কলকাতা: লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে বিধানসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াল তৃণমূল। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদি-হাওয়ায় চুরমার হয়ে গিয়েছিল জঙ্গলমহলে জোড়াফুলের দূর্গ। দু বছর পর ফের জঙ্গলমহলে রমারমা ঘাসফুলের। রাজ্যে জঙ্গলমহলের চার জেলার ৪০ আসনের মধ্যে ২৬ আসন জিতে পদ্ম শিবিরকে পর্যুদস্ত করেছে তৃণমূল। দু বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে এই অঞ্চলের ৪০ টি বিধানসভার মধ্যে ৩১ টিতেই এগিয়েছিল বিজেপি।


জঙ্গলমহল এলাকায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম-এই চার জেলায় মোট বিধানসভা আসনের সংখ্যা ৪০। পুরুলিয়ায় ৯, বাঁকুড়ার ১২, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫ ও ছয় বছর আগে পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে তৈরি ঝাড়গ্রাম জেলায় ৪ টি বিধানসভা আসন রয়েছে। এই আসনগুলির অধিকাংশই আদিবাসী অধ্যুষিত। এই জঙ্গলমহল এলাকা তৃণমূলের গড় বলেই পরিচিত ছিল। লোকসভা নির্বাচনে এই অঞ্চলে পাঁচটির মধ্যে চারটিতেই জিতেছিল বিজেপি। সবমিলিয়ে তারা এই অঞ্চলের ৪০ টির মধ্যে ৩১ টিতে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি।


কিন্তু এবারের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল এলাকায় ঘুরে দাঁড়িয়ে জমি শক্ত করল ঘাসফুল শিবির। ৪০ টির মধ্যে ২৫ টিতে জিতল তৃণমূল। এরমধ্যে ঝাড়গ্রামের চারটি আসনেই জিতেছে শাসক দল। পুরুলিয়ায় ৯ টির মধ্যে ৩ টিতে জিতেছে তারা। পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৫-র মধ্যে ১৪ টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বাঁকুড়ায় ১২ টির মধ্যে জিতেছে ৪ আসনে। এই অঞ্চলে বিজেপি জিতেছে ১৫ আসনে। অর্থাৎ যত সংখ্যক আসনে লোকসভা ভোটে এগিয়েছিল, তার মধ্যে অর্ধেক জিততে পেরেছে গেরুয়া শিবির। তবে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছে বিজেপি। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে কার্যত ধরাশায়ী হতে হয়েছে তাদের।


জঙ্গলমহলে তৃণমূলের এই ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ বিশ্লেষণও শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের মতে, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল সরাসরি পেয়েছেন মানুষ।আর এই প্রকল্পগুলির হাত ধরেই জঙ্গলমহলের মানুষের আস্থা বহাল রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি। দুয়ারে সরকার, কন্যাশ্রী বা স্বাস্থ্যসাথী-র মতো প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচীর সুবিধা পেয়েছেন সাধারণ মানুষ।


তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলার এক নেতা বলেছেন, জঙ্গলমহলে ২০১৯-র লোকসভা ভোটের তুলনায় ১০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪। এই অঞ্চলে ফের আমাদের জমি শক্ত হয়েছে। আসলে লোকসভা ভোটের সময় বিজেপির মিথ্যে প্রতিশ্রুতি মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল। এখন মানুষ বুঝতে পেরেছেন যে, তৃণমূল সার্বিক উন্নয়নের কাজ করতে পারে। বিষ্ণুপুরে ফল ভালো হলে দলের আসন আরও বাড়ত।