সুনীত হালদার, হাওড়া: একটা সময় হাওড়া শিল্পাঞ্চলকে বলা হত শেফিল্ড অফ ইস্ট। শুধু পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার নয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিক কাজের জন্য হাওড়ায় (Howrah) আসতেন। কিন্তু, আজ পেটের টানে হাওড়ার হাজার হাজার শ্রমিক ভিন রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। এইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটাধিকার থাকলেও তাঁরা বাড়ি ফিরতে না পারায় এবারের লোকসভা নির্বাচনে (Lok sabha elections 2024) ভোট দিতে পারবেন না। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ তাঁদের পরিবারের লোকজন।
আগেই হাওড়া শিল্পে তার পুরনো গৌরব হারিয়েছে। ফলে ঘরের ছেলেরা আর ঘরের কাছে কাজ পান না। তাই বাধ্য হয়ে রুটি রুজির টানে হাজার হাজার যুবক পাড়ি জমিয়েছেন কেরল, কর্ণাটক, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, দিল্লি এবং আরবের বিভিন্ন দেশে। এইসব পরিযায়ী শ্রমিকরা নির্মাণ শিল্প, সোনা এবং হিরের গয়না শিল্প, জরির কাজ অথবা ছোট ছোট কারখানায় কাজ করেন। এই রাজ্যে কাজ না পেয়ে পেটের টানে বাধ্য হয়ে জগৎবল্লভপুর, ডোমজুড়, সাঁকরাইল, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া এবং শ্যামপুরের যুবকরা বাইরের রাজ্যে বছরের পর বছর কাজ করছেন। তাঁদের বাবা, মা, স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরা থাকছেন গ্রামের বাড়িতে।
তাঁদের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, বাইরে কাজের মজুরি বেশি হওয়ায় তাঁরা ওখানকার সংসার চালিয়েও বেশ কিছু টাকা ঘরে পাঠাতে পারেন। তাই ওখানেই তাঁরা কাজ করছেন। কোভিড বিপর্যয়ের আগে এইসব পরিযায়ী শ্রমিকরা ভোটের সময় ঘরে ফিরে নিজের ভোট নিজে দিতে পারতেন। কিন্তু এবারে বাড়িতে আসার খরচ না থাকা এবং বাইরের কোম্পানিগুলি ছুটি না দেওয়ার কারণে বেশিরভাগ শ্রমিক গ্রামে ফিরতে পারছেন না। ফলে গণতন্ত্রের যে মহোৎসব তাতে তাঁরা অংশ নিতে পারছেন না।
হাওড়া থেকে ঠিক কত পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে কাজ করছেন তার হিসেব জেলা প্রশাসন অথবা রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও নেই। তবে ভোট আসতেই এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধী সিপিএম এবং বিজেপির পক্ষ থেকে এই সমস্যার জন্য সরাসরি দায়ী করা হয়েছে রাজ্য সরকারকে। তাদের অভিযোগ রাজ্যে শিল্পের প্রসার না হওয়ার কারণেই এখানকার বেকার যুবকরা বাইরে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এপ্রসঙ্গে সিপিএমের হাওড়া সদর কেন্দ্রের প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী রাজ্য সরকার। আমরা চাই পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরে আসুন। আর যেন পরিবার ছেড়ে তাঁদের বাইরে যেতে না হয়। এর জন্যই আমরা আন্দোলন করছি।"
বিজেপির হাওড়া সদরের প্রার্থী রথীন চক্রবর্তীও একইভাবে রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, "হাওড়া গেটওয়ে অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া এবং শেফিল্ড অফ এশিয়া নামে পরিচিত ছিল। এখানে অন্য রাজ্য থেকে কাজের জন্য আসতেন শ্রমিকরা। আর এখন উল্টো। আমরা চাই শ্রমিকরা ঘরে ফিরুক। শিল্পে পুনরুজীবন হোক। নতুন প্রজন্ম শহরের নাড়ির কথা ও ঐতিহ্যকে জানুক। প্রধানমন্ত্রী আবার সেই পথকে প্রশস্ত করতে শুরু করেছেন।"
তৃণমূল কংগ্রেসের হাওড়া সদরের সভাপতি এবং ডোমজুড়ের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ বিরোধীদের অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ৯০% শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক ভোট দিতে ঘরে ফিরেছেন। তাঁরা প্রতিবারের মতো এবারেও গণতন্ত্রের মহোৎসবে যোগ দেবেন।
ভোট আসে ভোট যায়। কিন্তু পেটের টানে পরিযায়ী শ্রমিকরা আর ঘরে ফিরতে পারেন না। কবে ফের তাঁরা গ্রামে ফিরে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন কার্যত সেদিকেই তাকিয়ে আছেন তাঁদের পরিবারের লোকজন।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।