পার্থপ্রতিম ঘোষ ও সন্দীপ সরকার, তমলুক: তৃণমূলের দুর্নীতি নির্মূল না করা পর্যন্ত কেউ বিশ্রাম নেবেন না। তমলুক সাংগঠনিক জেলার নেতাদের বৈঠকে নির্দেশ দিলেন অমিত শাহ। সূত্রের খবর, বিজেপির পোলিং এজেন্টদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই যে দলের এত বিক্ষোভ, সেখানে কাকে প্রশিক্ষণ দেবে? পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল।


প্রার্থী নিয়ে কোনও ক্ষোভ বরদাস্ত করবে না দল। সূত্রের খবর, ভোটের মুখে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে পূর্ব মেদিনীপুরের নেতাদের এমনই নির্দেশ দিলেন অমিত শাহ।


বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই, দিকে দিকে আছড়ে পড়েছে দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভ। কলকাতা থেকে কুলতলি, সিঙ্গুর থেকে জয়নগর, প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভের জেরে কোথাও পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন কর্মীরা। কোথাও তৃণমূল থেকে আসা নেতাকে প্রার্থী করায় পোস্টার ব্যানার নিয়ে দেখানো হয়েছে বিক্ষোভ। এমনকী, ক্ষোভের আগুন পৌঁছেছে হেস্টিংসের পার্টি অফিসেও। প্রার্থীপদ নিয়ে ক্ষোভের এই খবর পৌঁছেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কানেও। এই প্রেক্ষাপটে এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় তমলুক সাংঠনিক জেলার প্রায় ১২০ জন নেতা কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।


সূত্রের খবর, রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে অমিত শাহ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ বরদাস্ত করবে না দল। ভোটে যাঁর উপর যে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, পাখির চোখ করে সেই সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে। সম্প্রতি একের পর এক সভা থেকে কর্মীদের ইভিএম পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তিনি বলেছেন, ‘এখন থেকেই ইভিএমের দোষ দিচ্ছেন।’


সূত্রের খবর, এই প্রেক্ষাপটে এদিনের বৈঠকে অমিত শাহর নির্দেশ, বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে। সেইসঙ্গে স্পর্শকাতর বুথের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সোশাল মিডিয়ায় আরও বেশি করে দলের প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।


অমিত শাহ ট্যুইট করে বলেছেন, ‘মেচেদায় জেলা ও মণ্ডলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলাম। আমি তাঁদের কাছে আবেদন করেছি, বাংলার মাটি থেকে তৃণমূলের তোলাবাজি, মাফিয়ারাজ এবং দুর্নীতি নির্মুল না করা পর্যন্ত কেউ বিশ্রাম নেবেন না।’


বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেছেন, ‘আমরা কী করেছি, কী করা উচিত, উপদেশ দিলেন। কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না দেখলেন। অমিত শাহ বললেন, ভোট শান্তিপূর্ণ হবে। কমিশনের ব্যবস্থাপনায় তিনি সন্তুষ্ট। সেনসিটিভ বুথে সজাগ দৃষ্টি দিতে বললেন। আগে যে টাস্ক দিয়েছিলেন, তার মূল্যায়ন করলেন। এছাড়াও ভোটাররা যাতে নিজে ভোট দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।’


প্রায় এক ঘণ্টার উপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর বেরিয়ে যান অমিত শাহ।


যদিও এসব করে কোনও লাভ হবে না, বলছে তৃণমূল। বিদ্যুৎমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘কাদের ট্রেনিং দেবেন? যারা নরেন্দ্র মোদির ফ্লেক্স পোড়ায়, পার্টি অফিস ভাঙে, তাদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার মানসিকতা আছে? এক একটা প্রার্থী ঘোষণা হচ্ছে আর ক্ষোভে ফেটে পড়ছে, এরকম কোনও দিন দেখিনি।’


বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মোট ৯টি বিধানসভা কেন্দ্র পড়ছে। তার মধ্যে নন্দীগ্রাম ছাড়াও রয়েছে হলদিয়া, মহিষাদল, তমলুক, পাঁশকুড়া পূর্ব ও পাঁশকুড়া পশ্চিম, ময়না, নন্দকুমার ও চণ্ডীপুর।


২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফল অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে এই ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে শুধুমাত্র পাঁশকুড়া পশ্চিমে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। বাকি সবকটিতে এগিয়ে তৃণমূল। ২৭ মার্চ ও পয়লা এপ্রিল প্রথম দুই দফায় ভোট হবে পূর্ব মেদিনীপুরে। ঘাসফুল না পদ্ম, শেষমেশ কোন ফুল ফুটবে জেলায়? জানা যাবে ২ মে।