কলকাতা: বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আগেই আলাদা করে নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়। গতকাল ভোটারদের জন্য আবেদনপত্র প্রকাশ করেছে সংযুক্ত মোর্চাও। তাতে বেকারদের কর্মসংস্থান, গণতন্ত্র রক্ষা সহ একাধিক বিকল্প কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে।


সংযুক্ত মোর্চার ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে এবং বিরোধীদের মতপ্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত করা হবে। ১ বছরে সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে সব শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে। রাজ্যে মোদি সরকারের কৃষি আইন কার্যকর হবে না। ১০০ দিনের কাজে শ্রমদিবস বাড়িয়ে ১৫০ দিন করা হবে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রতি মাসে ২১ হাজার করা হবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খোলা হবে আলাদা দফতর। খাদ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হবে। ছোট ও মাঝারি শিল্পে গুরুত্ব আরোপ করা হবে এবং বৃহৎ শিল্প তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’


আবেদনপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিমান বসু, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আইএসএফ নেতা সৌমিত্র দস্তিদার সহ শরিক নেতারা। সংযুক্ত মোর্চার এই বিকল্প কর্মসূচির ওপর মানুষ কতটা ভরসা রাখল উত্তর মিলবে ২ মে।


বামফ্রন্টের ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ক্ষমতায় এলে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়া হবে। বামেদের ইস্তেহারে আরও বলা হয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ২১ হাজার টাকা। ১০০ দিনের বদলে ১৫০ দিনের কাজ ও মজুরির পরিমাণ বাড়ানো হবে।


শিল্পে গুরুত্ব দেওয়া হলেও সিঙ্গুর নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করা হয়নি বামেদের ইস্তেহারে। বরং জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বলা হয়েছে, শিল্পের জন্য সহমতের ভিত্তিতে জমি অধিগ্রহণ করা হবে।


সিএএ, এনআরসি চালুর বিরোধিতা করে ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এক বছরের মধ্যে সরকারি ও আধা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমস্ত শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে। বেআইনি চিটফান্ডে গচ্ছিত টাকা ফেরত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


গত বছর দিল্লিতে বিধানসভা ভোটে জিতে আসার পর, ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুত বিনামূল্যে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গত বছরের বাজেটে এরাজ্যের অর্থমন্ত্রীও হাসির আলো নামে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেন। যেখানে অত্যন্ত গরিব পরিবারকে নিখরচায় তিন মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হয়। এবার বিধানসভা ভোটের আগে বামেদের ইস্তেহারে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভোটে কতটা প্রভাব ফেলবে? তার উত্তর দেবে সময়।


কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহারের প্রচ্ছদে বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের ছবি। ইস্তেহারে ৮ অঙ্গীকার কংগ্রেসের। বাম ও কংগ্রেসের দাবি, গালভরা প্রতিশ্রুতি নয়, তাদের ইস্তেহারে রাজ্যবাসীকে সাবলম্বী করার জন্য কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্পায়ন, বিদ্যুত্‍ মাসুল, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করার ওপরে।


বাংলার মোট ভোটারের ৪৯ শতাংশই মহিলা। সাম্প্রতিককালে ভিনরাজ্যের একাধিক নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি করে ভোট দিতে বেরোচ্ছেন। আর এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূল-বিজেপির ইস্তেহারে মহিলাদের জন্য প্রতিশ্রুতির বন্যা। উল্টোদিকে বাম-কংগ্রেসের দাবি, তারা গালভরা প্রতিশ্রুতি নয়, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সবাইকে সাবলম্বী করতে চায়। আর তার জন্য দরকার কর্মসংস্থান। তাই বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের ইস্তেহারে জোর দেওয়া হয়েছে কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন, বিদ্যুৎ মাসুল, পরিযায়ী শ্রমিকের মতো দীর্ঘমেয়াদি বিষয়গুলিতে।


জোট ক্ষমতায় এলে শিল্পের জন্য সহমতের ভিত্তিতে জমি অধিগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বামেরা। কর্মসংস্থানের মূল লক্ষ্যে ছোট ও মাঝারি শিল্পের ওপর গুরুত্ব বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, শিক্ষক-সহ অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষা নিয়মিতভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা দফতর তৈরি হবে। বেআইনি চিটফান্ডে প্রতারিতদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হবে।


কংগ্রেসের ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, জোট ক্ষমতায় এলে কর্মহীন পরিযায়ী শ্রমিকরা যতদিন না নতুন কাজ পাচ্ছেন, ততদিন তাঁদের পরিবারপিছু মাসে ৫ হাজার টাকা করে অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা দেওয়া হবে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া ২০ শতাংশ পরিবারকে প্রতি মাসে ৫ হাজার ৭০০ টাকা করে সাহায্য করা হবে। গোটা রাজ্যে ৭টি উন্নয়ন অঞ্চল তৈরি করে কারখানা তৈরি করা হবে।


শেষপর্যন্ত কার ইস্তেহারে মানুষ ভরসা রাখল, উত্তর মিলবে ২ মে।