আশাবুল হোসেন ও পার্থপ্রতিম ঘোষ: 'দলীয় কর্মীরা আক্রান্ত। ভোট বলে চেপে যাচ্ছি। নাহলে দেখে নিতাম, কে কত বড় নেতা! কার কত ক্ষমতা।' নন্দীগ্রামে প্রেস্টিজ ফাইটের আগে ফের একবার বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল নেত্রী। 'মুখ্যমন্ত্রী হয়েও, নিজের কেন্দ্র ছেড়ে কেন নন্দীগ্রামে গেলেন?' পাল্টা আক্রমণে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাও।


গোঘাটের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করেছি। দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি। কেউটে সাপ পুষেছি, গোখরো সাপ পুষেছি।’’ অন্যদিকে ধনেখালির সভায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নাড্ডার মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী হয়েও কেন নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে যেতে হল? শুভেন্দু তো নিজের কেন্দ্র ছেড়ে আপনার কেন্দ্রে আসেননি?’’


ধনেখালির সভায় মমতার তুলনায় শুভেন্দু বড় নেতা বলে উল্লেখ করেন নাড্ডা। বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, শুভেন্দুকে আটকাতে আপনাকেই নন্দীগ্রাম যেতে হল, তাহলে বড় নেতা কে? মুখ্যমন্ত্রী যদি কারও আসনে লড়তে যান, তাহলে বড় নেতা কে হল? আপনার আসনে যদি মুখ্যমন্ত্রীকে লড়তে আসতে হয়, তাহলে বড় নেতা কে?’’


 



 


ধনেখালির সভায় জেপি নাড্ডা এদিন আরও বলেন, “প্রথম দফায় প্রায় ৭৯ শতাংশ ভোট হয়েছে। বাংলার মতো রাজ্যে যেখানে মমতা দিদি আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিলেন, তৃণমূল আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিল, সেখানে ৭৯ শতাংশ ভোট মানুষ দিয়েছে। যার অর্থ বাংলার মানুষ দৃঢ় সংকল্প যে তৃণমূল হারছেই।’’


নাড্ডা বলেন, এই এলাকা পাটশিল্পের জায়গা ছিল, শিল্প ছিল। মমতার জমানায় অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ১০ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। এবার তৃণমূলের খাতা বন্ধ হবে। 


আক্রান্ত বিজেপি কর্মীর বৃদ্ধ মায়ের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে এনে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন নাড্ডা।  বলেন, মমতা যখন ক্ষমতায় আসেন তখন মা-মাটি-মানুষের কথা বলেন। অথচ, শোভা মজুমদারের সঙ্গে যা হল তা নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করেনি। মায়ের কী অবস্থা বাংলায়! আইনের শাসন নেই বাংলায়। 


তিনি যোগ করেন, বিজেপির ১৩০ কর্মী খুন হয়েছে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়েছে, তার বদলে কাটমানি, তোলবাজি, তোষণে মদত দিয়েছে তৃণমূল। মহিলাদের উপর অত্যাচারে দেশে শীর্ষে বাংলা, কামদুনি-পার্ক স্ট্রিট, জলপাইগুড়ির ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, মমতার জমানায় বাংলার মা-বোনেদের কী অবস্থা দেখুন।


 



 


বিজেপি সভাপতির দাবি, মোদিজি করোনার সময় চাল-গম বিনামূল্যে পাঠালেন, আর সেসব চুরি করেছে তৃণমূল। তিনি বলেন, ভোট দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলা গড়তে হবে, এই ভোট সোনার বাংলা গড়ার নির্বাচন। দুর্নীতি-তোলাবাজ-স্বৈরাচারমুক্ত সরকার গড়তে হবে। 


তিনি যোগ করেন, কৃষক সুরক্ষার জন্য মোদি সরকার ভাবলেও বঞ্চিত করছেন মমতা। নাড্ডা বলেন, বাংলার উন্নয়নের জন্য কৃষি, রেল, জাতীয় সড়কের উন্নয়নে বরাদ্দ বেড়েছে। আমরা ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি চালু হবে, বকেয়া ১৮ হাজার টাকা পাবেন বাংলার কৃষকরা। 


৩৭ বছরের ভোট রাজনীতির কেরিয়ারে, সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে নেমে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। অন্যদিকে, পার্টির প্রতিষ্ঠাতার জন্মভূমিতে, আজ অবধি শাসনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত, বিজেপির নির্বাচনী মেশিনারিও ফুল ফোটাতে ঝাঁপিয়েছে। 
সিঙ্গুরের সভা থেকে মমতা বলেন, চাকরি দেব, কর্মসংস্থান হবে, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী, স্বাস্থ্যসাথী সব পাবেন, শুধু অনুরোধ করব কেউ বিজেপিকে ভোট দেবেন না। পাল্টা গোঘাটের সভায় নাড্ডা বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়েছেন। খেলা শেষ, কমলে ছাপ, তৃণমূল সাফ।’’