পূর্ণেন্দু সিংহ, তালডাংরা: যৌথ সংসারে দিনভর হাজার রকমের কাজ। রান্নাবান্না, গৃহকর্ম সামলে একদণ্ড বসার জো নেই। তবে দু'জন রয়েছেন বলে হাতে হাতে কাজ উতরে যায়। ঘরে ঘরে আজকাল জায়ে জায়ে মুখ দেখা দেখি না থাকলেও, তালডাংরার পদ্মাবতী পণ্ডা এবং সুপ্রিয়া পণ্ডা সেই গোত্রে পড়েন না। দুইয়ে মিলেই সংসার মাথায় করে রেখেছেন। রাজনীতির মঞ্চেও একসঙ্গে অবতীর্ণ তাঁরা। তবে দু'জন দুই দলে। তাতে গোটা গ্রামে এখন চর্চা তাঁদের নিয়েই (Panchayat Elections 2023)।
মনোনয়ন পর্ব মিটে যাওয়ায় এখন আক্ষরিক অর্থেই শিয়রে পঞ্চায়েত নির্বাচন। বাঁকুড়ার (Bankura News) তালডাংরার হাড়মাসড়া গ্রাম পঞ্চায়েতেও নির্বাচন রয়েছে। ৬৬ নং কদমা বুথকে ঘিরে চলছে চূড়ান্ত তৎপরতা। আর এই নির্বাচনেই এক বাড়ি থেকে, দুই পৃথক দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন দুই জা, পদ্মাবতী এবং সুপ্রিয়া। পদ্মাবতী বড়, সুপ্রিয়া ছোট। বিজেপি-র প্রার্থী পদ্মাবতী। পেশায় আশাকর্মী তিনি। সুপ্রিয়াকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তিনি বাড়িতে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান।
তবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন বলে পদ্মাবতী এবং সুপ্রিয়ার রোজনামচায় কোনও প্রভাব পড়েনি। ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে শুরু হয়, সেই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত, হাতে হাত রেখে সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম সারেন তাঁরা। রাজনীতির আঁচ সংসারের অন্দরে প্রবেশ করতে দেননি পদ্মাবতী এবং সুপ্রিয়া। সংসার তাঁদের জুড়ে রাখলেও, রাজনীতিতে ভিন্ন আদর্শ এবং নীতির লড়াই দু'জনের মধ্যে।
এই প্রথম বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পদ্মাবতী এবং সুপ্রিয়া। লড়াইও পরস্পরের বিরুদ্ধেই, ৬৬ নং কদমা বুথে। সংসারের কাজকর্ম সামলে প্রায় একসঙ্গেই বেরোচ্ছেন বাড়ি থেকে। কিছু দূর যাওয়ার পর শুধু আলাদা হয়ে যায় রাস্তা। একজন বিজেপি-র হয়ে প্রচারে বেরোন। অন্য জন প্রচার চালান জোড়াফুল চিহ্নকে সামনে রেখে। একই পরিবারের সদস্য হলেও, পরিবার এবং রাজবীতিকে পৃথক রাখার পক্ষে পদ্মাবতী এবং সুপ্রিয়া।
রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন বলে সাংসারিক কাজকর্ম বিসর্জন দেওয়ার প্রশ্ন নেই। ঘরঝাঁট দেওয়া, রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, সবকিছুই আগের মতো মিলেমিশে করেন। একই হাঁড়ির ভাত খেয়ে প্রচারে বেরোন বাড়ি থেকে। রাতের খাওয়াও পাশাপাশি একসঙ্গে বসেই। তার ফাঁকে চলে সাংসারিক জীবনের সুখ-দুঃখের গল্প। রাজীনীতি তাঁদের ব্যক্তিগত সমীকরণে কোনও প্রভাব ফেলেনি বলেই দাবি পদ্মনাবতী এবং সুপ্রিয়ার।
তবে পরস্পরকে ভালবাসলেও, স্নেহ, সম্মান করলেও, রাজীনীতির ময়দানে সমানে সমানে টক্কর হওয়াই কাম্য বলে মত পদ্মাবতী এবং সুপ্রিয়ার। দু'জনেই জয় নিয়ে আশাবাদী। পদ্মাবতীর মতে, মানুষ নিজের পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। প্রচারে এখনও পর্যন্ত ভাল সাড়া পাচ্ছেন তিনি। তাই জয় নিয়ে আশাবাদী তিনি।
তাঁর সমর্থনেই গ্রামের মানুষের ভোট পড়বে বলে আশাবাদী সুপ্রিয়াও। তিনি জানিয়েছেন, প্রচারে সকলেই তাঁকে জয়ী করতে চাইছেন। তাই জয়ী পাওয়া নিয়ে ১০০ শতাংশ আশাবাদী তিনি। তবে দু'জনের মধ্যে যে-ই জিতুন, যে-ই হারুন, সংসারে ফাটল ধরতে দিতে চান না পদ্মাবতী এবং সুপ্রিয়া। পরিবারের সদস্যদেরও এ নিয়ে জোর বা প্রভাবিত করবেন না বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
পদ্মাবতী এবং সুপ্রিয়া, দু'জনেই চান, সকলে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিলেই হল। কে জিতল, কে হারল, তাতে যায় আসে না। কোনও রকম অশান্তি, ঝামেলা ছাড়া, শান্তিপূর্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ভাবেই ভোটপর্ব মেটানোর ব্যাপারেও আশাবাদী দুই জা। তাঁদের মধ্যে এত মিল দেখে হতবাক গ্রামবাসীদরাও। গ্রামের বাসিন্দা আশিস পঞ্জাব জাননা, পদ্মাবতী এবং সুপ্রিয়া নজির সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হবে পরবর্তী প্রজন্ম।
যে-ই জিতুন না কেন, গোটা বিষয়টি অত্যন্ত ভাল ভাবে দেখছেন গ্রামবাসীরা। আগামী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্যে। শেষ হাসি কে হাসেন, কার অপেক্ষায় রয়েছেন গ্রামের মানুষজন।