রুমা পাল, কলকাতা: নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির জবাব দিল নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মক ড্রিল শুরু হয় ভোর সাড়ে ৫টায়, সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। চিঠিতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের দাবি, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোন কারচুপি হয়নি। এই সিদ্ধান্তকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। 


কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোটদানে বাধা বা অভদ্র আচরণের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। বয়ালকাণ্ডে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের জবাব দিল নির্বাচন কমিশন। এমনকি নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা অভিযোগ তথ্যগত ভুল এবং ভিত্তিহীন। 


তৃণমূলের পোলিং এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে যান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে স্কুলে বুথ, তাঁর বারান্দায় প্রায় দু’ঘণ্টা হুইলচেয়ারে বসেছিলেন তিনি। সেইসময় বুথের বাইরে তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের বিক্ষোভ চরমে পৌঁছয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের বাধা দিয়েছে বলে, বুথে বসে হাতে লেখা চিঠিতে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানান মমতা। রবিবার তার জবাবে সময় ধরে ধরে বুথের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। তৃণমূল নেত্রীকে লেখা চিঠিতে নির্বাচন কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে 


ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনও কারচুপি হয়নি।কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ভোটারদের বুথে ঢুকতে বাধা দেননি।কমিশন জানিয়েছে, নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া সত্বেও তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট বুথে আসতে চাননি। সেক্ষেত্রে, নির্বাচন কমিশন তো জোর করতে পারে না। বৃহস্পতিবার বুথের ভিতরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এবং বাইরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিকে ‘সাইড শো’ বলে উল্লেখ করে চিঠিতে কমিশন বলেছে, এই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে এমনকি পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারত। কিন্তু দক্ষ হাতে তা সামাল দেওয়া গিয়েছে।


নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী জানান, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত অবিলম্বে নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া ৷’’ অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল গোষ জানান, ‘‘মমতার ন্যায্য অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট পদক্ষেপ, বয়ালে কী হয়েছে সবাই জানে।’’


অন্যদিকে এদিনও কমিশনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খানাকুলের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপির কথা শুনে এজেন্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলালো ইসি...বিজেপি নেতাদের ফোন বেরোল তো...রোজ অমিত শাহ পুলিশ অফিসার চেঞ্জ করছে। আলিপুরদুয়ার-চন্দননগর বদল হল কেন? দেখতে খারাপ? এরা চলতে পারে না? এরা বাংলার গর্ব।’’


কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়ে এদিনও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে এসে হুমকি দিচ্ছে...রাতে টহল দাও, মহিলারাও সজাগ থাকুন...গদ্দাররা পুলিশের পোশাক কিনে এনে হুমকি দেওয়াচ্ছে...কার কত পাখনা গজিয়েছে দেখি একবার...পুলিশ অফিসার বদল করিয়ে ভোট কব্জা করতে চাইছে। বাংলার পুলিশ নয়, গুজরাতের পুলিশ...।’’ পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন, ‘‘ফোর্স নিরপেক্ষ ভোট করাচ্ছে আমাদের কাছে একটা ভিডিও আছে যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুন্ডারা সিআরপিএফের ওপর আক্রমণ করছে। আমরা ইসিকে জানাচ্ছি।’’


সব মিলিয়ে নন্দীগ্রামে ভোট মিটলেও, এখনও অব্যাহত রাজনৈতিক তরজা।