কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সঞ্চয়ন মিত্র, দীপক ঘোষ, কলকাতা: বিজেপির প্রার্থী তালিকায় চাঁদের হাট। বেহালা পশ্চিমের বিজেপি প্রার্থী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। ভবানীপুর কেন্দ্রে রুদ্রনীল ঘোষকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। অন্যদিকে, শিলিগুড়িতে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া শঙ্কর ঘোষকে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির।


বিজেপির প্রার্থী তালিকায় ফের তারকাদের ছড়াছড়ি। সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রুদ্রনীল ঘোষ, হেভিওয়েট কেন্দ্রে হেভিওয়েট রাজনীতিবিদের পরিবর্তে তারকাদের ওপরই ভরসা রাখল বিজেপি। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিদায়ী কেন্দ্র বেহালা পূর্বে আগেই অভিনেত্রী পায়েল সরকারকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এবার শোভনের পাশের কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমেও আরেক অভিনেত্রীর ওপর ভরসা রাখল গেরুয়া শিবির। বেহালা পশ্চিমে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়াই হবে অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর।


দিল্লি উড়ে গিয়ে অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদানের পরই জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়েছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ। প্রার্থী তালিকাতে এবার তাঁরও নাম। ভবানীপুরে রুদ্রনীলকে প্রার্থী করল বিজেপি। তাঁর বিপরীতে তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। একসময় তৃণমূলের ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চে যাঁকে দেখা যেত। তৃণমূল সরকারের একাধিক পদে ছিলেন যিনি, মুখ্যমন্ত্রীর ছেড়ে যাওয়া আসনে বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করতেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক রুদ্রনীল।


একদা টিটাগড়ে তৃণমূলের দাপুটে নেতা মণীশ শুক্ল, যিনি পরবর্তীকালে বিজেপিতে যোগ দেন, সম্প্রতি খুন হন তিনি। সেই মণীশ শুক্লর বাবাকে এবার ব্যারাকপুর কেন্দ্র প্রার্থী করল বিজেপি। ব্যারাকপুরে তৃণমূল প্রার্থী পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, সিপিএম প্রার্থী দেবাশিস ভৌমিকের সঙ্গে লড়াই হবে মৃত মণীশ শুক্লর বাবা, বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রমণি শুক্লর।


আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়িকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল জেলা নেতৃত্বের একাংশ। এবার তাঁর জায়গায় প্রার্থী করা হল সুমন কাঞ্জিলালকে। এখন প্রশ্ন হল, অশোক লাহিড়ি তাহলে কোন আসনে লড়বেন? তিনি কি আদৌ ভোটে লড়বেন? পরে কি অন্য কোনও আসন থেকে তাঁকে প্রার্থী করা হতে পারে?


কলকাতা পুরসভার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত। জোড়াসাঁকো থেকে তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া হেমতাবাদের প্রয়াত বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের স্ত্রী চাঁদিমা রায়কে ওই আসন থেকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি।


কয়েকদিন আগে সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেন শিলিগুড়ির শঙ্কর ঘোষ। অশোক ভট্টাচার্যের শিষ্য বলে পরিচিত ছিলেন। এবার শিলিগুড়িতে তাঁকেই প্রার্থী করল বিজেপি। ফলে শিলিগুড়িতে এবার গুরু-শিষ্যের লড়াই।


দীর্ঘদিন বাদে ভোটের লড়াইয়ে মুকুল রায়। তিনি শেষবার বিধানসভা ভোটে লড়েছিলেন ২০০১ সালে। উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল আসনে ফরওয়ার্ড ব্লকের হরিপদ বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে মূলত তৃণমূলের ব্যাকরুম স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসাবেই দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছিলেন। এবার তাঁকে ভোটের লড়াইয়ে নামাল বিজেপি। তবে নিজের জেলায় নয়, পাশের জেলা নদিয়া থেকে।


একাধিক তৃণমূল ছেড়ে আসা বিধায়ককে বিজেপি প্রার্থী করলেও, বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসকে টিকিট দিল না গেরুয়া শিবির।


লকেট চট্টোপাধ্যায়, নিশীথ প্রামাণিক, বাবুল সুপ্রিয় ও সদ্য সাংসদ পদ ছাড়া স্বপন দাশগুপ্তকে আগেই বিধানসভার ভোটে নামিয়েছিল বিজেপি। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের নাম। আর বিরোধীদের প্রশ্ন, বিজেপির প্রার্থী দেওয়ার মতো লোক নেই বলেই কি তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস থেকে আসা বিদায়ী বিধায়ক নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে, তারকা, এমনকি বছর দু’য়েক আগে ভোটে জেতা সাংসসদেরও বিধানসভার লড়াইয়ে নামাতে হল?