রুমা পাল, কলকাতা: নন্দীগ্রামে ভোটারদের কেন্দ্রীয় বাহিনী বাধা দেয় বলে নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বয়ালের ঘটনায় কমিশনে রিপোর্ট দিলেন দুই পর্যবেক্ষক। বয়ালকাণ্ডে আজ ফের সুর চড়ান তৃণমূলনেত্রী। পাল্টা কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।


২০০৭ সালে জমি আন্দোলনের হাত ধরেই নন্দীগ্রামকে চিনেছিল গোটা বিশ্ব! সোনাচূড়া, গোকুলনগর, ভাঙাবেড়ার মতো অখ্যাত জায়গাগুলোর নাম মুখে মুখে উঠে এসেছিল! ১৪ বছর পর, বাংলার বিধানসভা ভোটের ভয়াল উত্তাপ, শিরোনামে এনে দিয়েছে নন্দীগ্রামের বয়ালকে!বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের পোলিং এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রয়াল প্রাথমিক স্কুলের বুথে প্রায় দু’ঘণ্টা ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে স্কুলে বুথ, তাঁর বারান্দায় হুইলচেয়ারে বসেছিলেন তিনি। সেই সময় বাইরে, চরম বিক্ষোভ চলছিল! একদিকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান! অন্যদিকে, ‘খেলা হবে’!


শুক্রবার উত্তরবঙ্গ থেকেও তা নিয়ে ফের সুর চড়ান তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমায় পেট্রোল বোমা নিয়ে এসেছিল মারতে, বন্দুক এনেছিল। আমি দেখি কি করতে পারিস। আমায় ধমকালে আমি গর্জাই৷’’ নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী জানান, ‘‘তদন্ত হলে প্রমাণ হবে মমতা বেআইনি ভাবে বুথের ভিতর বসে থেকে একশো ভোটারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই বুথে আশি শতাংশ ভোট হয়েছে।’’


বৃহস্পতিবার, এখানে বসেই নির্বাচন কমিশনকে হাতে লেখা চিঠিতে অভিযোগ জানান মমতা। উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের কাছেও অভিযোগ করেন। সেখানে বলা হয়, বেশ কিছু বুথে ভোটারকার্ড ছাড়া অন্য পরিচয়পত্র নিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভোটারদের বাধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রথমত, কেন্দ্রীয় বাহিনী বৈধ ভোটারদের বুথে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে না।


ভোটারের কাছে বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব পোলিং এজেন্ট ও প্রিসাইডিং অফিসারের।  নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিচয়পত্র দেখতে পারে না এবং ভোটারের কাছে এপিক ছাড়া নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিত যে কোনও একটি পরিচয়পত্র থাকলে তাঁদের বুথে ঢুকতে বাধা দিতেও পারে না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও বুথের ভিতর থাকতে পারেন না এবং যে ভোটারদের কোনওভাবেই বাধা দিতে পারেন না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাজ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেখা।  তৃণমূলনেত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক ও বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের কাছে রিপোর্ট তলব করে কমিশন। তৃণমূলনেত্রীর অভিযোগগুলি রাজ্য পুলিশের ডিজিকেও জানান হয়। এরপরই পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের নির্দেশে নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগ নথিভুক্ত করে ডায়েরি করা হয়। 


শুক্রবার বিশেষ পর্যবেক্ষক ও পুলিশ পর্যবেক্ষকের তদন্ত রিপোর্ট কমিশনে জমা পড়েছে।সূত্রের খবর, তাতে বলা হয়েছে, উত্তপ্ত পরিস্থিতি সত্বেও বয়ালে ভোটগ্রহণ ব্যাহত হয়নি। সেখানে ভোটে কোনও কারচুপি হয়নি এবং পরিস্থিতি যথাযতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তাই কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা হয়নি।