নয়াদিল্লি: পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি নেই। শীতের শেষদিক থেকেই চড়তে শুরু করে রাজনৈতিক উত্তাপের পারদ। বসন্তে সেই উত্তাপ বাড়ছে। সরস্বতী পুজোর দিনেও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা একে অপরকে নিশানা করেছেন। এরই মধ্যে বিজেপি সূত্রে খবর, এরাজ্যে প্রচারে ঝড় তোলা এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে ভিনরাজ্য থেকে আরও কয়েকজন নেতাকে নিয়ে আসা হচ্ছে।


সম্প্রতি বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা একাধিকবার পশ্চিমবঙ্গে এসে রোড শো, জনসভা করেছেন। তিনি ‘পরিবর্তন যাত্রা’-রও সূচনা করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ও একাধিকবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কয়েকদিন আগেই হলদিয়ায় জনসভায় যোগ দেন। বিজেপি-র কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে দলের হাল ধরার দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা এরাজ্যেই আছেন। আরও কয়েকজন নেতাকে পাঠানো হচ্ছে।


তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বারবার বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের বহিরাগত বলে আক্রমণ করা হয়েছে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা একাধিকবার এই ইস্যুতে বিজেপি-কে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলার নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য ভিনরাজ্যের নেতাদের উপরেই ভরসা করছে কেন্দ্রের শাসক দল। যে সমস্ত নেতার নির্বাচনে লড়াই করা বা নির্বাচনের সময় দলীয় সংগঠনের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁদেরই বাংলায় পাঠানো হচ্ছে।


এরাজ্যে বিজেপি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম নেতা অমিত মালব্য জানিয়েছেন, ‘এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা বিজেপিশাসিত অন্য রাজ্যগুলির মন্ত্রীদের পশ্চিমবঙ্গে ৫-৬টি করে লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি-র অনেক নেতারই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা দলীয় কর্মীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। তাঁদের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর মধ্যে কোনও ভুল নেই। প্রবীণ নেতাদের অভিজ্ঞতা পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে কাজে লাগানো হবে।’


মালব্য আরও বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মনস্থির করে ফেলেছেন এবং বলতে শুরু করে দিয়েছেন, মমতা যাচ্ছে, বিজেপি আসছে। মানুষ যখন একটি সরকারের বিরুদ্ধে এই লাইন ব্যবহার করতে শুরু করে, তার মানে সরকার মানুষের সমর্থন হারিয়েছে।’


বিজেপি সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ১০৯টি আসনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি-র পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন পূরণ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আসনগুলিকে অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই কারণে এই আসনগুলির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ২২ জন নেতাকে। তাঁদের মধ্যে আছেন নিশিকান্ত দুবে, বিনেদ সোনকর, বিনোদ তাওড়ে, ধর্মেন্দ্র প্রধান, প্রদীপ সিংহ বাঘেলা, বসন্ত পাণ্ড্য, আর কে সিংহ, মঙ্গল পাণ্ডে, রমেশ বিধুরী, রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর, বিনয় সহস্রবুদ্ধি, আশিস সেলার, রাধামোহন সিংহ, মদনলাল শর্মা ও সতীশ উপাধ্যায়।


এই ২২ জন নেতারই দলের সংগঠনের হয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। বিজেপি-র যুগ্ম জাতীয় সম্পাদক শিব প্রকাশ এই ২২ জন নেতার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। 


বিজেপি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা কলকাতায় এসে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ২২ জন নেতার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। একেকজন নেতাকে ৩ থেকে ৬টি করে বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হবে।