KKR vs RCB Match Rescheduled: দলে আতঙ্ক, রোজ করোনা পরীক্ষা হবে কেকেআর প্লেয়ারদের, সকলেই নিভৃতবাসে

কেকেআর মাত্র তিনদিন আগে দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে খেলেছে এবং সেই ম্যাচেও খেলেছিলেন বরুণ। দিল্লি আবার রবিবার পঞ্জাব কিংসের সঙ্গে খেলেছে। এভাবেই সংক্রমণ আরও বড় বৃত্তে ছড়িয়ে পড়বে না তো! কেকেআর-আরসিবি ম্যাচ স্থগিত হয়ে গেলেও আপাতত সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।

Continues below advertisement

কলকাতা: আইপিএলের ওপর কালো মেঘ! টুর্নামেন্টের মাঝপথে আচমকাই করোনার হানা। এবার কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে। যার জেরে স্থগিত হয়ে গেল সোমবারের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর বনাম কেকেআরের ম্যাচ।

Continues below advertisement

আমদাবাদে নাইট শিবিরে ফোন করে জানা গেল, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে দুই ক্রিকেটার বরুণ চক্রবর্তী ও সন্দীপ ওয়ারিয়রের। এঁদের মধ্যে বরুণ শুধু প্রথম একাদশের নিয়মিত সদস্যই নন, দলের স্পিন বিভাগকে কার্যত নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সুনীল নারাইন সব ম্যাচে খেলেননি। কিন্তু বরুণ প্রয়োজনের সময় উইকেট তুলছেন বলে টিম ম্যানেজমেন্ট এখন বল হাতে তাঁর ওপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা করছে। এমনকী, ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওভারগুলো তাঁর হাতেই বল তুলে দিচ্ছেন কেকেআর অধিনায়ক অইন মর্গ্যান। সন্দীপ ওয়ারিয়র এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত কোনও ম্যাচ খেলেননি। তাই বরুণের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে ভীষণই উদ্বেগ নাইট শিবিরে।

পাশাপাশি জানা গেল, টুর্নামেন্ট চলাকালীন দুই প্লেয়ার করোনা আক্রান্ত হওয়ায় গোটা শিবিরে রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ। নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে নাইট শিবিরের একজন আমদাবাদ থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে বললেন, 'আপাতত টিম ম্যানেজমেন্টের নির্দেশে ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের প্রত্যেকে হোটেলে যে যার রুমে আইসোলেশনে চলে গিয়েছি। ঘর থেকে এমনকী করিডরে বেরতেও নিষেধ করা হয়েছে সকলকে। দলের ক্রিকেটার, কোচ এবং সকল সদস্যের আগামী এক সপ্তাহ প্রত্যেক দিন করোনা পরীক্ষা করা হবে। এর আগে পর্যন্ত প্রত্যেক দু'দিন অন্তর সকলের করোনা পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু দুই ক্রিকেটারের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।'

অনেকেই বিস্মিত হচ্ছেন, কী করে জৈব সুরক্ষা বলয়ের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত হতে পারেন, সেটা ভেবে। বলা হচ্ছে, আইপিএল খেলা ক্রিকেটারদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর নতুন নয়। চেন্নাই সুপার কিংসের রুতুরাজ গায়কোয়াড়-সহ সাপোর্ট স্টাফদের কয়েকজন গত আইপিএলের আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবারও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ওপেনার দেবদত্ত পড়িক্কল, দিল্লি ক্যাপিটালসের বাঁহাতি স্পিনার-অলরাউন্ডার অক্ষর পটেল করোনায় আক্রান্ত হন। খোদ কলকাতা নাইট রাইডার্সের ওপেনার নীতিশ রানারও করোনা হয়েছিল। কিন্তু এঁরা প্রত্যেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট শুরুর একেবারে মুখে। সকলেই সদ্য শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। অনেকের মতে, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ভীষণ আশ্চর্যজনক কিছু ছিল না। কিন্তু কেকেআরের দুই ক্রিকেটারের টুর্নামেন্টের মাঝপথে করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আছড়ে পড়েছে আইপিএলের আকাশে।

কেকেআর দলের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বায়ো বাবলের প্রাচীর ভেদ করে যেভাবে করোনা ধাক্কা দিয়েছে, তাতে ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফ সকলেই আতঙ্কিত। দলের একজন বললেন, 'জৈব সুরক্ষা বলয়ের ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আছি সকলে। হোটেলে প্রত্যেক দলের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ফ্লোর। সেখানে কারও প্রবেশ নিষেধ। এমনকী, হোটেলে রয়েছেন এমন কোনও সাধারণ মানুষও সেই প্রাচীর ভেদ করে প্রিয় ক্রিকেটারের সঙ্গে সেলফি তুলতে বা অটোগ্রাফ নিতে পারবেন না। প্রত্যেক ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফের কাছে রয়েছে জিপিএস চিপ। কেউ বায়ো বাবলের নিয়মকানুন ভাঙলেই সেই চিপ মারফত সমস্ত তথ্য পৌঁছে যাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ ও বোর্ডের কাছে। কেকেআরের ক্ষেত্রে কেউই সেই নিয়ম ভাঙেননি। তাহলে কী করে আক্রান্ত হলেন!'

নাইট শিবিরের কারও কারও সন্দেহ, হোটেল বা মাঠ, ড্রেসিংরুম স্যানিটাইজ করার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের কেউ নিয়ম ভেঙে থাকতে পারেন। কারণ, তাঁদের ক্ষেত্রে বায়ো বাবলের নিয়ম এত কড়া নয়। সেভাবেই সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে। কেউ কেউ এমনও বলছেন যে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মাটিতে গত আইপিএলে বায়ো বাবল অনেক বেশি কঠোর ছিল। সেখানে সরকারের তরফ থেকে অনেক বেশি নজরদারি ছিল এবং কেউ বিন্দুমাত্র ভুল করলেই তাঁকে আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এখানে সেই নজরদারি কিছুটা ঢিলে। বলা হচ্ছে, এবার তো কোনও কোনও দলের সাপোর্ট স্টাফদের একাংশ চার্টার্ড ফ্লাইটে না গিয়ে সাধারণ বিমানে যাত্রা করছেন। দিল্লি বিমানবন্দরে চেন্নাই সুপার কিংসের লাগেজ বিভ্রাটে যে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের হোটেলে পৌঁছে গিয়েছিল, পরে যা ফেরত দেওয়া হয়, সেটাও হয়েছিল সিএসকে দলের সাপোর্ট স্টাফদের কয়েকজন সাধারণ বিমানে মুম্বই থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন বলেই।

কেকেআর তারকা প্যাট কামিন্সও করোনা আক্রান্ত বলে কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে। যদিও কেকেআর শিবিরের খবর, তিনি পেটের সমস্যায় কাবু। আমদাবাদে যেদিন মরুঝড় উঠেছিল, সেদিন টিমহোটেলের ছাদে কেকেআর ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফেরা খাওয়াদাওয়া সারছিলেন। ঝড়ের মধ্যে অনেক ধুলোবালি খাবারে এসে পড়েছিল। তা থেকেই খাবারে কোনও বিষক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের মনে হচ্ছে আর বলা হচ্ছে সেই কারণেই কামিন্স অনুস্থ। উদ্বেগের কিছু নেই।

তবে সর্বোপরি আইপিএলের ভবিষ্যৎ নিয়েই এখন বড়সড় প্রশ্ন। কেকেআর মাত্র তিনদিন আগে দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে খেলেছে এবং সেই ম্যাচেও খেলেছিলেন বরুণ। দিল্লি আবার রবিবার পঞ্জাব কিংসের সঙ্গে খেলেছে। এভাবেই সংক্রমণ আরও বড় বৃত্তে ছড়িয়ে পড়বে না তো! কেকেআর-আরসিবি ম্যাচ স্থগিত হয়ে গেলেও আপাতত সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।

Continues below advertisement
Sponsored Links by Taboola