অনির্বাণ বিশ্বাস, রায়গঞ্জ : ২০১৪ সালে পর্যন্ত হাত শিবিরের গড় ছিল রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র (Raiganj Lok Sabha Constituency)। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত সেখানে জয়ের স্বাদ পায়নি কংগ্রেস। এবারের ভোটে রায়গঞ্জ জিততে হাত শিবিরের ভরসা আলি ইমরান রামজ। কংগ্রেসকে জয়ী করতে চেষ্টার কসুর করছেন না তিনি।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রামজ (Ali Imran ramz) ওরফে ভিক্টর। প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই জোরদার প্রচার শুরু করেছেন কংগ্রেস প্রার্থী। রোড শো থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন সংযোগ, ভোট যুদ্ধে মানুষের মন জয় করতে কোনও কিছুই বাদ রাখছেন না তিনি। প্রচারের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে পড়ছেন হাটে বাজারে। চায়ের দোকানে গিয়েও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শুনছেন তিনি।
রায়গঞ্জে এবার ত্রিমুখী লড়াই। দেবশ্রী চৌধুরীর জেতা আসনে কার্তিক পালকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এই আসনে তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী।ঘাস ফুল ও পদ্ম ফুলকে পরাস্ত করতে হাত শিবিরের ভরসা আলি ইমরান রামজ ওরফে ভিক্টর। কংগ্রেস প্রার্থী বলেন, "যিনি বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন, তিনি কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপরে তৃণমূলে এসে পৌরসভার চেয়ারম্যান হলেন। এখন সাংসদ হওয়ার লোভে আবার উনি বিজেপিতে যোগদান করেছেন। একইরকমভাবে যিনি তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন, উনি বিজেপির বিধায়ক ছিলেন। উনি এখন তৃণমূলে যোগদান করেছেন। কংগ্রেসের মাটি। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এই রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হয়েছেন। দীপা দাশমুন্সি এখান থেকে সাংসদ হয়েছেন। মহম্মদ সেলিমের মতো ব্যক্তিত্বরা এখান থেকে সাংসদ হয়েছেন। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি শুধু আমাদের সাংসদ ছিলেন না বা পশ্চিমবঙ্গের নেতা ছিলেন না। উনি দেশের নেতার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখতেন। আজ আমি কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে বাম-কংগ্রেস জোটের হয়ে লড়াই করছি, এটা আমার কাছে গর্বের বিষয় যে সেই মাটি থেকে আজ আমাকে জনগণ আশীর্বাদ দিচ্ছেন।"
রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা আলি ইমরান রামজ ছাত্র রাজনীতি থেকে নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ২০০২ সালে যোগেশচন্দ্র ল'কলেজে পড়তে এসে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ২০০৯ সালে গোয়ালপোখর বিধানসভা উপনির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হিসেবে প্রথম জয় পান আলি ইমরান রামজ। ২০১১ সালে গোয়ালপোখর ভেঙে চাকুলিয়া বিধানসভা গঠিত হয়। ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক ছিলেন আলি ইমরান রামজ। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের কাছে হেরে যান। ২০২২ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। আলি ইমরান রামজের বাবা রমজান আলি গোয়ালপোখরে দীর্ঘদিনের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক ছিলেন।
কাকা হাফিজ আলম সাঈরানি পরে ওই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হন। বামফ্রন্ট সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন হাফিজ আলম সাঈরানি।
আলি ইমরান রামজ বলেন, "২০১৯ সালে এটা একটা অ্যাক্সিডেন্টাল উইন হয়েছিল। অ্যাক্সিডেন্ট একবারই হয়। মানুষকে তখন আচ্ছে দিন আয়েগা, ১৫ লাখ রুপিয়া আয়েগা, দো ক্রোড় নকরি মিলেগি, কালা ধন ওয়াপস আয়েগা...এইসব গল্প শোনানো হয়েছিল। যাঁরা তখন এইসব ভাঁওতার মধ্যে পড়ে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁরা আজ বুঝতে পেরেছেন এই ভাওঁতাবাজদের দিয়ে দেশ চলবে না। সেইজন্য যাঁরা ভোট দিয়েছিলেন, আজ তাঁরা ফিরে এসেছেন। একমাত্র জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি দাঁড়িয়েছি বাম-কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। বাকি দল থেকে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল বা বিজেপি থেকে তাঁরা জনমত নিয়ে ব্যবসা করতে এসেছেন।"
২০১৪-র নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল রায়গঞ্জে। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির কংগ্রেসের গড় রায়গঞ্জ কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল সেবছর। দীপা দাশমুন্সীকে মাত্র ১ হাজার ৩৫৬ ভোটে হারিয়ে সাংসদ হন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। হারানো গড় পুনরুদ্ধার করতে পারবেন আলি ইমরান রামজ ? অপেক্ষায় হাতশিবির।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।