কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনে এখনও সপ্তম দফায় ভোটগ্রহণ বাকি। সেই আবহেই কন্যাকুমারীতে ধ্যান করতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল থেকেই মোদির ধ্যানে বসার খবর শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে। সেই নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। শনিবার শেষ দফায় ভোটগ্রহণ বাকি এখনও, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধিও জারি রয়েছে। সেই আবহে মোদির ধ্যানের সম্প্রদারে বিধিভঙ্গ হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। পাশাপাশি, ধ্যানের ভান করে আসলে মোদি দেশবাসীর নজর কাড়তে চাইছেন বলেও অভিযোগ উঠছে। (Narendra Modi Meditation)


গোটা দেশ ঘুরে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে পৌঁছেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। মূল ভূখণ্ড থেকে কিছুটা দূরে, শিলার উপর বসে ধ্যান করেছিলেন, যা পরবর্তীতে 'বিবেকানন্দ রক' নাম পায়। সেখানেই ‘ধ্যানমণ্ডপমে’ এবার ধ্যানে বসলেন মোদি। নির্বাচন চলাকালীন এর আগেও ধ্যানে বসেছেন তিনি। ২০১৪ সালে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের প্রতাপগড় দুর্গে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফল বেরনোর আগে কেদারনাথে ধ্যানে বসেন। (Lok Sabha Elections 2024)


এবার মোদি ধ্যানে বসলেন দক্ষিণে। আর সেই নিয়েই  রাজনৈতিক তরজা। প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানের ছবি যাতে সম্প্রচারিত না হয়, এই দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। সপ্তম দফায় ভোট রয়েছে মোদির কেন্দ্র বারণসীতেও, তার আগে,  ধ্যানে বসা নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।


মোদির বিরুদ্ধে তাঁরা কমিশনে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। তাঁর কথায়, "নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। ৪ জুন থেকে চিরকালের জন্য ধ্যান করার সুযোগ পাবেন উনি।"


বৃহস্পতিবার শেষ লগ্নের প্রচারে যাদবপুর থেকে মোদিকে কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, "প্রতি বারই ভোটের আগে কোথাও না কোথাও গিয়ে বসে পড়েন, আর ৪৮ ঘণ্টা ধরে পাবলিসিটি খান। অথচ ৪৮ ঘণ্টা সব প্রচার বন্ধ থাকাই দস্তুর, যা আজ সন্ধে ৬টা থেকে পরশুদিন ভোট চলা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আপনি ধ্যান করবেন, করুন না গিয়ে। কেউ তো বারণ করেনি! কিন্তু ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে কেন?"


পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "এই ধ্যানে বসাটা নিশ্চুপ প্রচার। ভেটের সময় ধ্যান করতে ইচ্ছে হয় ওঁর। এর আগের বার কেদারনাথ গিয়েছিলেন। ভোটের সময় ভগবানকে মনে পড়ে। দেখছেন, রামমন্দির দিয়ে কাজ হচ্ছে না, বাজার খেল না। এখন তাই বিবেকানন্দ রকে ধ্যান করতে যাচ্ছেন। ধ্যান না ভান, আমরা জানি না। ভোট শেষ হয়ে গেলেও, ফলাফরে দিন পর্যন্ত যাতে মোদির ছবি মানুষের কাছে জ্বলজ্বল করে, এটা সেই চেষ্টা।"


রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব বলেন, "মোদি ধ্যান করতে যাননি। সিনেমার শ্যুটিং করতে গিয়েছেন। মার্কেটিং করছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, কাউকে না জানিয়েই ধ্যান করতে হয়।"


বিজেপি যদিও বিরোধীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বক্তব্য, "উনি ধ্যান করছেন। সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী যা-ই করুন না কেন, বিরোধীদের আপত্তি জানায়।" পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "ধ্যান করা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ধরনের নোংরামি শুরু করেছেন, এটা ভাবা যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ইদের নমাজ পড়তে যান, আমরা তো ওই ধরনের কথা বলি না!" সব মিলিয়ে, ভোটের মধ্যে মোদির ধ্যান নিয়ে তুঙ্গে তরজা।