কলকাতা: বেজে গিয়েছে লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election) দামামা। ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হবে লোকসভা ভোটের যুদ্ধ। ৭ দফায় ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal)। এর মধ্যে ৭ মে তৃতীয় দফায় ভোট হবে মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদে। এর মধ্যে ভোটের (Election) মঞ্চে মালদা (Malda) দক্ষিণ বরাবরই উজ্জ্বল নাম।                                                                               


মানচিত্রে মালদা লোকসভা কেন্দ্র


মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ৪২ টি লোকসভা কেন্দ্রের একটি এবং ২০০৯ সালে লোকসভা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত নয়। মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত। লোকসভা কেন্দ্রটি ৭ টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত। এগুলি হল- মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্র, ইংরেজ বাজার বিধানসভা কেন্দ্র, মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্র, সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্র, বৈষ্ণবনগর বিধানসভা কেন্দ্র, ফরাক্কা বিধানসভা কেন্দ্র ও সামসেরগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র।


ভোটের রাজনীতি, ভোটের ফলাফল 


মালদা ভেঙে ২০০৯-এ আসন পুনর্বিন্যাসে তৈরি হয়েছিল এই কেন্দ্র। গত তিনটি (২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯) লোকসভা ভোটে এই আসনে জিতেছেন প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর ভাই কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। কিন্তু ২০২১-এর লড়াইয়ে কোনও আসনে জেতা দূরের কথা, মালদা দক্ষিণ লোকসভার অন্তর্গত সামসেরগঞ্জ (যেটি মুর্শিদাবাদ জেলায় পড়ে) ছাড়া অন্য কোনও বিধানসভায় ২০ শতাংশও ভোট পাননি কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থীরা। ইংরেজবাজারে বিজেপি এবং বাকি ছ’টি— মানিকচক, মোথাবাড়ি, সুজাপুর, বৈষ্ণবনগর, ফরাক্কা এবং সামসেরগঞ্জে তৃণমূল জয়ী হয়। 


এক নজরে ২০০৯ এ ভোটের ফলাফল- 




২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে গেরুয়া রঙের ছোঁয়া লেগেছিল। ২০০৯ সালের থেকে প্রায় ১৯ শতাংশ ভোট কমে যায় কংগ্রেসের। অন্যদিকে, বিজেপি প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি করেছিল।                                                                  


এক নজরে ২০১৪ এর ফলাফল- 




এরপর ২০১৯-এ আরও উত্থান বিজেপির। পরিসংখ্যানে তা আরও স্পষ্ট। ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ২৭০ ভোট পেয়েছিলেন কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরী। বিজেপির শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী পেয়েছিলেন, ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ভোট। ভোট বৃদ্ধি হয়েছিল তৃণমূলেরও। মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে প্রায় ৬ শতাংশ ভোট বাড়ে ঘাসফুল শিবিরের।                                                                                


এক নজরে ২০১৯ এর ফলাফল-  






২০২৪ এ লোকসভা নির্বাচনেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে মালদা দক্ষিণ। কারণ ২০১৯ এর মতো এবারেও ভোটযুদ্ধ হবে ত্রিমুখী।  ২০১৯- এ তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন।  কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু), বিজেপির হয়ে লড়াই করেছিলেন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। হাত শিবিরের সঙ্গে জোটে থাকায় কোনও প্রার্থী দেননি বামেরা। এবছর অবশ্য কিছুটা পটপরিবর্তন হয়েছে। মালদা মূলত পরিচিত ছিল গনি খানের এলাকা হিসেবে। মালদা দক্ষিণ পরবর্তীতে ডালু-গড় হিসেবেই পরিচিত হয়। এবছর অবশ্য তিনি অসুস্থ থাকায় তাঁর ছেলে ঈশা খান চৌধুরী নামছেন রাজনীতির ময়দানে। এবছর ঈশাকে লড়াই করতে হবে তৃণমূলের শাহনওয়াজ আলি রায়হান এবং বিজেপির শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর বিরুদ্ধে।                                                                                       


চৌধুরী পরিবারে 'মতানৈক্য'


রাজনীতিতে মালদা বরাবরই চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বরকত গনি খানের পরিবারেই দেখা দিয়েছিল 'ঘরোয়া যুদ্ধ'। তাঁর মৃত্যুর পর কোতয়ালি ভবনের সেই জৌলুস যেন স্তিমিত হতে শুরু করেছিল। ২০১৯- এ পরিবারের অন্যতম সদস্য মৌসম বেনজির নুর তৃণমূলে যোগ দিতেই তৈরি ফাটল। সে সময় মৌসমের চলে যাওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছিলেন কংগ্রেসের বাংলার ভারপ্রাপ্ত নেতা। তৃণমূল অবশ্য মালদা উত্তর থেকে প্রার্থী করেছিল মৌসমকে। সে সময় তাঁরই বিপরীতে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দাদা ঈশা খান। তবে মালদা উত্তর দখল নেয় বিজেপি। পদ্ম শিবিরের খগেন মূর্মু দখল করেন ওই কেন্দ্র।                                             


কমান্ডার 'ডালু'ই


তবে মালদা দক্ষিণে এবার অবশ্য কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়াচ্ছেন ঈশা খান চৌধুরী। চারবারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত বাবা আবু হাসেম খান চৌধুরীর অসুস্থতার পর কর্মীরা তাঁর জন্য প্রচারও চালিয়ে গিয়েছিলেন। কংগ্রেস সূত্রে খবর, ডালুবাবুই এবার প্রার্থী হিসাবে কয়েক জনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন কংগ্রেস হাইকমান্ডে। সে তালিকায় ছিল পুত্র ঈশার নামও। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে ঈশা জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা অসুস্থ হলেও ছেলের হয়ে ভোটের ময়দানে প্রচারে দেখা যেতে পারে তাঁকে। সাফ জানান, তাঁর বাবাই তাঁর কমান্ডার। পারিবারিক বিবাদের কোনও বিষয় এ ক্ষেত্রে নেই, তা স্পষ্ট করেছিলেন ডালু-পুত্র।                                                         


 


পরিসংখ্যান হোক কিংবা পরিবার, যাই-ই হোক না কেন, সবের  উত্তর দেয় ভোটবাক্সই। পদ্মে কি আস্থা রাখবে মালদাবাসী?  মালদা কি 'হাতে'ই থাকবে না বেহাত হবে? এ সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ৪ জুন, লোকসভা ভোটের ফলাফলে।