কলকাতা: রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে (Bratya Basu) সরানোর সুপারিশ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে ব্রাত্যকে অপসারণের সুপারিশ করলেন রাজ্যপাল। মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূলপন্থী অধ্যাপক সংগঠনের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্রাত্য। সভাপতি হিসেবে সেখানে উপস্থিত থেকেও তিনি রাজনৈতিক আলোচনা করেছেন বলে অভিযোগ। সেই প্রেক্ষিতেই ব্রাত্যকে রাজ্যপাল সরানোর সুপারিশ করেছেন বলে খবর মিলছে রাজভবন সূত্রে। (Lok Sabha Elections 2024)


রাজভবন সূত্রে খবর, রাজভবনের তরফে ব্রাত্যকে শিক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। রাজ্য়ের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে এই সুপারিশ করেছেন রাজ্যপাল। কয়েক দিন আগেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠনের সম্মেলনে যান ব্রাত্য। সেখানে জেলায় তৃণমূলের দুই প্রার্থীও উপস্থিত ছিলেন। মমতার কাটআউটও বসানো ছিল সেখানে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর কেন এই রাজনৈতিক বৈঠক হল, সেই নিয়ে তখনই বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সরিয়েও দেন রাজ্যপাল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে পদে পুনর্বহাল করে রাজ্য সরকার। সেই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই রাজভবন এবং বিকাশ ভবনের মধ্যে ঘাত-প্রতিঘাত চলছিল। এবার সরাসরি ব্রাত্যকে সরানোর সুপারিশ করলেন রাজ্যপাল।


এবিপি আনন্দে এ নিয়ে ব্রাত্য বলেন, "আমি আছি, গিন্নি আছেন, আছেন আমার নয় ছেলে। সবাই মিলে কামড়ে দেব মিথ্যে এমন ভয় পেলে-এই আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয়ে থাকলে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করবে। তারা কেউ অভিযোগ করছে না। আমি একা ছিলাম না, আরও অনেক মন্ত্রী ছিলেন ওখানে। শুধু আমার ব্যাপারেই বেছে বেছে এমন সুপারিশ কেন? হয়ত অন্য কোনও ব্যাপার আছে।"


এমনিতে রাজ্যপাল এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যর মধ্যেকার সংঘাত নতুন কিছু নয়। সমালোচনা, পাল্টা সমালোচনা আগেও ঘটেছে প্রকাশ্যেই। সেই সংঘাতই কি আরও এগিয়ে নিয়ে গেলেন রাজ্যপাল? ব্রাত্যর কথায়, "এটা হচ্ছে মধুরও তোমার শেষ না পাই! এই মধুরতার সঙ্গে অম্লতা মিশিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে এটা তাঁর এক ধরনের প্রতিক্রিয়া। কাকে মন্ত্রী সভায় রাখা হবে, কাকে না রাখা হবে, তা মুখ্যমন্ত্রীর উপর নির্ভর করে। উনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে সুপারিশ করতে পারেন।" ব্রাত্য জানিয়েছেন ওই সম্মেলনে গিয়ে কোনও ভুল করেননি তিনি। আবারও ওই ধরনের একটি সম্মেলন করবেন তিনি। তিনি বেআইনি কিছু করেননি বলে জানিয়েছেন ব্রাত্য। রাজ্যপালের নিযুক্ত উপাচার্যই সম্মেলনের অনুমতি দিয়েছিলেন, তাই বেআইনি কিছু ঘটলেও উপাচার্যের দায়িত্ব বলে জানান তিনি। কিন্তু তাঁকে পুনর্বহাল করা হল কেন? ব্রাত্য জানান, এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুযায়ী নতুন করে উপাচার্য নিয়োগের অনুমতি নেই। তাই তাঁকে আবার পুনর্বহাল করা হয়েছে।



এ নিয়ে ট্যুইটারেও মুখ খোলেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, "রাষ্ট্রপতির কাছে আমি রাজ্যপালের অপসারণের সুপারিশ করলে যা হবে সেটা যতটা হাস্যকর হবে, এটা ততটাই হাস্যকর। আমি বিধিভঙ্গ করলে কোনও রাজনৈতিক দলের সেটা কমিশনের নজরে আনার কথা, তার পর পদক্ষেপ করার কথা কমিশনের। এই ধরনের অভিযোগ করে উনি (রাজ্যপাল) সাংবিধানিক পদের অপব্যবহার করেছেন এবং নিজের রাজনৈতিক পরিচয় সামনে এনেছেন। সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, মন্ত্রীর নিয়োগ বা অপসারণ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। উনি (রাজ্যপাল) শুধু নিজের আসল রং দেখাননি, নিজের সাংবিধানিক সীমাও ছাড়িয়ে গিয়েছেন।"


আরও পড়ুন: Nisith Pramanik: ‘সব মিথ্যে মামলা, ওঁর ভাইপো শুধু ভাল’, মমতার আক্রমণে জবাব নিশীথের


গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠনের ওই বৈঠক ঘিরে রাজভবন এবং নবান্নের মধ্যে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে। ওই ঘটনায় উপাচার্যকে রজতকিশোর দে-কে সরিয়ে দেন রাজ্যপাল। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে অনুমতি দেয় রাজ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের  রেজিস্ট্রারের কাছে বিজ্ঞপ্তিও পাঠায় রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। 


সেই নিয়ে লাগাতার টানাপোড়েন চলছিল। রাজভবনের অভিযোগ, ওই বৈঠকে লোকসভা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে, যাতে নির্বাচন কমিশনের জারি করা আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই ব্রাত্যকে অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরানো উচিত বলে সুপারিশ করেছেন রাজ্যপাল। সেই নিয়ে নতুন করে সংঘাত মাথাচাড়া দিয়েছে দুই তরফে।