বিশ্বজিৎ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: ভোটের মুখে তৃণমূল (TMC) ছেড়ে কাউন্সিলরের বিজেপিতে (BJP) প্রত্যাবর্তনের পরেই পার্টি অফিস দখল নিয়ে খড়গপুরে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ। মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের (Midnapore BJP Candidate Agnimitra Paul) সামনেই দু’পক্ষের হাতাহাতি বেধে যায়। গতকাল তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে ফেরেন খড়গপুর পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুকেশ হুমনে। অগ্নিমিত্রার অভিযোগ, যোগদানের পর পার্টি অফিসে গন্ডগোলের খবর পেয়ে তিনি যাওয়ার চেষ্টা করায়, রাস্তায় তাঁকে বাধা দেন তৃণমূল কর্মীরা। পাল্টা পথ অবরোধের হুঁশিয়ারি দেন মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে বিক্ষোভকারী তৃণমূল কর্মীদের সরিয়ে দেয়। শাসকদলের পাল্টা অভিযোগ, অগ্নিমিত্রাই বহিরাগতদের এনে তৃণমূলের পার্টি অফিস দখলের চেষ্টা করেন। বাধা দেওয়ায় গন্ডগোল বাধে। 


খড়গপুরে পার্টি অফিস দখল ঘিরে অগ্নিমিত্রার সামনেই শুরু হাতাহাতি ..


 তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন খড়গপুর পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর মুকেশ হুমনে।গতকাল সন্ধ্যায় খড়্গপুর শহরের জাপেটাপুর এলাকায়, শুভেন্দুর সভামঞ্চে অগ্নিমিত্রা পালের হাত থেকে তুলে নেন দলীয় পতাকা। তিনি বিজেপি দলের হয়ে কাউন্সিলর ভোটে জিতে আসার পর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন। গতকাল বিজেপির সবাই বলেছিল 'ঘর ওয়াপসি' হল মুকেশের।  তারপর আইমা এলাকায় মুকেশ হুমনে নিজের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের পতাকা খুলে বিজেপির পতাকা লাগাতে যান । এরপরেই শুরু অশান্তি।মুকেশকে ওই এলাকার তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা বাধা দেয়। বিজেপির পতাকা লাগাতে বারণ করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তৃণমূল ও বিজেপির কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বচসা। ওই এলাকায় গন্ডগোলের খবর পেয়ে পৌঁছয় এডিশনাল এসপি সন্দীপ সেনের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী। গন্ডগোলের খবর শুনে ওই এলাকায় যায় মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল।


'তৃণমূলের লোকেদের না সরালে, খড়্গপুরে সড়ক অবরোধ..'


অগ্নিমিত্রা পালের অভিযোগ , তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই, তাকে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা রাস্তায় আটকে দেয়। ঘটনাস্থলে ঢুকতে বাধা দেয়। সেখানে পুলিশের সামনেই শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা। পুলিশকে অগ্নিমিত্রা পাল ৩০ মিনিট সময় দিয়ে বলেন, তৃণমূলের লোকেদের রাস্তা থেকে যদি না সরিয়ে দেন তাহলে খড়্গপুরের মেইন সড়ক অবরোধ করবেন। তারপরই পুলিশ তৃণমূলের লোকজনদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়ে অগ্নিমিত্রা পালকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সুবিধা করে দেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর দুই দলের মধ্যে বচসার সৃষ্টি হয় এবং পুলিশের সামনে হাতাহাতিও হয়। কয়েক ঘন্টা ধরে দুই পক্ষই তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বসে থাকেন। তারপর পুলিশের আশ্বাসে অগ্নিমিত্রা পাল এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যান। 


খড়গপুরে BJP যোগ কাউন্সিলরের


তিনি বলেন, এখানকার কাউন্সিলর আগে বিজেপিতে ছিলেন। পরে তৃণমূলে যান। আজকে উনি আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে ফিরে এসেছেন। ওনার একটা পার্টি অফিস ছিল। উনি বিজেপিতে ছিলেন তখন। সেটা বিজেপির পার্টি অফিস ছিল। উনি পরে তৃণমূলে যান তখন সেটা তৃণমূলের পার্টি অফিস হয়ে যায়। আজকে সন্ধ্যেয় উনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ওই অফিসটিকে বিজেপির অফিস করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের অভ্যেস সব জায়গাতেই জবরদখল করা। আমি খবর পেয়ে এখানে পৌঁছাই। সামনেই তৃণমূলের পার্টি অফিস। তৃণমূলের লোকজনেরা রাস্তা বন্ধ করে। আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছিলাম। আমি বারবার পুলিশকে বলি রাস্তা অবরোধ মুক্ত করে আমাকে মুকেশের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। মুকেশ আজ থেকে আমার দলের কর্মী। সে বিপদে পড়েছে তার পাশে দাঁড়ানো আমার কর্তব্য। পুলিশ রাস্তা খালি করে তৃণমূলের লোকজনদের মুকেশের পার্টি অফিস অব্দি নিয়ে যায়। আমিও পিছন পিছন যাই। এতক্ষণ সেখানেই বসেছিলাম। আমরা মীমাংসা চাইছি। জায়গা যার তিনি ঠিক করবেন তিনি কাকে পার্টি অফিস করতে দেবেন।


'পুলিশ সরকারের প্রচন্ড ভয় রয়েছে'


তিনি আরও বলেন,' এখন ঠিক হয়েছে, কালকে দু পক্ষ কাগজপত্র নিয়ে যাবে। মহকুমা শাসকের সামনে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। রাজীব পাল ও তার সহকর্মীরা রাস্তা থেকে অবরোধ সরাতে পারছিল না। আমি যখন তাদের বলি যে আমাকে অন্য পদক্ষেপ নিতে হবে তখন তারা অবরোধ সরায় কিন্তু তৃণমূলের লোকজনদের মুকেশের অফিসের সামনে নিয়ে চলে যায়। প্রতিটা পদক্ষেপে পুলিশ সরকারের প্রচন্ড ভয় রয়েছে। কাউন্সিলরের হাতাহাতি করছে এটা কোন রাজনীতি, কোন সংস্কৃতি। 


'কাউন্সিলার যে দলে যায় পার্টি অফিস তার হয়ে যায়'


মুকেশ হুমনে বলেন, 'তৃণমূল আতঙ্ক ছড়িয়ে রেখেছে। আয়মাতেই তৃণমূল কংগ্রেসের  অফিস আছে। সেই অফিস আগে কংগ্রেসের ছিল। কাউন্সিলর দল বদল করায় সেই অফিস তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে যায়। পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষও একইভাবে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এসেছেন। তার কংগ্রেসের অফিস তৃণমূলের হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে কাউন্সিলার যে দলে যায় পার্টি অফিস তার হয়ে যায়। বিজেপির এই পার্টি অফিস ৪৫ বছরের পুরনো। আমি যখন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাই তখন এরা কোনদিনও বলেনি যে বিজেপির পার্টি অফিসটা বিজেপিকে ছেড়ে দাও। রামের যেমন ১৪ বছরের বনবাস হয়েছিল। আমার তেমন ২৪ দিন বনবাস হয়ে গিয়েছিল। ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলাম তৃণমূলের আতঙ্কে। আমাকে এইভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে। পুলিশকে পাঠানো হয়েছিল। আমার যে ছেলেরা পুরসভায় কাজ করে, তাদেরকে ফোনে  কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। থানার এসআই মাইতিবাবুর নেতৃত্বে পার্টি অফিসে তালা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরে পুরপ্রধানের নেতৃত্বে তৃণমূলের লোকেরা গিয়ে পার্টি অফিসের তালা ভাঙ্গে। পার্টি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিজেপির পতাকা ছিড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতিও হয়েছে। আমাদের প্রার্থীকেই যেতে দেওয়া হচ্ছে না তো আমি থানায় অভিযোগ জানাতে কিভাবে যাব। অবশ্যই অভিযোগ করব। আমি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। যেকোনও সময় এরা যা খুশি করতে পারে।'


আরও পড়ুন, পেট্রোলের দর কমল চেন্নাইয়ে, কলকাতা-সহ জেলায় কতটা সস্তা জ্বালানি ?


'কাউন্সিলর মিথ্যা বলছেন'


জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, 'অবাস্তব কথা বলে লাভ নেই। যে পার্টি অফিসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আছে, দলের পতাকা আছে। সেগুলো কি সরানো যায় ? বিজেপি প্রার্থী বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে রাতের বেলা তৃণমূলের পার্টি অফিস দখল করতে যাচ্ছে, এটা আদর্শ আচরণ বিধিকে লংঘন করছে। ইলেকশন কমিশনের উচিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। উনি খড়্গপুরে আসছেন শুধুমাত্র অশান্তি বাধাতে। অন্যান্যরা যখন কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে ওয়ার্ডের কর্মীদেরকে নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে তারপর ওটা তৃণমূলের পার্টি অফিস হয়েছে। কিন্তু মুকেশ হুমনের সঙ্গে আমাদের কোনও কর্মীরা যায়নি। কাউন্সিলর মিথ্যা বলছেন তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করা হয়েছে বলে। বরং আমাদের মহিলা কর্মীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন। ইতিমধ্যে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। ওরা পাথর ছুড়েছে, পুলিশকেও লেগেছে। আমরা আটকালে উনি অফিসে যেতেই পারতেন না। আমাদের একটাই কথা আয়মায় অশান্তি বাধাতে দেব না।'