সোমনাথ মিত্র ও সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: এ যেন কেটেও কাটল না জট। হাজার বিতর্কের পর সোমবার মনোনয়নপত্র পেশ করলেন সিঙ্গুরের বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। মান ভাঙার পর দলীয় প্রার্থীর পাশে কয়েকজন নেতাকে দেখা গেলেও, বাড়িতেই বসে থাকলেন, সিঙ্গুরের জেড পি মন্ডলের বিজেপি সভাপতি গৌতম মোদক। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে মিছিলেও অংশ নেননি তিনি।


৮ মার্চ, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন সিঙ্গুরের ৪ বারের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। আর ১৪ মার্চ, তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করে দেয় পদ্ম শিবির। মাত্র ৫ দিন আগে তৃণমূল ছেড়ে আসা বিধায়ককে প্রার্থী করায়, সিঙ্গুরে বিজেপির অন্দরে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। বিক্ষোভ, অবরোধ, অনশন ৷ এই সব কিছুই হয়েছে। পার্টি অফিসে তাণ্ডব, বাদ যায়নি কিছুই। এমনকী প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভের জেরে, মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিজেপি পর্যবেক্ষক প্রভুরাম চৌধুরীকেও ৫ ঘণ্টা তালাবন্ধ করে রাখা হয়। যদিও প্রার্থী বদলে শীর্ষ নেতৃত্ব নারাজ থাকায়, শেষমেশ পিছু হঠতে বাধ্য হন বিদ্রোহীদের একাংশ।


প্রার্থী বদলের দাবিতে, ১৮ তারিখের অনশন মঞ্চে দেখা গিয়েছিল, সিঙ্গুরের জেড পি ৫ নম্বর মণ্ডলের বিজেপির সভাপতি প্রদীপ দাসকে। কিন্তু এদিন রবীন্দ্রনাথ ভটাচার্যর পাশেই দেখা গেল তাঁকে। সিঙ্গুরের জেড পি ৫ নং মণ্ডলের বিজেপি সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘রাজ‍্যের নির্দেশে আমরা রবীনবাবুকে জেতাতে নেমে পড়েছি। আমরা সবাই একসাথে আছি, বিভ্রান্তি কেটে গেছে।’’


রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের জয় চাইলেও, এখনও রাগ কমেনি এই নেতার। এমনকী দলীয় প্রার্থীর মিছিলেও গেলেন না সিঙ্গুরের আরেক মণ্ডল সভাপতি গৌতম মোদক। সিঙ্গুরের জেড পি ৩এ বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা ও মণ্ডল সভাপতি গৌতম মোদক বলেন, ‘‘আমি প্রথমেই চাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচর্য জয়ী হোক। কিন্তু আমার মনে এখনো রাগ,দুঃখ, অভিমান আছে। কারণ দুদিন আগে ভারতীয় জনতা পর্টিতে এসেই টিকিট পেয়ে গেছে।’’


এদিন প্রথমে সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দিরে পুজো দেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তারপর হুড খোলা গাড়িতে র‍্যালি করে মনোনয়ন জমা দিতে যান। সিঙ্গুরের বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আর কোন দ্বিমত নেই। সমস্ত বিজেপি কর্মীদের নিয়ে বিপুল আনন্দে ও আশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছি। খেলা যখন সাঙ্গ হবে, তখন বোঝা যাবে।’’


বিজেপি প্রার্থী যাই দাবি করুন না কেন, কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের ওবিসি-এসটি মোর্চার ব্লক সভাপতি কার্তিক মাঝি বলেন, ‘‘বিজেপির এখনও কোন্দল চলছে। গৌতম মোদক সহ অনেকে মিছিলে যাননি। গুটি কয়েক লোককে নিয়ে গেছে মনোনয়ন দিতে। ওরা দেখাতে চাইছে আমদের একতা হয়েছে।’’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর সঙ্গে এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেন চন্দননগরের বিজেপি প্রার্থী দীপাঞ্জন গুহ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।