মুম্বই: বছর ঘুরলে লোকসভা নির্বাচন। তর পরই বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার আগে মহারাষ্ট্রে ফের ভাঙন বিজেপি-বিরোধী শিবিরে। শরদ পওয়ারের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে NCP-র বিরুদ্ধে এবার বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন তাঁর ভাইপো অজিত পওয়ার। কার্যত দিনের দিনই BJP-তে গিয়ে উঠলেন তিনি। শপথও নিয়ে ফেললেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। দেবেন্দ্র ফড়নবীসের সঙ্গে দায়িত্ব ভাগ করে নেবেন। শুধু BJP-র হাত ধরাই নয়, সরাসরি শরদের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অজিত (Ajit Pawar)। জানিয়েছেন, NCP-র গোটাটাই এখন তাঁর পক্ষে। ৫৩ জন বিধায়কের মধ্যে ৪৩ জনই তাঁর পাশে রয়েছেন। এই নিয়ে দু'বছরে পর পর দু'বার মহারাষ্ট্রে বিজেপি বিরোধী শিবিরে ভাঙন দেখা গেল। গতবছর প্রথমে শিবসেনা (সাবেক)-র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন একনাথ শিন্ডে। উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা-NCP-কংগ্রেসের মহা আঘাডি জোটের সরকারকে উৎখাত করতে হাত মেলান BJP-র সঙ্গে। এবার তাঁর দেখানো পথে হাঁটলেন অজিতও। তবে একনাথ এবং অজিত নিজ নিজ দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা  করলেও, নেপথ্যে BJP-র রাজনৈতিক কৌশলই কাজ করছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বিরোধী শিবিরের দুই দলে ভাঙন ধরাল তারা (Maharashtra NCP Political Crisis)।


রবিবার আটজন NCP নেতাকে নিয়ে BJP-র ছত্রছায়ায় গিয়ে ওঠেন অজিত। নিজে শপথ নেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। কিন্তু সেবার মাত্র ২৪ ঘণ্টাই স্থায়ী হয়েছিল সেই সরকার। ফের ঘরের ছেলে হয়ে NCP-তে ফিরতে হয় অজিতকে। কিন্তু এ বার গোটা NCP-কেই কার্যত ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়েছেন অজিত। ঠিক যেমনটা করেছিলেন একনাথ, শিবসেনা (সাবেক) থেকে ৪০ জন বিদ্রোহী বিধায়ককে নিয়ে অসমে অসমে BJP-র নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে উঠেছিলেন। তার পর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া এবং সর্বোপরি অজিতকে জোট সরকারে টানা। তবে একনাথের চেয়ে এখানে ফড়নবীস এবং BJP-র ভূমিকা ঢের গুরুত্বপূর্ণ। মহারাষ্ট্রের মোট লোকসভা আসনের সংখ্যা ৪৮। তাই আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই NCP-তে BJP থাবা বসাল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ শুধু অজিত বা তাঁর জনা কয়েক অনুগামী নন, এযাবৎ শরদের ঘনিষ্ঠ বেল পরিচিত ছগন ভুজবলও একনাথ সরকারে শপথ নিয়েছেন। অজিতের শপথ গ্রহণে উরস্থিত ছিলেন প্রফুল্ল পাটিলও, যাঁকে অতি সম্প্রতিই NCP-র কার্যনির্বাহী সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। (Lok Sabha Elections 2023)


আরও পড়ুন: Maharashtra Politics: মহারাষ্ট্রে ফের মহানাটক, NCP থেকে BJP-র ছত্রছায়ায় অজিত, শুরুতেই পেয়ে গেলেন উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ


কোটি কোটি টাকার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অজিতকে নিয়ে টানাপোড়েন যদিও আজকের নয়। ২০১৯ সালে মহা আঘাডি জোট সরকার গড়ার দাবি জানানোর আগেও NCP-র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে BJP-র সঙ্গে হাত মেলান অজিত। ফড়নবীস মুখ্যমন্ত্রী এবং নিজে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিয়ে ফেলেন। সে যাত্রায় শরদ ভান ঠেকালেও, তার পর থেকেই NCP-তে ক্রমশ অজিতের জায়গা নড়বড়ে হয়ে উঠছিল। উদ্ধবের সরকার পড়ে যাওয়ার পর থেকেই তাই অজিতকে নিয়ে লাগাতার গুঞ্জন সামনে আসছিল। ততে শেষ পেরেক পুঁতে দেয় সুপ্রিয়া সুলের হাতে NCP-র রাশ ওঠা। সম্প্রতি শরদ-কন্যা তথা সাংসদ সুপ্রিয়া NCP-র সর্বভারতীয় কার্যনির্বাহী সভানেত্রী নিযুক্ত হন। তাতেই প্রমাদ গুনতে শুরু করে দিয়েছিলেন অনেকে। কারণ অতি সম্প্রতিই দিল্লিতে BJP নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে ডাক পড়ে একনাথের। তার পর ফড়নবীসও জানান যে মহারাষ্ট্রে মন্ত্রিসভায়  প্রসার ঘটতে চলেছে। রবিবার সকাল থেকে ঘটনাক্রম যেভাবে এগোয়, তাতেই দুইয়ে দুইয়ে চার করে নেন সকলে।  


যদিও গোড়ার দিকে অজিতকে জোট সরকারের অংশ করতে ঘোর আপত্তি ছিল একনাথের। এমনকি জোট সরকার ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও তিনি দিয়েছেন বলে খবর সামনে আসে। কিন্তু এদিন অজিত শপথ নেওয়ার পর তাঁকে স্বাগতই জানান একনাথ। বলেন, "এখন আমাদের একজন মুখ্যমন্ত্রী, দু'জন উপমুখ্যমন্ত্রী। ডাবল ইঞ্জিন সরকার এখন ট্রিপল ইঞ্জিন সরকার হল। মহরাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য অজিত পওয়ার এবং তাঁর অনুগামী নেতাদের স্বাগত জানাই। ওঁর অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য সহায়ক হবে।" একনাথের এই সুর নরম হওয়ার নেপথ্যেও দিল্লিতে BJP নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি উঠছে। লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই অজিতকে সরকারের অংশ করে নেওয়ায় তাঁকে রাজি করানো হয় বলে খবর। তাতেই নাকি আপসে আসতে রাজি হন একনাথ। 


এখনও পর্যন্ত যা খবর মিলছে, সেই অনুযায়ী, NCP-র ৫৩ জন বিধায়কের মধ্যে অজিতকে সমর্থন করছেন ৪৩ জন। নিয়ম অনুযায়ী, ৩৬-এর বেশি বিধায়কের সমর্থন থাকলেই দলবিরোধী আইনের ফাঁসে পড়তে হবে না অজিতকে। তবে সংবিধানের দশম তফসিল অনুযায়ী, বিদ্রোহী বিধায়কদের ডিসকোয়ালিফাই করতে আবেদন জানাতে পারে NCP. তবে একনাথের সুরে গলা মিলিয়ে অজিতের দাবি, আসল NCP এখন তাঁর কাছেই। ফলে এর পর সরাসরি নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারেন তিনি। সে ক্ষেত্রে শিবসেনা (সাবেক)-র মতো NCP-র প্রতীকীচিহ্ন নিয়েও দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। তার আগে পর্যন্ত ডিসকোয়ালিইফাই থাকতে পারেন অজিত অনুগামী বিধায়কেরা।