দার্জিলিং : কার্শিয়ঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার 'বিদ্রোহ' ঘোষণার পর 'সিঁদুরে মেঘ' দেখেছিল দলের একাংশ। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তিনি। দার্জিলিং আসনটি বিজেপি ধরে রাখতে পারবে কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। যদিও, রাজ্যে তীব্র সবুজ ঝড়ের মধ্যে যে ক'টি আসনে বিজেপি জিততে পেরেছে তার মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং কেন্দ্রটি। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করলেন বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩৩১। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে দেড় লক্ষাধিকের অনেক বেশি ভোটে জিতেছেন তিনি।


দার্জিলিং আসনে জয়ের জন্য এবার তৃণমূলের বাজি ছিল গোপাল লাম। অন্যদিকে, কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল মুনিশ তামাংকে। গণনা শেষে দেখা যাচ্ছে, দার্জিলিঙে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে গোপাল লামাকে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫২৫ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন রাজু বিস্তা। তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট  ৫ লক্ষ ৮০৬টি ভোট। অন্যদিকে, কংগ্রেস প্রার্থীর ঝুলিতে এসেছে ৮৩ হাজার ৩৭৪টি ভোট। শিকে ছেঁড়েনি 'বিক্ষুব্ধ' বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার। নির্দল প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়ে মাত্র ৭ হাজার ৪৪৭টি ভোট পেয়ে জমানত জব্দ হয়েছে তাঁর।


লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের হাত ছেড়ে ফের বিজেপির হাত ধরেন বিমল গুরুঙ্গ। রাজু বিস্তকে দল ফের প্রার্থী করায় যখন পাহাড়ে বিজেপির অন্দরেই বিদ্রোহ দেখা দেয়, ঠিক তখন বিজেপির হাত ধরে গুরুঙ্গ। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন কার্শিয়ঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। গত ১৫ বছর ধরে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র বিজেপির দখলেই ছিল। এবার কি রাজুর ওপর ভরসা রেখে বৈতরণী পার হতে পারবে বিজেপি ? শঙ্কার মেঘ জমে বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার সিদ্ধান্তে। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটে পাহাড়ে বিজেপি প্রার্থীকেই সমর্থন করবে বলে ঘোষণা করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। 


কিন্তু, কেন 'বিদ্রোহ' ঘোষণা করেন বিষ্ণুপ্রসাদ ?


লোকসভা ভোটে দার্জিলিঙে বিদায়ী সাংসদ রাজু বিস্তকে ফের প্রার্থী করে বিজেপি। আর তার পরেই বেঁকে বসেন কার্শিয়ঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। নির্দলের হয়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেন তিনি। 


দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র গত ১৫ বছর বিজেপির দখলে। ২০০৯ সালে দার্জিলিং থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন আদতে রাজস্থানের বাসিন্দা যশবন্ত সিং। তারপর ২০১৪ সালে পাহাড় থেকে সুরেন্দ্র সিং অহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করে বিজেপি। ২০১৯ সালে রাজু বিস্ত। এই পরিস্থিতিতে কার্শিয়ঙের বিজেপি বিধাকের প্রশ্ন, কেন বিজেপি কোনওদিন দার্জিলিংয়ের কোনও ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করে না?


তিনি বলেছিলেন, "আলাদা রাজ্যের ডিমান্ডেই আমি রাজনীতিতে এসেছি। আর বিজেপিতে আমি আসলাম এইজন্য যে, বিজেপি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আপনাদের যে ডিমান্ডটা আছে এটা আমরা পূরণ করব। পরপর এই আশায় আমরা ১৫ বছর ধরে ৩ টে এমপি এখান থেকে জিতিয়ে পাঠালাম। কিন্তু যত সাংসদ বাইরে থেকে আসেন সবাই আমাদের ইস্যুর মধ্যে ওই ঢাকনার কাজ করছেন।"


মনোনয়ন জমার সময়ও সেই সুরেই বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা বলেন, 'মূল দাবি, আলাদ রাজ্যের। যে কোনো আকারে বাংলার থেকে আলাদা। এখান দেখার, আলাদা রাজ্যের পক্ষে ওরা সমর্থন করে কি না। নাকি দিল্লির ঢাকনি দেওয়া বা কলকাতার না দেওয়া লোকেদের সমর্থন করে। সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। আমি আমার রাজনৈতিক ধর্ম পালন করেছি।' 


যদিও বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার নির্দল হয়ে মনোনয়ন জমা প্রসঙ্গে অবশ্য রাজু বিস্ত বলছেন, 'ভোটে লড়ার হলে লড়ুক। আমার কাছে অনুমতির কোনো প্রয়োজন আছে নাকি ?'