পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: গাইডলাইনের বাইরে গিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ভোট সংক্রান্ত কাজ করানো যাবে না (Civic Volunteers)। একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। অথচ মনোনয়ন ঘিরে অশান্তির মধ্যে, বুধবার ভাঙড়ে পুলিশের খাকি উর্দি (Police Uniform) গায়ে চড়িয়ে দেখা গেল সিভিক ভলান্টিয়ারদের (Bhangar News)। এবিপি আনন্দের প্রশ্নের মুখে পড়তেই কেউ দৌড়ে পালালেন। কেউ আবার ঢুকে পড়লেন দোকানে। কিন্তু এই খাকি উর্দি তাঁরা কোথা থেকে পেলেন, তা নিয়ে কারও কাছে সদুত্তর নেই (Panchayat Elections 2023)।


চলতি বছরের মার্চ মাসে একটি মামলার রায়ে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে কোন কাজ করানো যাবে, কোন কাজ করানো যাবে না, তা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা দিয়েছিল হাইকোর্ট। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আইন শৃঙ্খলাজনিত কোনও দায়িত্বপূর্ণ কাজ সিভিক ভলান্টিয়ারদের দেওয়া যাবে না। তাঁরা শুধুমাত্র পুলিশকে সাহায্য করতে পারবেন। হাইকোর্টের নির্দেশে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে গত ২৫-এ মে এই মর্মে নির্দেশিকাও জারি করেছিল রাজ্য পুলিশ।


কিন্তু বুধবার সকাল থেকে যখন দফায় দফায় অশান্তি চলছে, কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের আকার ধারণ করেছে ভাঙড়, ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে ২নম্বর বিডিও অফিসের বাইরে ধুন্ধুমার বেধেছে, সেখানে কোনও পুলিশ কর্মীকেই দেখা গেল না। বরং ঘোরাফেরা করতে দেখা গেল পুলিশের উর্দি পরিহিত সিভিক ভলান্টিয়ারদের। 


আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: সিভিক ভলান্টিয়ারদের গায়ে পুলিশের উর্দি, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পক্ষপাতিত্ব কমিশনের, বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর


পুলিশের উর্দি পরিহিত ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাছে পৌঁছলে, এবিপি আনন্দের ক্যামেরা দেখে মুখ লুকনোর চেষ্টা করেন কেউ কেউ। উত্তর এড়িয়ে যান।  কেউ কেউ আবার জানান, ট্রাফিক ডিউটি করেন। এমনিই পুলিশের উর্দিই পরেছেন বলেও জানান। উর্দি কোথা থেকে পেলেন, জানতে চাইলে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে বলতে শোনা যায়, "বলতে পারব না। আমাদের এখানে নিজেদের...মানে অ্যালাও নেই এমবিতে। ঠিক আছে, এমনি পরেছি।"


মঙ্গলবারই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ভাঙড় ২ নম্বর ব্লক অফিস। বুধবারও দিনভর উত্তপ্ত ছিল ওই এলাকা। কিন্তু এদিন ব্লক অফিসের ভিতর কয়েকজন পুলিশকর্মীকে দেখা গেলেও, বাইরে দেখা যায়নি কাউকেই। বরং দেখা যায়, আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা।

তাৎপূর্ণভাবে, তাঁদের অনেকের পরনে ছিল না সিভিকের পোশাক। তার বদলে পুলিশ কর্মীদের খাকি উর্দি পরেছিলেন। কাঁধের ব্য়াজে লেখা ছিল WBCVF। ক্য়ামেরা দেখেই এদিক-ওদিক পালাতে শুরু করেন উর্দির আড়ালে থাকা সিভিকরা। কেউ আবার দোকানের ভিতর ঢুকে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য এমনিতে পৃথক উর্দি রয়েছে, যাতে আলাদা করে চেনা যায় তাঁদের। তা না পরে, খাকি উর্দি গায়ে চাপল কী করে, উঠছে প্রশ্ন।

এই ঘটনায় সুর চড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মনোনয়ন জমা দিয়ে না পারার অভিযোগ নিয়ে এ দিন বিকেলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে যখন ধুন্ধুমার অবস্থা, সেই সময় শুভেন্দু জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে সিভিক ভলান্টিয়ারদের পুলিশের উর্দি পরতে দেওয়া হচ্ছে। বীরভূম, বর্ধমানে হাজার হাজার উর্দি তৈরির বরাতও চলে গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে রাজ্য পুলিশ।