কলকাতা: প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থীকে পরাজিত করলে, এবারে আলিপুরদুয়ারে টিকিট পাননি জন বার্লা। তাঁর পরিবর্তে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সেখানে মাদারিহাটের বিধায়ক তথা আলিপুর দুয়ারে দলের জেলা সভাপতি মনোজ টিগ্গাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি (Lok Sabha Elections 2024)। সেই মতো নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মনোজ, যেখানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব তুলে ধরেছেন তিনি। পাশাপাশি, নিজের বিরুদ্ধে থাকা অপরাধমূলক মামলার রেকর্ডও তুলে ধরেছেন। (Manoj Tigga)
নির্বাচন কমিশনে মনোজ যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী, ২০২২-’২৩ সালে তাঁর আয় ছিল ৫ লক্ষ ৩৩ লক্ষ ১৮০ টাকা। ২০২১-’২২ সালে আয় ছিল ৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯৬০, ২০২০-’২১ সালে ৫ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫০০, এবং ২০১৯-’২০ সালে আয় ছিল ৬ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪৬৪ টাকা। স্ত্রী পমি টিগ্গার রোজগারের উল্লেখ করেননি মনোজ। পেশায় নিজেকে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক এবং স্ত্রীকে অঙ্গনওয়াড়ির হেল্পার বলে জানিয়েছেন। স্কুলের বেতন এবং বিধায়ক হিসেবে প্রাপ্ত টাকাকেও আয়ের উৎস বলে জানিয়েছেন মনোজ। স্ত্রীর আয়ের উৎস অঙ্গনওয়াড়ির হেল্পার হিসেবে পাওয়া বেতন থেকে। (Manoj Tigga Affidavit)
হলফনামায় মনোজ আরও জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁর হাতে ৭৫ হাজার টাকা নগদ রয়েছে। ফিক্সড ডিপোজিট-সহ কোথায় কত টাকা সঞ্চয় রয়েছে, তার হিসেব দিয়ে মনোজ জানিয়েছেন, কলকাতা হাইকোর্টের SBI শাখার অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১১ হাজার ৩৯২ টাকা। বীরপাড়ার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে ২৬ হাজার ৩২ টাকা, বীরপাড়ার উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখায় ৫০৬ টাকা, খৈরিবাড়ির ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের শাখায় ২৬ হাজার ২১৭ টাকা, আলিপুরদুয়ার পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের শাখায় ২৯ হাজার ৩৩৫ টাকা এবং বীরপাড়ার SBI ব্যাঙ্কের আরও একটি অ্যাকাউন্টে ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে তাঁর।
মনোজের স্ত্রী পমির হাতে নগদ রয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বীরপাড়া SBI ব্যাঙ্কে তাঁর নামে ১৭ হাজার ৬১১ টাকা জমা রয়েছে। মেয়ে মানালি টিগ্গার নামে বীরপাড়া UBI ব্যাঙ্কে ১০০০ টাকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মনোজ। মনোজের নিজের জীবন বিমা রয়েছে চারটি। একটি ৫ লক্ষ টাকার, বাকি তিনটি ৭৫ হাজার টাকা করে। স্ত্রী পমির নামে বিমা রয়েছে ৫ লক্ষ টাকার। মেয়ে মানালির নামেও ৫ লক্ষ টাকার বিমা রয়েছে।
২০১৮ সালে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মোটর সাইকেল কেনেন মনোজ। মহিন্দ্রা স্করপিও গাড়ি কেনেন ২০২২ সালে, যার দাম পড়ে ১৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৪৯০ টাকা।
মনোজের নিজের ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের সোনার গহনা রয়েছে। স্ত্রী পমির সোনার গহনা রয়েছে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের। মেয়ে মানালির সোনার গহনা রয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকার।
সবমিলিয়ে মনোজের একার মোট অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ২৭ লক্ষ ৬২ হাজার ৪১২ টাকা। স্ত্রী পমির মোট ৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৬১১ টাকা মূল্যের সম্পত্তি রয়েছে। মেয়ে মানালির মোট সম্পত্তি ৬ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার।
মনোজ বা তাঁর পরিবারের কোনও কৃষিজমি নেই। তবে বীরপাড়া হলদিবাড়ি লাইনে একটি খাস জমি রয়েছে তাঁর নামে, যার মোট আয়তন ৩৬০০ স্কোয়্যার ফুট, যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৬ লক্ষ টাকা। তাঁর মোট স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৬ লক্ষ টাকা বলে জানিয়েছেন মনোজ।
আলিপুরদুয়ার সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ১১৩ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ নিয়েছেন মনোজ। উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ নিয়েছেন ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ২২৫ টাকার। স্করপিও গাড়ি কিনতে ৮ লজ্ঞ ৫৫ হাজার ৩৬০ টাকা ঋণ নেন। সব মিলিয়ে ১৬ লক্ষ ২ হাজার ৬৯৮ টাকা ঋণ রয়েছে মনোজের নামে।
মনোজ জানিয়েছেন, তাঁর নামে ছ’টি অপরাধ মামলা রয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি কর্মীকে নিগ্রহ, দাঙ্গায় উস্কানি, অস্ত্র রাখা, সরকারি নির্দেশ অমান্য, শান্তি ও শৃঙ্খলা নষ্ট, বেআইনি জমায়েত, অপরাধমূলক প্ররোচনা, ইচ্ছাকৃত ভাবে ক্ষতিসাধন, দেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় প্রতীক এবং সংবিধানের অবমাননা ধারায় মামলা রয়েছে মনোজের বিরুদ্ধে।
মনোজকে আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী করা নিয়ে উত্তরবঙ্গ বিজেপি-তে মতান্তর রয়েছে। গত বার ওই কেন্দ্রে বিপুল ব্য়বধানে তৃণমূলের প্রার্থীকে পরাজিত করেন বার্লা। তাঁর জেতা কেন্দ্রে মনোজকে প্রার্থী করায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তবে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বার্লা মনোজের হয়ে প্রচারে রাজি হয়েছেন বলে খবর।
আরও পড়ুন: Kaoustav Bagchi: বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচীর বাড়িতে চুরি। ABP Ananda Live