কলকাতা:  মনোনয়ন পর্ব থেকে গণনা অবধি হিংসা-মৃত্যু পরিসংখ্যান শেষ অবধি পাওয়া খবরে,  রাজ্যে ৩৫দিনে ভোটের বলি ৪৭। যার মধ্যে আজ উত্তাল ভাঙড়। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে এই কেন্দ্র (Bhangar)। ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। কিন্তু এত কিছুর জন্য দায়ি কে ? আর এমনই এক পরিস্থিতিতে এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ভাঙড় নিয়ে একটি বিশেষ বক্তব্য রাখলেন। তিনি বললেন, 'ভাঙড়ে গন্ডগোল হয়েছে, করেছে কে ? বিরোধীদল।'


পঞ্চায়েত ভোটের অনেক আগে থেকেই একাধিকবার উত্তাল হয়েছে ভাঙড়। যার আঁচ এসে পড়েছিল কলকাতায়। গ্রেফতার করা হয়েছিল আইএসএফ বিধায়ক নওয়াজ সিদ্দিকীকে। গ্রেফাতর হবার পর তার পক্ষ নিয়ে কথাও বলতে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও। কিন্তু সেটা যদি চলতি বছরের প্রথম ছবি হয়, দ্বিতীয় ছবিটা ছিল ভিন্ন। অন্তত তেমনটাই দাবি ছিল নৌশাদের। সম্প্রতি দ্বিতীয়বার যখন অশান্তি ঘটনা ঘটেছিল, তখন খোদ নৌশাদ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও সাক্ষাৎ পাননি। পরে নাম না করে নিশানা এসেছিল মমতার বক্তব্যে। এরপর এল পঞ্চায়েত ভোট। ফলপ্রকাশে উঠল সবুজ ঝড়। এদিকে একদিকে যখন প্রার্থীদের মুখে জয়ের আবির, তখন বাংলার মায়েদের কোলে নিহত সন্তান।


এদিন মমতা বলেন, 'ভাঙড়, ডোমকলে আমাদের কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, আমরা তো জিতিনি। ৭১ হাজার বুথে ভোট হয়েছে, বড়জোর ৭টা বুথে বিক্ষিপ্ত গন্ডগোল ঘটানো হয়েছে। ভোট নষ্ট করেছে, পুকুরে ব্যালট বাক্স ফেলছে, কেন গ্রেফতার হবে না? হিংসাকে আমি সমর্থন করি না। পরিকল্পনা করে অশান্তি', বাম-বিজেপি-কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন এদিন মমতা। 


প্রসঙ্গত, মুড়ি মুড়কির মতো গুলি, পরপর মৃত্যু। ভোট ঘোষণার পর থেকে যে মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছিল, গণনার দিনও তা অব্যাহত রইল ভাঙড়ে। ভাঙড়ে হাড়হিম করা সন্ত্রাস। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল ISF কর্মী হাসান মোল্লা, ISF কর্মী রেজাউল গাজি এবং নিরীহ ভোটার রাজু মোল্লার।ভাঙড়ে পঞ্চায়েত মনোনয়নের দিন থেকেই ঝামেলা শুরু হয়। সেই মৃত্যু মিছিল এখনও বন্ধ হয়নি। গণনার শেষ পর্যায়ে এসেও গন্ডগোল। গণনার মধ্য়েও ভাঙড়ে মৃত্যু মিছিল।
 
 মঙ্গলবার ভাঙড়ের কাঠালিয়া হাইস্কুলে পঞ্চায়েত ভোটের গণনা চলছিল। ভাঙড় দুই নম্বর ব্লকে ৮১, ৮২ ও ৮৩-এই তিনটি জেলা পরিষদের আসন রয়েছে। তার মধ্যে ৮১ নম্বর আসনে জয়লাভ করেন আরাবুল ইসলামের ছেলে হাকিমুল। ৮২ নম্বর আসনে জয়ী হন ISF প্রার্থী রাইনুল হক। ৮৩ নম্বর আসনে জয়-পরাজয় নিয়েই গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়। এই আসনে তৃণমূল প্রার্থী খাদিজা বিবি সর্দার এবং ISF প্রার্থী জাহানারা বিবির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। ISF-এর অভিযোগ, তাঁদের প্রার্থী জয়লাভ করেন। কিন্তু তাঁকে জয়ের শংসাপত্র দেওয়া হয়নি। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। আর এনিয়েই দু'পক্ষের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। 


আরও পড়ুন, 'বিক্ষিপ্ত ঘটনায় কয়েকজন মারা গেছে, আমি দুঃখিত', বললেন মমতা


 অপরদিকে, বড় প্রশ্ন তুলেছেন মৃত ISF কর্মী রেজাউল গাজির দিদি,' টিএমসির লোকে গুলি করেছে। আরাবুলের লোক, আরাবুলের ছেলে গুন্ডাবাহিনী, সওকত গুন্ডাবাহিনী এনে পুলিশের ড্রেস পরে গুলি করেছে। পুলিশ ছিল। পুলিশ সঙ্গে ছিল। না হলে পুলিশের ড্রেসটা পরল কী করে? একটা গুন্ডা হয়ে পুলিশের ড্রেস পরে কী করে? ' এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাত থেকে নিখোঁজ জেলা পরিষদের ৮৩ নম্বর আসনের ISF প্রার্থী জাহানারা খাতুন, তাঁর স্বামী ও বেশ কয়েকজন কাউন্টিং এজেন্ট।