কলকাতা: পাঁচ বছর আগে যে রাজ্যে রমরমিয়ে উড়েছিল পদ্ম-পতাকা। সেখানেই কার্যত হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি (BJP)। কর্নাটকে (Karnataka) বাজিমাত করল কংগ্রেস (Congress)। দক্ষিণের একমাত্র রাজ্য যেখানে বিজেপির শাসন ছিল, সেটাও কেড়ে নিল কংগ্রেস। আর মাত্র কয়েক মাস আগে উত্তরের হিমাচল প্রদেশেও একই ছবি দেখা গিয়েছিল। সেখানেও বিজেপির হাত থেকে মসনদ কেড়ে নিয়েছিল কংগ্রেস। এর মধ্যে রাহুল গাঁধীর ভারত জোড়ো যাত্রাও হয়ে গিয়েছে। সারা ভারতেই তার সাড়াও মিলেছে। কর্নাটকের ফলপ্রকাশের পরে একটা প্রশ্ন বারবার উঠছে। সব ঠিক থাকলে বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। সেখানেও কি কোনও প্রভাব পড়বে এই ফলাফলের? আর এই প্রশ্নেই কার্যত দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক মহল। 


আগামী বছর, ২০২৪ সালে ভারতে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে ২০২৩ সালে একাধিক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে।  বেশ কিছু হয়ে গিয়েছে, বেশ কিছু বাকি রয়েছে। এর মধ্যে ত্রিপুরা, মেঘালয়ে, নাগাল্যান্ডে হয়ে গিয়েছে। উত্তর পূর্ব- খালি হাতে ফেরায়নি বিজেপিকে। গুজরাতেও বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু হিমাচল প্রদেশ ও কর্নাটকে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। এর পড়ে রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ ও তেলঙ্গানায় ভোট রয়েছে। যার মধ্যে একমাত্র মধ্যপ্রদেশে রয়েছে বিজেপি সরকার। বাকি দুটির মধ্যে ছত্তীসগড় ও রাজস্থান কংগ্রেসের দখলে। তেলঙ্গনায় শাসনে টিআরএস, যা এখনও বিজেপি জোটের বাইরে। ভোট রয়েছে মিজোরামেও। এই বিধানসভা নির্বাচনগুলোয় কী ফলাফল হবে তার উপর অনেকটাই হয়তো নির্ভর করবে আগামী লোকসভার ফলাফল।


কর্নাটকে বিজেপির পরাজয়ে কংগ্রেস শিবিরে যেমন উৎসাহের ছবি। তেমনই বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিও যেন নতুন করে অক্সিজেন পেয়েছে। পাশাপাশি হিমাচল প্রদেশ ও কর্নাটকে বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করে একার শক্তি কংগ্রেস জিতে যাওয়ায়, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোটের চালকের আসনে কংগ্রেস বসবে কিনা, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।


লোকসভায় কতটা প্রভাব?
হিমাচল, কর্ণাটকের বিধানসভা ভোটের ফলের প্রভাব কি লোকসভা ভোটে প়ড়বে? এই জল্পনা শুধু রাজনৈতিক মহলে সীমাবদ্ধ নেই। কর্ণাটকের ফলের পর বিশ্বব্য়াঙ্কের মুখ্য় অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু অবধি ট্য়ুইট করেছেন, আজ কর্ণাটক যা ভাবছে, কাল তা ভাববে ভারত। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, কংগ্রেসের মরা গাঙে সম্প্রতি প্রাণ ঢেলেছে রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) ভারত জোড়ো যাত্রা। ১৪৬ দিন ধরে ১২টা রাজ্য় এবং ২টো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্য়ে দিয়ে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেছেন রাহুল গাঁধী। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই কর্মসূচি যে কংগ্রেসের সংগঠনে অক্সিজেন জুগিয়েছে, তা পরিসংখ্য়ানেই স্পষ্ট। রাহুল গাঁধীর ভারত জোড়ো যাত্রার সময় থেকে এখনও অবধি তিনটি রাজ্য়ে ভোট হয়েছে। তার মধ্য়ে দুটি রাজ্য় বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। একার জোরে বিজেপিকে হারিয়েছে তারা। ভারত জোড়ো যাত্রার সময় গুজরাত এবং হিমাচলপ্রদেশে ভোট হয়েছিল। তার মধ্য়ে গুজরাতে হারলেও বিজেপির থেকে হিমাচলপ্রদেশ ছিনিয়ে নেয় তারা। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, 'বিজেপিকে সারা দেশে রুখতে গেলে কংগ্রেস দরকার। কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। ঐক্য়বদ্ধ ভারতবর্ষের প্রতীক। বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস অপরিহার্য।'


রয়েছে ভিন্নমত:
পর্যবেক্ষকদের অনেকে এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, আগেও রাজ্য়স্তরে বিধানসভা ভোটে বিজেপি ধাক্কা খেয়েছে কিন্তু, তার প্রভাব লোকসভা ভোটে খুব একটা পড়েনি। ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, পাঞ্জাবের মতো রাজ্য়ের বিধানসভা ভোটে বিজেপি হেরেছিল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ঠিক আগে মধ্য়প্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে বিজেপিকে হারিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু, তারপরেও ২০১৯-এ মোদি ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। সেই পরিসংখ্য়ানে ভর করেই বিজেপি দাবি করছে, কর্ণাটকে হারলেও লোকসভা ভোট নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। 


রাজনৈতিক তরজা:
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, 'আগে পিক টাইম ছিল। তখন ৩০০ পেয়েছিল। এখন মনে হয় না ১০০ পেরোবে।' প্রায় একই সুরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'এই ফলের সুদরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। লোকসভা ভোটে প্রভাব পড়বে।' যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, 'এ সব গল্প অনেক শুনেছি। ২০১৪ সালেও শুনেছি, ২০১৯ সালেও শুনেছি। বিজেপি আরও বাড়বে। মোদির নেতৃত্বে ভারত এগোচ্ছে, মোদির থেকে ভারত মুখ ফেরাবে না।'


আরও পড়ুন: খুব গরম! এসি ছাড়াই ঠান্ডা থাকবে ঘর, কী করতে হবে?