কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, পিসি-ভাইপোর পর ভোটের বাংলায় প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রীর গলায় শোনা যাচ্ছে আরও এক নতুন শব্দবন্ধ (দিদি ও দিদি)!


রাজ্যে ইতিমধ্যেই দু’দফায় মোট ৬০ আসনে ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাইপ্রোফাইল কেন্দ্র নন্দীগ্রামের ভোটও। এখনও ২৩৪ আসনে নির্বাচন বাকি। তার আগে বাংলায় এসে প্রতিটি জনসভাতেই নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ সুরে সম্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী। 


আর এখানেই তীব্র আপত্তি তুলেছে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর এই সুরে সম্বোধন বাংলার প্রতিটি মহিলার অপমান। মন্ত্রী ও শ্যামপুকুরের তৃণমূল প্রার্থী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘দিদি বলে টোন কাটছেন, মমতাকে, মহিলাদের তাচ্ছিল্য করছেন, অপমান করছেন। বাংলার প্রতিটি মহিলাকে অপমান করা হয়েছে। মমতার প্রতি মোদি যে ভাষা ব্যবহার করেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। একজন মহিলা নেত্রীর সম্পর্কে মোদির এমন মন্তব্য ঠিক নয়।’’


মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া সে সময়ে বলেন, ‘‘শশীদি ও শশীদি... কেরকম শুনতে লাগল বলুন। নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে যেভাবে কথা বলছেন তা দুর্ভাগ্যজনক।’’ তিনি বলেন, ‘বাংলার প্রতিটি মহিলাকে অপমান করা হয়েছে। মমতার প্রতি মোদি যে ভাষা ব্যবহার করেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। আগের কোনও প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেননি। বিজেপি অন্য খেলায় মেতে উঠেছে। মমতাকে কীভাবে অপমান করা যায়, কীভাবে হেনস্থা করা যায় তাতে মেতে উঠেছে। বাংলার মা-বোনেরা, মানুষ যোগ্য জবাব দেবে।’


তবে প্রধানমন্ত্রীর ‘দিদি’ সম্বোধনে খারাপ কিছু দেখছে না বিজেপি। উল্টে প্রধানমন্ত্রীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তুই’ বলে সম্বোধন বা ‘দড়ি বেধে নিয়ে যাওয়ার’ প্রসঙ্গ তুলে পাল্টা আক্রমণের পথে হেঁটেছে গেরুয়া শিবির। 


চুঁচুড়ার বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দিদিকে দিদি বলে ডাকা তো সম্মানের বিষয়, আমার মনে হয় ২০১৯-এ লড়েছিলাম, তখন দড়ি দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাব, একজন মহিলার মুখ থেকে ওই ধরনের কথা বলা কি অসম্মান নয়?’’


পাশাপাশি আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল বলেন, ‘‘দিদি ডাক ভালবাসার, শ্রদ্ধার, কীভাবে বলছেন টোন, সেটা প্রশ্ন, আসলে মুখ্যমন্ত্রী তুই তুকারি করে, সেখানে বলে কি করে? সেখানে দিদি নিয়ে তৃণমূলের এরকম লাগবেই ৷’’


গুজরাতের নারী সুরক্ষার প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল। অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘আজ খুব দুর্দিন, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে যিনি বসে আছেন, মহিলাদের প্রতি তাঁর কোনও সম্মান নেই। নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে যেভাবে কথা বলছেন তা দুর্ভাগ্যজনক। এখন ধর্ম নিয়ে খেলা হচ্ছে। মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে যে টোনে কথা বলছেন তা কোন মূল্যবোধ? এ বাংলা এই মন্তব্য সমর্থন করে না।’


পাল্টা খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘শশী পাঁজা বলছেন, উনি তো বাঙালি নন, দিদি তো ঘরের বিষয়, অসম্মানের কি আছে? আর উনি যে হোদল কুতকুত,বলেন, সেগুলি কী কথা ৷’’


আজও দিদির আশীর্বাদ-ভালবাসা পেতে ভাইফোঁটার জন্য বছর ভর অপেক্ষায় থাকে ভাইরা ৷ কিন্তু ভোটের বাংলায় এখন ‘দিদি’-শব্দ নিয়েই তুঙ্গে চাপানউতোর!