কলকাতা: ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের সর্বোচ্চ জেলা পরিষদের (zilla parishad) ভোটে কোন দিকে ঝুঁকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (South 24 Parganas)? আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্থা সি ভোটারের ( C Voter) জনমত সমীক্ষা (Opinion Poll) বলছে, মোট ৮৫ আসনের মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে যেতে পারে ৫৭ থেকে ৬৭-র মতো আসন। বিজেপি পেতে পারে ১৪-২০টি আসন। বাম-কংগ্রেস এবং আইএসএফ মিলে পেতে পারে ৩-৭টি আসন। 


ফিরে দেখা...
গত বার অর্থাৎ ২০১৮ সালে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে মোট আসনসংখ্যা ছিল ৮১। তার মধ্যে ৮১ টি আসনই জিতে নেয় তৃণমূল। বিজেপি, কংগ্রেস ও বামেরা খাতাই খুলতে পারেনি। তবে এই বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক এলাকায় বিপুল অশান্তির অভিযোগ শোনা গিয়েছে। ভাঙড়, ক্যানিংয়ের মতো এলাকা মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় থেকেই তেতে ওঠে। গত ১৪ জুন, ভাঙড়ে শাসকের 'অপারেশন-মনোনয়ন'-র সময় আক্রান্ত হয় এবিপি আনন্দ। ছবি তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওঠে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ। তবে সেটিই প্রথম নয়। তার ঠিক আগের দিনই একপ্রস্ত ধুন্ধুমার ঘটেছিল। পুলিশের সামনেই মুড়ি-মুড়কির মতো পডে বোমা। গুলি চলে বলেও অভিযোগ। মনোনয়নের চতুর্থ দিনে ভাঙড়জুড়ে শুধুই ভয়ের ছবি ছিল! তারই মধ্যে নবজোয়ার যাত্রা নিয়ে এলাকায় আসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন এক আইএসএফ প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হন বলেও দাবি। আহত হন একাধিক আইএসএফ কর্মী। রক্ত ঝরে পুলিশেরও। তারপরদিনও একই রকম উত্তাপ ভাঙড়জুড়ে। বস্তুত, মনোনয়নের শেষ দিনে তিন-তিনটি প্রাণহানি হয়। সেই ঘটনার ১১ দিন পর ভাঙড়বাসীর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান আরাবুল-পুত্র হাকিমুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার বামনঘাটায় প্রচার সভায় আরাবুলের উপস্থিতিতে হাতজোড় করে হাকিমুল বলেন, ভুল হয়েছে। আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে ভোট দিন।আগামী পাঁচ বছর উন্নয়নের কাজ করব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। কথা রাখতে না পারলে, পাঁচ বছর পর আর ভোট চাইতে আসব না। ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় শুরু হয় রাজনৈতিক বিতর্ক। পাশাপাশি, মনোনয়ন জমা দিতে বেরিয়ে দুষ্কৃতী হামলার আশঙ্কায় রাস্তা অবরোধ করে তৃণমূল। ক্যানিং এক নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শৈবাল লাহিড়ির নেতৃত্বে আজ মনোনয়জন জমা কর্মসূচি ছিল শাসক শিবিরের। তৃণমূলের ব্লক সভাপতির অভিযোগ, তাঁদের যাওয়ার পথে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রচুর দুষ্কৃতী জড়ো হয়েছিল। যে কোনও মুহূর্তে তৃণমূল প্রার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে তারা। এমনকি তাঁকে খুন করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। এই পরিস্থিতিতে ব্লক সভাপতির নেতৃত্বে ক্যানিং হাসপাতাল মোড় অবরোধ করে রাখেন তৃণমূলের হাজারখানেক কর্মী সমর্থক। তৃণমূলের ব্লক সভাপতির দাবি, যতক্ষণ না বাসস্ট্যান্ড এলাকা দুষ্কৃতীমুক্ত করা হবে, ততক্ষণ অবরোধ থেকে সরবেন না তাঁরা। শাসকদলের বিক্ষোভের জেরে অবরুদ্ধ ক্যানিং-বারুইপুর ও ক্যানিং-হেড়োভাঙা রোড। এছাড়া, বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের লাগাতার ধারা তো রয়েছেই।


তবে একথা মনে রাখা দরকার যে, জনমত সমীক্ষা হোক বা বুথফেরত সমীক্ষা, কোনওটিই সাধারণত নির্ভুল হয় না। গণতন্ত্রে শেষ কথা বলেন মানুষই। সমীক্ষা স্রেফ তাঁদের মনোভাবের আন্দাজ দিতে পারে। আখেরে কী হবে, তা জানা যাবে ১১ জুলাই। 


আরও পড়ুন:মনোনয়ন পর্বে হিংসার জন্য় তৃণমূলের ভাবমূর্তি কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? কী বলছে C Voter-র সমীক্ষা?