সন্দীপ সরকার, কলকাতা : ‘‘জীবনে যতবার ভোটে দাঁড়িয়েছি, ততবার ব্যবধান বেড়েছে। ২০১১ তে মানুষকে বলেছিলাম, পেহলে ইস্তেমাল করো। ফের বিশ্বাস করো। এখন বলছি, ভরোসা রাখো ম্যায় হুঁ না৷’’ প্রচারপর্বের ঝক্কি সামলে একটু জিরিয়ে নেওয়ার মাঝে বললেন ফিরহাদ হাকিম।


মন্ত্রিত্বের গুরুভার থেকে পুরসভার দায়িত্ব। সংগঠনের সাতসতেরোয় নজর রাখা। মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বস্ত সেনাপতিদের মধ্যে একজন। এবারেও কলকাতা বন্দর রক্ষার দায়িত্ব তাঁরই কাধে তুলে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এবারের ভোটের অন্যতম ভিআইপি ফিরহাদ হাকিম।


হু হু করে বাড়ছে পেট্রোপণ্যের দাম! সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়! এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, চেনা পথে নয়! চড়লেন ই-স্কুটারে! কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কে চালাবেন স্কুটার? কে নেবে সেই গুরু দায়িত্ব? ডাক পড়ল ববি-র। তিনিই, ই-স্কুটারে করে ‘দিদি’কে নিয়ে গেলেন নবান্নে! ফেরার সময় মুখ্যমন্ত্রীর হাতে যখন ই-স্কুটারের অ্যাক্সিলেটর, তখনও পাশে হাজির ফিরহাদ।


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সেনাপতি। যার শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটার স্লিপ লেখা দিয়ে। ৭০-এর দশকে ইন্দিরা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন ফিরহাদ হাকিম। এরপর ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির সঙ্গী। ধীরে ধীরে পাড়ার ডাকাবুকো ববি হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর রাজনীতিক। কলকাতা বন্দরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আমার নিজের সাথে নিজের লড়াই, সারা বছর যা কাজ করেছি তার পরীক্ষার ফল আশা করতেই পারি...আমি সারা বছর যে কাজ করলাম তাতে মানুষ প্রসন্ন নাকি প্রসন্ন নয়, সেটাই এবার দেখতে চাই।’’


২০০০-এ প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আলিপুরের কাউন্সিলর। কাউন্সিলর থেকে বিধায়ক, বিধায়ক থেকে মন্ত্রী। এবারও লড়ছেন কলকাতা বন্দর থেকে। প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির আবাদ কিশোর গুপ্ত এবং কংগ্রেসের মহম্মদ মোক্তার। ভোটের আগে নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন প্রচারে। কখনও পাড়ায় পাড়ায় প্রচার করছেন। কখনও করছেন কর্মিসভা! কলকাতা বন্দরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আমি ভাগ্যবান, আমি আশীর্বাদ পেয়ে এসেছি এতোদিন...ভগবানের কৃপা থাকলে পরেও পাব আশীর্বাদ। এবার বাইরে যেতে হচ্ছে, একেকটা ওয়ার্ডে একেকদিন ঘুরব। কর্মীদের কাজ আরও মানুষের কাছে যাওয়া। সবাই পাস করতে চায়, আর তৃণমূল ফার্স্ট হতে চায়।’’





প্রচারে গিয়ে এলাকার মন্দিরে গিয়ে জনসংযোগ সারছেন ফিরহাদ। তৃণমূল কর্মীদের নাচ, খেলা হবে স্লোগান, ফিরহাদের প্রচারে বাদ যাচ্ছে না কিছুই! ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘রাজ্যের সব কাজ সামলে নিজের এলাকায় সময় দেই। যেখানে প্রয়োজন সেখানেই যাই, নির্বাচনের সময় মানুষের আশীর্বাদ চাইতে হয়, এটা রীতি, তাই আসা। মানুষ সামনা সামনি অনেক কিছু বলতে পারেন, ইন্টারাকশন ভাল হয়।’’


টানা প্রচারের ফাঁকে দলীয় অফিসে বসে কর্মীদের সঙ্গে কথা। একটু জিরিয়ে নেওয়া। শুধু নিজের প্রচার নয়, অন্যদের প্রচারেও যেতে হচ্ছে ফিরহাদ হাকিমকে। এবারে থেকে এক দশক আগের লড়াই আরও কঠিন ছিল, বলছেন ফিরহাদ। একইসঙ্গে এবারও জেতার ব্যাপারে আশাবাদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো সেনাপতি।