে হবে, লড়িয়েছি।' তৃণমূল বিধায়ক ও মুর্শিদাবাদ বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, 'অপূর্ব সরকারকে পয়সা দিয়ে কেনা যায় না। আমি পলিটিকাল এলিমেন্ট এবং ওনাকে বলতে চাই সম্মানের সঙ্গে, আমার পায়ে ধরে উনি দাঁড় করিয়েছেন আমাকে। আমার কোনও পলিটিকাল ডিমান্ড ছিল না যে ভোটে দাঁড়াতে হবে। যদি উনি তর্ক করতে চান, ওয়েলকাম। মঞ্চ বাঁধুন অপূর্ব সরকার থাকবে।'


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।  


আরও পড়ুন:  রেশন দুর্নীতি মামলায় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণাকে তলব ইডির! নজর আর্থিক লেনদেনে