কলকাতা:  নির্বাচনে কোনও মতুয়াকে প্রার্থী করা হয়নি। প্রতিনিধিত্ব না থাকায় মতুয়াদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। ভোটের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। 


বিজেপি নেতার দাবি, একুশের বিধানসভা ভোটে ৩০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানানো হলেও, তা মানা হয়নি। যদিও, বাবার সুরের উল্টো সুর শোনা গেল ছেলে শান্তনুর গলায়। বনগাঁর বিজেপি সাংসদের দাবি, বেশ কয়েকটি জায়গায় মতুয়াদের প্রার্থী করা হয়েছে। বাবার মতামত তাঁর ব্যক্তিগত বলেও দাবি করেছেন শান্তনু।


এদিন, নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেলে অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করেন শান্তনু ঠাকুর। বিজেপি সাংসদের দাবি, নিজের কেন্দ্রের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।


মতুয়াদের প্রার্থীপদ নিয়ে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের মতো একই সুর তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির আরেক সদস্য মমতাবালা ঠাকুরের গলাতেও। তৃণমূলও মতুয়াদের প্রার্থী করেনি বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। 


প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। গতকাল নির্বাচনী ইস্তেহারে নাগরিকত্ব ইস্যুকে হাতিয়ার করে গেরুয়া শিবির। 


বিজেপির ইস্তেহারে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় এলে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটকে ধরে রাখতেই ইস্তেহারে নাগরিকত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। 


এ রাজ্যে প্রায় ২ কোটি ৮৭ লক্ষ মানুষ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের। যার সিংহভাগই মতুয়া। বাংলার অন্তত ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মতুয়া ভোট।


উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি সংরক্ষিত বিধানসভা আসনে তো কার্যত নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেয় মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক।


২০১১ সাল থেকে এই মতুয়া ভোটের সিংহভাগই ছিল তৃণমূলের দখলে। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভায় সেই হিসেব বদলে যায়।  সিএএ-এনআরসি কে ইস্যু করে ভোটে নেমে,  বনগাঁ এবং রানাঘাট - মতুয়া অধ্যুষিত ২টি লোকসভা কেন্দ্রই তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। মতুয়া অধ্যুষিত একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রেও এগিয়ে ছিল তারা। 


কিন্তু ভোটের পর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় মতুয়াদের একাংশ। এরপর সম্প্রতি অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়ে দেয়,  সিএএ কার্যকর করার জন্য রাজ্যসভা এবং লোকসভার কমিটির তরফে কেন্দ্রকে ৯ এপ্রিল এবং ৯ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। 


অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে, বিধানসভা ভোটের আগে মতুয়াদের সিএএ কার্যকর করার দাবি পূরণ হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।


শুধু ইস্তেহারই নয়,  ভোটের মুখে ২৬ মার্চ ঢাকা যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। পরের দিন অর্থাত্‍ রাজ্যে প্রথম দফা ভোটের দিন গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।


সেখানে মতুয়া ধর্মমতের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মভিটে এবং একটি মন্দির যাবেন তিনি। এই ওড়াকান্দিকেই নিজেদের সর্বোচ্চ তীর্থস্থান হিসেবেই দেখেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ।