কলকাতা : আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত ভোট হল না। বেলাগাম সন্ত্রাসে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর  প্রতিবাদে এবার কমিশনে প্রতীকী তালা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। তাঁর অভিযোগ, কোর্টের ভোট-নির্দেশ মানেনি কমিশন। এই মর্মে মঙ্গলবার তিনি হাইকোর্টে যাবেন বলে জানান। 


হিংসা, হানাহানি, গুলি, বোমা, মৃত্য়ু মিছিল দিয়ে শেষ হল ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোট। বিরোধীরা দাবি করছে, এটা ভোট নয়, ভোটের নামে প্রহসন। ভোটের ফলে আর যাই হোক, মানুষের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না। উল্টোদিকে, তৃণমূলের দাবি, ২-১টি ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে নিজেদের ব্য়র্থতা লুকনোর চেষ্টা করছে বিরোধীরা।


পঞ্চায়েত ভোটের দিন সন্ত্রাসে কার্যত ত্রস্ত রইল বাংলা। পরপর মৃত্যু, সংঘর্ষ, বোমাবাজি । একদিকে যখন বাংলার বুথে বুথে তুমুল অশান্তি চলছে, তখন অশান্তি মোকাবিলায় কালীঘাট পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু অধিকারী। আরও একবার ৩৫৬ ধারা জারি করার দাবি শোনা যায় বিরোধী দলনেতার মুখে। তিনি বলেন, "এই রাজ্যে মমতাকে যতদিন না প্রাক্তন করে জেলে ঢোকাতে পারছেন, ততদিন কোনও সলিউশন নেই। আর দ্বিতীয় ৩৫৬ অথবা ৩৫৫ করে নির্বাচন।"


কিন্তু, সব চেষ্টা সত্ত্বেও ভোটে বেলাগাম সন্ত্রাস হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কমিশনারকে ফোন করে 'হুমকি' দেন শুভেন্দু। সন্ধে ৬টায় কমিশনের দফতরে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। কত রক্ত চাই বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে হুঁশিয়ারি বিরোধী দলনেতার। সেই মতো কমিশনে প্রতীকী তালাও ঝোলান শুভেন্দু । 


পরে বিরোধী দলনেতা বলেন, "যেহেতু সাংবিধানিক বডি, তাই আমাদের এখানে আসতে হবে। এই নির্বাচনের আউটকাম কী এবং যে সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব এরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির। তাই আমরা সারা দিন মাঠে ময়দানে লড়াই করার পরেও, অসংখ্যা টেলিফোন, কমপ্লেন কারওরই কিছু করতে পারিনি আমরা। অসহায় অবস্থা সবার। তার মধ্যে আমরা এখানে এসে পৌঁছেছি। আমরা কতগুলো নির্দিষ্ট দাবি এখানে করেছি। আমরা মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে যাব। এই নির্বাচনে যাদের দায়িত্ব দিয়েছিল বা ভরসা রেখেছিল- এক নম্বর রাজ্য নির্বাচন কমিশন, দুই নম্বর রাজ্য সরকার, সেই আস্থা-ভরসা এঁরা ভেঙেছেন। এই কেসটার নিষ্পত্তি মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ রেখেছেন এই কারণে, তিনি এঁদের উপ ভরসা করতে পারেননি। আমরা বিজেপির তরফে দাবি জানিয়েছি, উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল, সিসি টিভি মনিটরিংয়ে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। হলফনামা দিয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব মহামান্য আদালতকে লিখিত আশ্বস্ত করেছিলেন, ৯৫ শতাংশ বুথে সিসিটিভি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে।  ৫ শতাংশ জায়গায় সিসি টিভি প্রোভাইড করা যায়নি। ওখানে ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। কোন বুথে সিসি টিভি, কোন বুথে ভিডিওগ্রাফি...এটা নির্দিষ্ট করা ছিল। আমরা দাবি করেছি, কাল দুপুরের মধ্য়ে সিসি টিভি, ভিডিওগ্রাফি যদি নন-ফাংশনিং থাকে, আর যদি সিসি টিভিতে দেখা যায় ছাপ্পা হয়েছে, বাইরের লোক ঢুকেছে, সেই নির্বাচন কেন্দ্রগুলিতে নির্বাচন বাতিল করে আগামী পরশু দিন বা দরকার হলে গণনার দিন পিছিয়ে মঙ্গলবার নির্বাচন করতে হবে। সেখানে এক সেকশন করে সিএপিএফ রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত আমরা বলেছিল, যেখানে সিসি টিভি এবং ভিডিওগ্রাফিতে দেখা গেছে ইলেকশন অফিসাররা যুক্ত, যেমন ডায়মন্ড হারবারে একাধিক বুথে হয়েছে। গতকালই ছাপ মারা হয়েছে। সেই প্রিজাইডিং অফিসার অথবা পোলিং অফিসারকে এফআইআর করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। যদি কেউ দুষ্কর্ম করে থাকে, তাঁদের উইটনেস করতে হবে অথবা এফআইআর করতে হবে। তৃতীয় হচ্ছে, বিজেপি প্রার্থী ভোট শুরুর আগে ঢুকেছেন, পোলিং এজেন্ট দিয়েছেন, কিন্তু যখন ব্যালট বক্স সিল হচ্ছে তখন বিজেপি প্রার্থী বা তাঁর পোলিং এজেন্ট সিলিংয়ের সময় নেই, ধরে নিতে হবে তাঁদের এক-দুঘণ্টা পরে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। বা, ভয় দেখিয়ে বের করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও নির্বাচন বাতিল করতে হবে।"