লখনউ: উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারের দু বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রিপোর্ট কার্ড পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রিপোর্ট কার্ডে তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে কৃষকদের সমস্যার সমাধান, দুর্নীতির মোকাবিলা সহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সরকারের সাফল্যের দাবি করেছেন। যদিও এই রিপোর্ট কার্ডকে খারিজ করে দিয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। যোগী সরকারের সাফল্যের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।


রিপোর্ট কার্ডে যোগী দাবি করেছেন, তাঁর সরকারের আমলে উত্তরপ্রদেশের ভাবমূর্তি বদলে গিয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সারা দেশের কাছেই রোল মডেল হয়ে উঠেছে। কারণ, তাঁর আমলে রাজ্যে একটিও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, ২০১৭-র মার্চে তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন কৃষকরা আত্মহত্যা করছিলেন, খুন,লুঠ ও সাম্প্রদায়িক হানাহানি নিত্যকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাজনৈতিক মদতে মাফিয়ারা রাজ্যের সম্পদ লুঠ করছিল। এসপি ও বিএসপির আমলে মাফিয়াদের একছত্র দাপট ছিল বলেও রিপোর্ট কার্ডে দাবি করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও দাবি করেছেন, দুর্নীতির রমরমা ছিল দীর্ঘ সময় জুড়ে।

যোগীর দাবি, ক্ষমতায় এসে তিনি রাজ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছেন এবং বেহাল ভাবমূর্তি উদ্ধার করেছেন। রাজ্যের পরিস্থিতি এখন দেশের কাজে নজির হয়ে উঠেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি সরকারের আমলে একটি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি, অ্যাসিড হামলা বা অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেনি।

বড়সড় সাম্প্রদায়িক হানাহানির ঘটনা না ঘটলেও গত বছরের ডিসেম্বরে বুলন্দশহরে প্রায় ৪০০ জনের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেঁধেছিল। সংঘর্ষকারীদের মধ্যে ছিল দক্ষিণপন্থী কর্মীরাও।  জঙ্গলে গোমাংস ছড়িয়ে থাকার খবর ঘিরে এই সংঘর্ষ বেঁধেছিল। গত বছরের জানুয়ারিতে একটি  তিরঙ্গা যাত্রার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনার পর কাসগঞ্জে একাধিক হিংসা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গত বছর স্বাধীনতা দিবসে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে এ ধরনের মিছিল বের করার অনুমতি দেয়নি রাজ্য সরকার।

কৈরানাতেও শান্তি ফিরে এসেছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কৈরানা থেকে পলায়ন ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছিল।

অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের খতিয়ানও পেশ করেছেন যোগী।

নিজের সরকারের সাফল্যের দাবি করে যোগী কংগ্রেসকেও একহাত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কংগ্রেস বেশিরভাগ সময় রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল এবং উত্তরপ্রদেশকে বিমারু তকমা এনে দিয়েছিল। এরপর ৯০-এর দশকে এসপি ও বিসএপির আমলে উত্তরপ্রদেশে নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলাহীনতার একটি নয়া পর্ব শুরু হয় বলেও অভিযোগ করেছেন যোগী।

যোগীর সাফল্যের এই দাবি খারিজ করে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বলেছেন, রিপোর্ট কার্ড পড়তে ভালো হলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি। তাঁর অভিযোগ, কৃষক ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সব সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। প্রত্যেকেই দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা কিছুই পাননি।

প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের কথা ও বাস্তবের বিস্তর ফারাক রয়েছে।

কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল বলে যোগী যে মন্তব্য করেছেন, তার জবাবে প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, কংগ্রেস ৭০ বছরে কী করেছে, এই যুক্তির একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ। বরং বিজেপির বলা উচিত যে, মোদী ক্ষমতায় আসার  তারা কী কাজ করেছে।