পার্থ প্রতিম ঘোষ, কলকাতা: দৃশ্য এক, ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। বামেদের ডাকা জনসভা। সহযোগী কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট। এই প্রথমবার বামেদের ব্রিগেডের মঞ্চে নেই কোনও রাজনৈতিক দলের নাম। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোটকে তুলে ধরার প্রচেষ্টাতেই নতুন এই সমীকরণ। আর জনসভার আগের রাত থেকেই ব্রিগেডমুখী জনতার ঢল। প্রত্যন্ত জেলা থেকে দলে দলে আসছেন বামেদের কর্মী-সমর্থকেরা। বাজছে ঢাক-ঢোল-ধামসা-মাদল। মুহূর্মুহূ উঠছে স্লোগান। প্রবীণদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের অনেকে লাল টি-শার্ট পরে হাততালি দিতে দিতে এগিয়ে চলেছেন। নতুন লড়াইয়ের মন্ত্র জপতে জপতে। যেন আচমকাই কোনও এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় প্রাণসঞ্চার হয়েছে ময়দানের ফুসফুস নামে পরিচিত বিশাল মাঠে।


দৃশ্য দুই। ৫৯ এ পাম অ্যাভিনিউ। শান্ত। নিস্তব্ধ। শীতের কামড় কমেছে। তবু সকালের রোদ যেন মিঠে উষ্ণতা ছড়াচ্ছে। নীল-সাদা বাড়ির প্রবেশদ্বারের ওপর লতানো মাধবীলতা মৃদুমন্দ হাওয়ায় মাথা দোলাচ্ছে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুধসাদা অ্যাম্বাসাডর। ডব্লিউ বি জিরো সিক্স ডি ট্রিপল জিরো ওয়ান। পাল্লা হাট করে খোলা। যেন সওয়ারির অপেক্ষা। সফেদবসন, সদাব্যস্ত ভদ্রলোক তো এই গাড়ি চেপেই দৌড়ে বেড়াতেন। কখনও মহাকরণ। কখনও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বিশ্রামের জো নেই। রাজ্যপাট সামলানোর জন্য দিনরাত এক করে ছুটতে হতো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে।



যদিও রবিবারের দৃশ্যটা সম্পূর্ণ আলাদা। বামেদের ব্রিগেড। অথচ তিনি গৃহবন্দি। অসুস্থ। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও সমস্যা। ব্রিগেডে যাওয়ার জন্য ছটফট করছেন। ইচ্ছে ষোলো আনা। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে। ভেতরে ভেতরে গুমরে মরছেন। পরিবারের সকলকে সে কথা জানিয়েছেন। বাম কর্মী-সমর্থকদের জন্য তাঁর বার্তাতেও সেই যন্ত্রণার ছাপ। বুদ্ধবাবু জানিয়েছেন, ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে খোঁজখবর রাখছেন। জানিয়েছেন, এরকম একটা সমাবেশে না যেতে পারার জন্য তাঁর মন খারাপ। বুদ্ধবাবু জানিয়েছেন, মাঠে-ময়দানে বাম কর্মীরা লড়াই করছেন, আর তিনি বাড়িতে, এটা ভাবাও তাঁর কাছে কল্পনাতীত।




২০১৫ সালের ব্রিগেডে ১৮ মিনিট বক্তৃতা দিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। ২০১৯ সালের ব্রিগেডে অসুস্থ শরীরেও গিয়েছিলেন। নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে। কিন্তু শ্বাসকষ্টের জন্য গাড়ি থেকে নামতে পারেননি। সেই অর্থে এবারের ব্রিগেডই বুদ্ধবাবুকে ছাড়া বামেদের প্রথম সমাবেশ। বাম নেতারা চেষ্টা করছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কোনও অডিও বার্তা করে যদি সমাবেশে তা শোনানো যায়।


ময়দান ভরতে শুরু করেছে। কলকাতায়, জেলায় জেলায় উড়ছে লাল নিশান। নতুন লড়াইয়ের শপথ নিচ্ছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। আর ৫৯ এ পাম অ্যাভিনিউয়ের সামনে অপেক্ষা করছে সাদা অ্যাম্বাসেডর। পাল্লা হাট করে খোলা। মসনদে থাকাকালীন স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে চেয়েছিলেন। সব হিসেব উল্টে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোক কি রবিবার ফের সওয়ার হবেন সফেদ বাহনে? ধুলো উড়িয়ে পৌঁছে যাবেন ব্রিগেডের মঞ্চে?