কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদিনের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।  গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ রাত ৮টা পর্যন্ত বহাল থাকছে নিষেধাজ্ঞা।   এর প্রতিবাদে আজ বেলা ১২টায়  কলকাতায় গাঁধী মূর্চির নীচে ধর্নায় বসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।   এরপর নিষেধাজ্ঞার মেয়দ শেষ হলে রাত ৮টা ৫ নাগাদ  বারাসাতে জনসভা রয়েছে তাঁরা।  রাত ৯টায় জনসভা করবেন  বিধাননগরে।  


বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার দুপুর পৌনে ১টায় কালনায় রোড শো রয়েছে।  দুপুর পৌনে ৩টেয় খণ্ডঘোষে রোড শো।   বিকেল সাড়ে চারটেয় হরিণঘাটায় রোড শো রয়েছে নাড্ডার।  সন্ধে সাড়ে ৭টায় রাজারহাটে জনসভা।  


কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর দার্জিলিঙের লেবং-এ জনসভা রয়েছে।   দুপুর পৌনে ১টায়  নাগরাকাটায় জনসভা রয়েছে তাঁর।  দুপুর ২টো ২০-তে  ইসলামপুরে রোড শো রয়েছে শাহর।  বিকেল ৫টায় সল্টলেকে জনসভা। সন্ধে ৭টা ২০ বরানগরে জনসভা।   রাত ৮টায় দমদমে জনসভা রয়েছে অমিত শাহর।


উল্লেখ্য,  সোমবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট প্রচারের ওপর ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করল নির্বাচন কমিশন। এই নিষেধাজ্ঞার জেরে সোমবার রাত ৮ টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত প্রচার করতে পারবেন না তিনি।  


শনিবার রাজ্যে পঞ্চম দফার ভোট। তার আগেই এই কড়া পদক্ষেপ নিল নির্বাচন কমিশন।পাল্টা সংঘাতের পথে হেঁটে কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধরণায় বসছেন তৃণমূল নেত্রী।


সম্প্রতি তারকেশ্বরের সভা থেকে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ না হওয়ার আবেদন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এরপরই তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ করে বিজেপি।


তৃতীয় দফার ভোটের দিন, রাজ্যে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে নরেন্দ্র মোদি বলেন, তিনি হিন্দুদের নিয়ে কোনও কথা বললে হয়ত, তাঁকে নির্বাচন কমিশন নোটিস দিয়ে দিত....!


এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিস পাঠিয়ে নির্বাচন কমিশন জানায়, তিনি নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছেন।পাল্টা তৃণমূল নেত্রী বলেন, নোটিস পাঠিয়ে তাঁকে দমানো যাবে না।


এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সঙ্গে সঙ্গে ফের তাঁকে বিধি ভঙ্গের অভিযোগে আরেকটি নোটিস পাঠায় নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে একদল ভোট দিন, আরেক দল ঘিরে রাখুন।


 নির্বাচন কমিশনের জোড়া নোটিসের জবাব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।দাবি করেন, তিনি আইন কিংবা বিধি ভঙ্গকারী কোনও মন্তব্য করেননি।কিন্তু, নির্বাচন কমিশন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জবাবে বিন্দুমাত্র সন্তুষ্ট হয়নি।এরপরই ১২ এপ্রিল অর্থাৎ সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন।


 ৫ পাতার এই চিঠির দ্বিতীয় পাতায় অত্যন্ত কড়া সুরে কমিশন লিখেছে,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জবাব দেওয়ার সময় নির্দিষ্টভাবে তাঁর বক্তব্যের একটি অংশ বেছে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যের বাকি গুরুত্বপূর্ণ অংশটি এড়িয়ে গেছেন।


এরপরই একইভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করা প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব নিয়েও, কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।এই অংশে কিছুটা ব্যাঙ্গের সুরে তারা লিখেছে,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্ষেত্রেও, জবাব দেওয়ার সময় তাঁর মূল বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো এড়িয়ে গেছেন! সম্ভবত ইচ্ছে করেই ভুলে গেছেন! 


এরপরই পাঁচ পাতার চিঠির ১০ নম্বর প্যারাগ্রাফে কড়া ভাষায় নির্বাচন কমিশন বলেছে...মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বটে, তিনি অত্যন্ত প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেছেন, যার জেরে আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে এবং যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরাসরি ব্যাঘ্যাত ঘটিয়েছে...


তাই কমিশন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে কোনও ধরনের নির্বাচনী প্রচারের ওপর সোমবার রাত আটটা থেকে মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করছে।


তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কোনওভাবেই মচকাতে রাজি নন, তা অত্যন্ত স্পষ্ট করে দিয়ে ট্যুইট করে জানিয়েছেন,নির্বাচন কমিশনের এই অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মঙ্গলবার বেলা ১২টায় কলকাতায় গাঁধী মূর্তির নীচে ধর্নায় বসব।