কলকাতা: ভোট-পরবর্তী অশান্তি ঘিরে রাজ্য-রাজনীতিতে চড়ছে রাজৈনিক বাকযুদ্ধের পারদ।    পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি দল। এ ব্যাপারে আদালতেও মামলায় দায়ের হয়েছে। এরইমধ্যে আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বার্তা দিতে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ট্যুইটে উঠে এল ভোট-পরবর্তী অশান্তির প্রসঙ্গ। 
রবীন্দ্র জয়ন্তীতে ট্যুইটারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেও মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা রাজ্যপালের। জগদীপ ধনকড় লেখেন, জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা, মহান দার্শনিক এবং নোবেলজয়ী গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য। এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করা সাধারণ মানুষের উপর হিংসা কবিগুরুর ভাবনার পরিপন্থী। আসুন তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করি।


উল্লেখ্য, ভোটের ফল বেরোনোর পরই রাজনৈতিক অশান্তির অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিল বিজেপি। রাজ্যজুড়ে তাদের কর্মীদের হামলা চলছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেও ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়েছিল। 
রাজ্যে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণের দিনও ভোট-পরবর্তী অশান্তিপ  ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রীও অশান্তির ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে অশান্তির ঘটনা নিয়ে রাজ্যের রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। 


এই প্রেক্ষাপটে অশান্তির জন্য নাম না করে গতকাল বিজেপিকে দায়ী করে রাজ্য বিধানসভায় কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুঝিয়ে দিয়েছেন অশান্তি রুখতে রং না দেখে কঠোর পদক্ষেপ নেবে তাঁর সরকার।তিনি বলেন, কেউ যাতে না শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে, গোলমাল যেই পাকাতে আসুক, কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে, সে আমরা হলেও আমারাও। 


ভোট পরবর্তী অশান্তি নিয়ে গতকাল বিজেপির মহিলা মোর্চার এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। 
এই পরিস্থিতি নিয়ে যখন রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে, তখন ভোট পরবর্তী অশান্তির রিপোর্ট নিয়ে ফের বাধে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত।
শনিবার সন্ধেয় রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজভবনে তলব করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। ট্যুইটে রাজ্যপাল অভিযোগ করেন, রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা ও বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট দিতে ব্যর্থ অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এইচ এস দ্বিবেদী। তাই মুখ্যসচিবকে তলব করা হয়েছে। এমনকি, ৩মে রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, সেই রিপোর্টও তিনি পাঠাননি।
রাজ্য সরকারের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে রাজ্যপাল আরও লেখেন, সরকার নিজের সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকে সরে আসছে। তা কোনওভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না।যখন রাজ্যে ভোটের পরে এত অশান্তির ঘটনা ঘটছে, তখন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে কোনও তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এটা মানা যায় না!
শনিবার সন্ধেয় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি। ৯০ মিনিট কথা হয়। কিন্তু, কোনও রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় ফের রাজ্যপাল ট্যুইটে অভিযোগ করেন, দু’জনেই এলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রিপোর্ট আনলেন না। তাঁদের দ্রুত রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছি। এই ধরনের কাজকর্ম অত্যন্ত বিরক্তিকর! আশা করি, এবার অন্তত যথাযথ জবাব আসবে।