ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, অনির্বাণ বিশ্বাস এবং গৌতম মণ্ডল, কলকাতা: তেইশের পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের ষোলোকলা পূর্ণ। কোথাও ভোট দিতে না পেরে কাঁদলেন ভোটার। কোথাও অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করাতে না পেরে কাঁদলেন ভোটকর্মীরা। অসহায় হয়ে চোখের জল ফেলল পুলিশও।
ভোট সন্ত্রাসের শিকার হয়ে কেঁদে ভাসালেন চোপড়ার প্রিসাইডিং অফিসার মনোজ মজুমদার। তিনি বলেন, 'মনে হয় যে চাকরিটা ছেড়ে দিলেই ভাল হয়। অন্য কোনও কাজ করলে পরে ভাল হত। ভোটের ডিউটি তো আর হত না।'
ভোটার কাঁদছেন। কাঁদছেন প্রিসাইডিং অফিসার। পুলিশকর্মী বলছেন...পারছি না, আমাকে বাঁচান। তেইশের ভোটে যেন সন্ত্রাসের ষোলোকলা পূর্ণ। বিরোধীরা বলছে, গণতন্ত্রের উৎসব নয়, প্রহসন দেখল বঙ্গবাসী। প্রিসাইডিং অফিসার মনোজ মজুমদার বলেন, 'ভোট আধঘণ্টা হয়েছে, তারপরে হঠাৎ করে বুথের মধ্য়ে প্রায় দরজা ভেঙে ঢুকল সব। সব ঢুকে ব্য়ালট পেপার বলছে, ব্যালট পেপার দিয়ে দিতে বলছে হাতে। মারপিঠ শুরু করেছে তখন, তখন একদম দাঙ্গার মতো অবস্থা শুরু হয়ে গেছে, মারপিঠ শুরু করেছে, গায়ে লাথি, ঘুষি, এরকম শুরু করেছে।'
ভোট দিতে না পারার জন্য কান্নায় ভাঙলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের এই ভোটার। তিনি বলেন, 'আছে স্যর, আমাদের ভোট দেওয়ার অধিকার কিন্তু, আমাদের দিতে দিচ্ছে না। কালকে আমি একটু এসেছি, আমাকে ঘিরে ধরে মারছে... তৃণমূলের লোক। কাঁদছি স্যর, আমাদের গণতন্ত্রের দেশ, আমাদের কোনও অধিকার নেই এই দেশে।'
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আবার বাঁচার জন্য কাকুতিমিনতি করতে দেখা গেল রক্তাক্ত পুলিশকর্মী। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভাইরাল এই ছবি ডায়মন্ড হারবার ১ নম্বর ব্লকের নেতড়া পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বুথের।আক্রান্ত পুলিশকর্মী বলেন, 'অনেকে সব এল। বন্দুক, বোমা ছিল। বিছানার ওপর ফেলে দিল। বলল উঠলেই মেরে দেব। উঠলেই মেরে ফেলে দেব। তারপর ওরা ভোট ফোট কী সব করে সবাই মিলে চলে গেল। আমার মাথা ফেটে গেছে। আমার মাথা ফেটে গেছে, আমাদের বাঁচান না দাদা।'
মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের কাপাসডাঙায় আবার দুপুরের আগেই ভয়ে প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ভোট কর্মীদের বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। বিজেপির রাজ্য সভাপতির কাছে অভিযোগ জানাতে দেখা গেল এক পুলিশ কর্মীকে। তিনি বলেন, খুনের নামে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। বলছে এখান থেকে আপনি সরে যান। চুপচাপ মুখ বন্ধ করে থাকুন। পুরোপুরি ছাপ্পা ভোট হবে এখানে। আর আমি বলছি ছাপ্পা ভোট করতে দেব না এখানে।'
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'মিথ্যে কথা, বাকি এত বুথে হাসছে।' অন্যদিকে, কোচবিহার দিনহাটার ঘুঘুমারি এলাকার অসহায় প্রিসাইডিং অফিসারকে ঘিরে ধরেন মহিলা তৃণমূল কর্মীরা। ভয়ে কেঁদে ফেলেন প্রিসাইডিং অফিসার।