কলকাতা: কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে কার্যতই শূন্য থেকে নতুন করে যাত্রা শুরু। তার পর দীর্ঘ উতার-চতরাই পেরিয়ে ক্ষমতা দখল। বিপুল জনাদেশে পেয়ে পর পর তিন বার বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খাতায় কলমে এখনও তৃণমূলের সুপ্রিমো তিনিই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধেই জনসংযোগের দায়িত্ব সঁপেছেন। নিজেও প্রচারে বেরোচ্ছেন মমতা। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে আইনশৃঙ্খলা, এই মুহূর্তে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়ছে তাঁর সরকার। তাই এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন সকলেই।
এই আবহে মমতা না অভিষেক, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল তৃণমূলের কার কাছে অগ্নিপরীক্ষা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভোটারদের একাংশের কাছে সেই প্রশ্নই তুলে ধরে সি-ভোটার ওপিনয়ন পোল। তাতে মমতার সামনেই অগ্নিপরীক্ষা বলে মত দিয়েছেন অধিকাংশ ভোটার। সি-ভোটার সমীক্ষা অনুযায়ী, ভওটারদের ৪৩ শতাংশ মনে করেন, এই পঞ্চায়েত নির্বাচন মমতার জন্যই অগ্নিপরীক্ষা। ২৪ শতাংশ মনে করেন অগ্নিপরীক্ষা আসলে অভিষেকের জন্য। ৩৩ শতাংশ ভোটার এ বিষয়ে মতামত জানাতে রাজি হননি।
তৃণমূলে এখনও মমতার কথাই শেষ বলে মত রাজনৈতিক মহলের। অভিষেককে দলের একাংশ ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখলেও, যাবতীয় সিদ্ধান্তের দায়িত্বে এখনও মমতাই রয়েছেন। তাই বিরোধীদের আক্রমণের মুখেও বার বার তাঁকেই পড়তে হয়। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কয়লা, গরু, সবেতেই কালীঘাটকে নিশানা করে আক্রমণে শান দিয়ে শোনা গিয়েছে বিরোধীদের। এমনকি পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনে তাঁর প্রচারে নামাকে ঘিরেও কটাক্ষ শোনা গিয়েছে বিরোধীদের মুখে। তাই এই নির্বাচন মমতার কাছে অনেক বড় পরীক্ষা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।
যাঁদের মতামত গ্রহণ করতে এই পঞ্চায়েত নির্বাচন, যাঁদের উপর সবকিছু নির্ভর করছে, সেই ভোটাররা কী ভাবছেন? তার আঁচ পেতে রাজ্য় জুড়ে সমীক্ষা চালায় আন্তর্জাতিক খ্য়াতিসম্পন্ন সংস্থা C-Voter. রাজ্যের সমস্ত জেলা পরিষদের সবক'টি কেন্দ্রে পৌঁছে ১০ হাজার ৫৪৮ জনের জনের সঙ্গে কথা বলেন সমীক্ষকরা। সমীক্ষা চালানো হয় ১৫ জুন থেকে ২৬ জুনের মধ্য়ে। এই সমীক্ষা কোনও রাজনৈতিক ভবিষ্য়দ্বাণী নয়। শুধু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভোটারদের ভাবনার আভাস পাওয়ার চেষ্টা।
কিন্তু জনমত সমীক্ষা হোক কিংবা বুথ ফেরত সমীক্ষা, কোনওটাই শেষ কথা নয়! গণতন্ত্রে শেষ কথা হল, মানুষ ব্য়ালটে বা ভোটযন্ত্রে কী রায় দিয়েছেন, সম্পূর্ণভাবে যা গোপনীয়। তাই কখনও সমীক্ষা সম্পূর্ণ রূপে সঠিক প্রমাণিত হয়, কখনও আংশিক, আবার কখনও আসল ফলাফলের ঠিক উল্টোটাও হয়। কারণ বহুক্ষেত্রেই ভয়-ভীতি কিংবা অন্য়ান্য় নানা কারণে মানুষ সমীক্ষকদের সামনে মনের কথা প্রকাশ করে না। তাই পঞ্চায়েতে ভোটের ফলাফলে আসলে কী হবে, তা জানাও যেমন এই সমীক্ষার মধ্য়ে দিয়ে সম্ভব নয়, তেমনই কাউকে প্রভাবিত করার কোনও চেষ্টাও সমীক্ষাকারী সংস্থা করে না। আর তারা যে পরিসংখ্য়ান দেয়, তা হবহু আপনাদের সামনে আমরা তুলে ধরি মাত্র। দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্য়ম হিসাবে আমাদের আসল অপেক্ষা ১১ জুলাই অবধি। সেদিনই জানা যাবে গ্রামবাংলা কার দখলে যায়।