কলকাতা: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলাকে যে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। রেখা পাত্র থেকে অমৃতা রায় (Amrita Roy), দলের মহিলা প্রার্থীদের সঙ্গে একে একে ফোনে কথা বলছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। কিন্তু সেই কথোপকথন নিয়েই বিতর্ক দানা বাধতে শুরু করেছে। কৃষ্ণনগরের বিজেপি-র প্রার্থী তথা রাজ পরিবারের সদস্যা অমৃতার সঙ্গে কথোপকথনে মোদি রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে (Krishnachandra Roy), রাজা রামমোহন রায় (Raja Ram Mohan Roy) ভেবে ভুল করেছেন বলে এবার অভিযোগ তুললেন কৃষ্ণনগরেরই তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। (Mahua Moitra)


মঙ্গলবার রাতে ফোনে অমৃতার সঙ্গে কথা বলেন মোদি। সংবাদমাধ্যমেও ওই কথোপকথনের অডিও ক্লিপ প্রকাশিত হয়। সেখানে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভাবমূর্তির প্রসঙ্গ ওঠে। বাংলার তৎকালীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে গিয়ে কৃষ্ণচন্দ্র ইংরেজদের হাত ধরেছিলেন বলে আজও তাঁদের 'গদ্দার' কটাক্ষ শুনতে হয় বলে মোদিকে জানান অমৃতা। কৃষ্ণচন্দ্র ইংরেজদের হাত না ধরলে বাংলায় সনাতন ধর্ম শেষ হয়ে যেত, তাঁরা হিন্দু থাকতে পারতেন না বলেও দাবি করেন অমৃতা। 


অমৃতার এই অনুযোগ শুনে মোদি জানান, ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়েও রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কথা পড়েছেন তিনি। মোদি বলেন, "ছোটবেলায় আমরাও কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সমাজ সংস্কার নীতি, বাংলার উন্নয়নের মডেলের কথা পড়েছি। যাঁরা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করেন, তাঁরা এসব ভুলভাল অভিযোগ করবেন। ৩০০, ২০০ বছর আগের ঘটনা খুঁজে বের করবেন, বদনাম করতে চাইবেন ওঁরা। এখনকার পাপ লুকোতে এসব খুঁজে বেড়ান। অথচ ভগবান রামের কথা উঠলে তখন প্রমাণ চান। অথচ কৃষ্ণচন্দ্রের সময়কার কথা বের করে আনেন। এদের দ্বিচারিতা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না।"



আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: শোকজের পরও বেলাগাম দিলীপ, নির্বাচন কমিশনকে 'মেসোমশাই' সম্বোধন!


মোদির এই মন্তব্য আলাদা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন মহুয়া। সমাজ সংস্কারক বলতে রামমোহনের সঙ্গে মোদি আসলে কৃষ্ণচন্দ্রকে গুলিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি করেন তিনি। মহুয়া লেখেন, 'কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সমাজ সংস্কারমূলক কাজের কথা পড়েছি বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজা রামমোহনের সঙ্গে কৃষ্ণচন্দ্রকে গুলিয়ে ফেলেই কি কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থীকে একথা বললেন মোদি? খুব খারাপ হোমওয়র্ক স্যর'।


এ নিয়ে বিজেপি-র তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি এখনও পর্যন্ত। তবে অমৃতা এবং মোদির ওই কথোপথন ঘিরে বিতর্ক তৈরি হতে সময় লাগেনি। কৃষ্ণচন্দ্র কেন ইংরেজদের হাত ধরেছিলেন, তার যে যুক্তি দিয়েছিলেন, সেই নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে তৃণমূল। কৃষ্ণচন্দ্র যে সিরাজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, বাংলার বুকে পরাধীনতার অন্ধকার ডেকে এনেছিলেন, তা অমৃতা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে তারা। অমৃতাকে প্রার্থী করে বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করছে বলেও অভিযোগ করেছে তৃণমূল।