নয়াদিল্লি: শেয়ার বাজারের ভরাডুবি নিয়ে এবার নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহকে কাঠগড়ায় তুললেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi)। তাঁর অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের ফল কী হতে চলেছে, আগে থেকেই সেই তথ্য ছিল মোদি-শাহের কাছে। তা সত্ত্বেও দেশের ৫ কোটি খুচরো বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছেন তাঁরা। রাহুলের দাবি, মোদি-শাহ ইচ্ছাকৃত ভাবেই দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করেন, যাতে কিছু লোকের মুনাফা হয়। (Share Market Manipulation Allegations)
বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে মোদি-শাহ শেয়ার বাজারে কারসাজি করেছেন বলে অভিযোগ করেন রাহুল। কোন পথে খুচরো বিনিয়োগকারীদের বলি দেওয়া হয়েছে, তার ক্রোনোলজিও তুলে ধরেন রাহুল। যা হল-
- ১৩ মে, ২০২৪- ৪ জুনের আগে স্টক কিনতে বলেন শাহ। অর্থাৎ দেশের ৫ কোটি খুচরো বিনিয়োগকারীদের স্টক কিনে রাখার বার্তা দেন তিনি।
- ১৯ মে, ২০২৪-প্রথম বার মোদি শেয়ার বাজার নিয়ে মন্তব্য করেন। জানান, ৪ জুন শেয়ার বাজারের সূচক রেকর্ড উচ্চতায় উঠবে। এর পর ২৮ মে পর্যন্ত বার বার একই দাবি করেন মোদি।
- ৩ জুন, ২০২৪- লোকসভা নির্বাচনের বুথফেরত সমীক্ষা সামনে আসে। বিপুল সমর্থন পেয়ে মোদি ক্ষমতায় আসছে বলে দাবি করা হয় সমীক্ষার রিপোর্টে। এর পরই শেয়ার বাজারের সূচক রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছয়।
- ৪ জুন, ২০২৪- ভোটের ফলাফল প্রকাশ হতেই মুখ থুবড়ে পড়ে শেয়ার বাজার। একধাক্কায় বাজার থেকে মুছে যায় ৩১ লক্ষ কোটি টাকা।
রাহুলের দাবি, নির্বাচনের ফলাফল কী হতে চলেছে, আগে থেকেই তা জানতেন বিজেপি-র শীর্ষস্তরের নেতারা। তাঁদের সাংগঠনিক রিপোর্টে ২২০ আসনের কথা বলা হয়েছিল। পাশাপাশি, গোপন রিপোর্টও হাতে পৌঁছেছিল। অর্থাৎ ৪০০ পার যে হচ্ছে না, তা জানতেন সকলেই। এর পরও দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্টক কিনতে বলা হল কেন, কার ফায়দার জন্য মোদি-শাহ এমন করলেন, প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল।
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: ফলঘোষণার আগে শেয়ার বাজারে কারসাজি মোদি-শাহের? ৩১ লক্ষ কোটির ক্ষতিতে তদন্ত চাইলেন রাহুল
শেয়ার বাজারে কারচুপির অভিযোগে ইতিমধ্যেই শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI. সেই আদানির চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টক কিনতে উৎসাহিত করা হল কেন, এর মধ্যে কী সংযোগ রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন রাহুল। তাঁর অভিযোগ, যে সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষা গোটা দেশে ছড়ায়, তাদের একটি টিমই বিজেপি-র প্রকৃত আসন সংখ্যা কত হতে পারে, তা আগেই দলকে জানিয়েছিল। তাই মোদি-শাহের পাশাপাশি, ওই বুথফেরত সমীক্ষা চালানো সংস্থার ভূমিকাও খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন রাহুল।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল জানান, নির্বাচনী ফোলঘোষণার একদিন আগে, ৩ জুন হঠাৎ করে শেয়ারবাজারে কিছু সন্দেহজনক লেনদেন চোখে পড়ে। আচমকাই কিছু সন্দেহভাজন বিদেশি বিনিয়োগকারী লেনদেন শুরু করেন। আবার শেয়ার বাজার মুখ থুবড়ে পড়ার আগে, সময় মতো টাকা তুলেও নেন তাঁরা। তাহলে কি আগে থেকে খবর ছিল তাঁদের কাছে, প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল। মোদি-শাহ, সন্দেহভাজন বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং বুথফেরত সমীক্ষাকারী সংস্থার বিরুদ্ধে যৌথ সংসদীয় তদন্তের দাবি তুলেছেন রাহুল।
দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে লাভের গুড় পাইয়ে দিতে সাধারণ মানুষের এত টাকার ক্ষতি করান বলে দাবি করেন রাহুল। তাঁর কথায়, "এটা অনেক বড় দুর্নীতি। প্রধানমন্ত্রী,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে নির্বাচনের সব ডেটা থাকে। তাঁরাই স্টক কিনতে বলছেন। আগে কখনও এমন ঘটেনি। আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী শেয়ার বাজার নিয়ে কথা বলেননি। বাজার উঠবে বলেছিলেন। অথচ প্রকৃত তথ্য ছিল ওঁর কাছে। জানতেন কী হতে চলেছে।"
এর আগেও আদানিদের বিরুদ্ধে শেয়ার বাজারে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। এবারেও কি তাহলে আদানিদের সুবিধে করে দেওয়ার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন রাহুল? কংগ্রেস নেতা জানিয়েছেন, শুধু আদানির কথা বলছেন না তিনি। এটা অনেক বড় চক্র। দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সব ডুবে গিয়েছে যেখানে, কিছু মুষ্টিমেয় মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফা করেছে। কারা এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন, তা সকলের সামনে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন রাহুল। এ নিয়ে বিজেপি-র তরফে যদিও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি এখনও পর্যন্ত।