নয়াদিল্লি: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী জোটের (Oppositions Meet) প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। সেখানে একজোট হয়ে বিজেপি-কে (BJP) পরাস্ত করার শপথ নিয়েছেন সকলে। কিন্তু পটনায় আয়োজিত সেই বৈঠকে সবকিছু ঠিকঠাক এগোলেও, গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে রইল কংগ্রেস (Congress) এবং আম আদমি পার্টির- (AAP) মধ্যেকার টানাপোড়েন। দিল্লিতে আমলা নিয়োগ অর্ডিন্য়ান্সের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সমর্থন না পেলে, 'গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি' রয়েছ এমন কোনও জোটে শামিল হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে আপ। কংগ্রেস যদিও নিজের অবস্থানেই অনড়। সমর্থন, বিরোধিতা, গোটাটাই সংসদের অন্দরের বিষয়, অসাংবিধানিক কিছুকেই সমর্থন করা হবে না বলে জানিয়েছে তারা। অর্থাৎ সরাসরি আপের দাবির কাছে মাথা নোয়ায়নি। সেই নিয়ে পটনায় বিজেপি বিরোধী বৈঠক ঘিরে যখন অস্বস্তি, সেই সময় উপায় বাতলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে পরাজিত করার কৌশল নিয়ে পটনায় বিরোধীদের বৈঠক বসে। সেখানে কংগ্রেস এবং আপের মধ্যেকার সংঘাত পরিস্থিতি নজর কেড়েছে সকলের। কিন্তু দুই দলের মধ্যেকার এই দ্বন্দ্ব যাতে বৃহত্তর লক্ষ্যের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তার জন্য উপায় বাতলে দেন মমতা। কংগ্রেস এবং আপ, দুই দলকে মমতা পরামর্শ দেন, কোনও একদিন মুখোমুখি চা, বিস্কুট নিয়ে বসতে। সবকিছু ঝেড়েকেশে সেখানেই মিটিয়ে নেওয়ার। বিরোধী জোটের মঞ্চে এই ধরনের অস্বস্তি কাম্য নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন মমতা।
শুক্রবার উপোস করেছিলেন মমতা। কিছু না খেয়েই বিরোধীদের বৈঠকে যোগ দেন তিনি। কিন্তু সেখানে কংগ্রেস এবং আপ কার্যত মুখোমুখই সংঘাতে নামে। বৈঠক শেষে দিল্লিতে আমলা নিয়োগে জারি অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাতে হবেন বলে দাবি করেন দলের প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে মতবিরোধ বাধে তাঁর। খড়্গে জানিয়ে দেন, নীতিগত ভাবে অসাংবিধানিক কিছুই মেনে নেবে না তাঁর দল। কিন্তু প্রকাশ্যে সমর্থনের ঘোষণা করতে হবে বলে নিজের দাবিতে অনড় ছিলেন কেজরি। নইলে কংগ্রেস রয়েছে এমন কোনও বিরোধী জোটে যাবেন না বলেও জানিয়ে দেন। কিন্তু খড়্গে জানান, কংগ্রেসের কিছু নীতি-নিয়ম আছে। তা সম্পূর্ণ হলেই প্রকাশ্য়ে সমর্থন জানানো হবে।
সেই নিয়ে বাদানুবাদ ঘিরে পরিস্থিতি যখন তেতে উঠছে, সেই সময় মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে আসেন মমতা। মমতা জানান, কড়া করে বানানো চা আর বিস্কুটের আড্ডায় অনেক গুরুতর সমস্যার সমাধান বের করা সম্ভব হয়। তাই কংগ্রেস এবং আপ মিলে একটা দিন ঠিক করুক। চা-বিস্কুট নিয়ে মুখোমুখি বসে সব দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নিক।
এর আগে, নেতৃত্বের প্রশ্নে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ বাধে তৃণমূলেরও। একাধিক রাজ্য হাতছাড়া হতে হতে কংগ্রেস এমন জায়গায় পৌঁছেছে, সেখানে বিরোধী জোটে তাদের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করা হয় দলের তরফে। আবার বিরোধী জোট মমতার তরফে প্রস্তাব গেলেও, কংগ্রেসের তরফে তেমন সাড়া মেলেনি বলেও অভিযোগ ওঠে। তবে গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। কর্নাটকে কংগ্রেসের বিপুল জয় এবং সর্বোপরি রাহুলের 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র বিপুল সাফল্য় কংগ্রেসকে ফের বিরোধী জোটের চালকের আসনের দাবিদার করে তুলেছে।
যদিও শুক্রবার ফের আঞ্চলিক দলগুলির গুরুত্ব তুলে ধরেন মমতা। তিনি জানান, কংগ্রেসকে একটা জিনিস বুঝতে হবে, যেখানে যে দল শক্তিশালী, সেই দলকে সমর্থন জানাতে হবে কংগ্রেসকেও। মমতার দাবিতে সমর্থন জানান লালুপ্রসাদ যাদবও। তিনি জানান, যে রাজ্যে, যে দল সবচেয়ে বড়, সেই দলই সেখানে বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দেবে। কংগ্রেসকে মুক্তমনা হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। বৈঠকে কংগ্রেস সব শেষে বক্তৃতা করে। তাদের সেই সিদ্ধান্তেরও প্রশংসা করেন লালু। এর পাশাপাশি মমতার দাবিতে সমর্থন জানান কেজরিওয়াল, এমকে স্ট্যালিন, উদ্ধব ঠাকরে, অখিলেশ যাদবরাও।