কলকাতা: ভোটের আগেই রক্তাক্ত বাংলা, মনোনয়নপর্বে রাজ্যে ৪ জন খুন, কমিশনকে রিপোর্ট দিল পুলিশ । সূত্রের খবর, নিহত ৪ জন কোন এলাকার বাসিন্দা, উল্লেখ নেই পুলিশের রিপোর্টে। অবশেষে খুনের কথা মানল পুলিশ!
নির্বাচন প্রক্রিয়া কি চলছে? নির্বাচন কমিশনার কি আছেন? পঞ্চায়েত ভোটের নামে এসব কী হচ্ছে জানি না! ভাঙড়ের মনোনয়ন সংক্রান্ত মামলায়, এ দিন এই মন্তব্য় করলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। কাল ফের এই মামলার শুনানি হবে।
মনোনয়ন পর্বে জায়গায় জায়গায় বোমা, গুলি! কী করছিল পুলিশ? তারা কি এসব ঘটনা স্বরাষ্ট্র দফতরকে জানিয়েছে? স্বরাষ্ট্র দফতর অন্তত জানুক, রাজ্যের বোমা শিল্প কোথায় কেমন চলছে। মনোনয়ন-সন্ত্রাস নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের উদ্দেশে কড়া মন্তব্য় করে কলকাতা হাইকোর্ট। এ নিয়ে রাজ্য় সরকারের কাছে হলফনামাও তলব করেন বিচারপতি মান্থা।
একের পর এক মৃত্য়ু, মুড়ি মুড়কির মতো বোমা, গুলি, পরপর গাড়িতে আগুন, লাঠি-বাঁশ হাতে দুর্বৃত্তদের দাপাদাপি ভাঙড় থেকে ক্য়ানিং। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে রাজ্য়ের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা গেছে এই ভয়ঙ্কর হিংসার ছবি। তাহলে পুলিশ কী করছিল? পুলিশ কি এসব ঘটনা স্বরাষ্ট্র দফতরকে জানিয়েছে? স্বরাষ্ট্র দফতর অন্তত জানুক, রাজ্যের বোমা শিল্প কোথায় কেমন চলছে।
গত মঙ্গলবার কার্যত এই ভাষাতেই পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। মনোনয়নের শেষ দিনে, বেলাগাম সন্ত্রাসের মধ্য়ে, বিচারপতি মান্থা, নজিরবিহীন ভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কলকাতা পুলিশকে এসকর্ট দিয়ে, হাইকোর্টে হাজির বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার জন্য গন্তব্যে পাঠাতে হবে। কিন্তু তারপরও দেখা যায় লাগাতার সন্ত্রাসের ছবিটা। অভিযোগ ওঠে, পুলিশের গাড়ি থামিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা দেয় তৃণমূল।
আইনজীবী ফিরদৌস শামিম অভিযোগ করেন, ভাঙড়ের শোনপুর বাজারের কাছে পুলিশি প্রহরায় আসা ISF প্রার্থীদের ওপর হামলা চালায় তৃণমূল। যাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, সেই পুলিশকর্মীরা তখন সেখান থেকে সরে যায় বলে অভিযোগ। এরপরই শুরু হয় হামলা। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্য়ু হয় আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিনের। সেই মামলার প্রসঙ্গে এদিন বিচারপতি মান্থা বলেন, ভাঙড়, কাশিপুর, হাড়োয়া, বসিরহাট নিয়ে আদালতের নির্দেশের পরও মামলাকারীদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ।
জায়গায় জায়গায় বোমাবাজি ও গুলি চলেছে। এই ঘটনায় রাজ্য় সরকারের কাছে জবাব তলব করেছেন বিচারপতি মান্থা। ক্যানিং, মিনাখা, ভাঙড়, ন্যাজাট, জীবনতলা এলাকায় মনোনয়নের জন্য কত সংখ্য়ক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল, রাজ্য় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি, বুধ থেকে শুক্রবার, সংশ্লিষ্ট এলাকার BDO অফিস চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ তলব করেছেন বিচারপতি। ১০ দিনের মধ্যে হলফনামা আকারে জবাব চাওয়া হয়।
যদিও এত কিছুর পরেও রাজ্য পুলিশের পাশেই দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। 'এত শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন আগে কখনও হয়নি। বাংলার পুলিশ অফিসাররা যে কোনও পুলিশের থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যখন, মনোনয়ন পর্বে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার ঝড়, তখন পুলিশকে এভাবেই দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী। এ নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা।
মনোনয়নপর্ব থেকেই রক্ত ঝরছে বঙ্গে চলছে গুলি। বোমাবাজি, প্রকাশ্যে দুষ্কৃতী, একের পর এক খুন। আর তার ফলে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলছেন, রাজ্যপাল থেকে আদালত এবং বিরোধীরা। পুলিশের বিরুদ্ধে যখন ঝুরি ঝুরি অভিযোগ উঠছে, তখন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি রাজ্য় পুলিশের পাশেও দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী।