বিটন চক্রবর্তী ও অর্ণব মুখোপাধ্যায়, নন্দীগ্রাম: এবার কি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি-তে যোগ তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর? ২৪ মার্চ কাঁথিতে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘ছেলেরা বললে মোদির মঞ্চে যাব। মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব’, বললেন শিশির অধিকারী। ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য শুভেন্দুকে টার্গেট করা হচ্ছে। অভিষেকের দম্ভ সাংঘাতিক’, বললেন শিশির অধিকারী।


এদিকে, গুলি চলার চর্তুদশ বছরে এসে অন্য অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকল নন্দীগ্রাম। এতদিন বামেদের দিকে আঙুল তুললেও, এবার শুভেন্দু অধিকারী আক্রমণ করলেন তৃণমূলকে।  পাল্টা তৃণমূল দাবি করেছে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে কোনও পরিবার নয়, ভূমিকা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। 


৪ মার্চে চলা গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার ১৪ বছর পূরণ। উপলক্ষ্য এক, কর্মসূচিও এক। কিন্তু বদলে গেল প্রতিপক্ষ। নন্দীগ্রাম দিবসে একদিকে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি, অন্যদিকে তৃণমূল।


২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। প্রতি বছর এই দিনে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি উস্কে বরাবর বামেদের বিঁধতেন শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর আর এক ১৪ মার্চে শুভেন্দু বুঝিয়ে দিলেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অধিকারী তিনিই। 


এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘যাঁরা সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পতাকা ধরিয়েছেন, গুলি করা লোকেদের প্রোমোশন দিয়েছেন, তাঁদের নন্দীগ্রাম দিবস পালনের অধিকার নেই।’


পাল্টা সুর চড়িয়ে তৃণমূল স্পষ্ট করে দিয়েছে নন্দীগ্রাম আন্দোলন কোনও পরিবারের নয়। ব্রাত্য বসুর দাবি, ‘নন্দীগ্রামের ভূমিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনে কোনও পরিবারের কথা শোনা যায়নি। আন্দোলন না করা লোকগুলো এসব বুঝতে পারেনি।’


নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের কৃতিত্ব কার? ভোটের আগে নন্দীগ্রাম দিবসে সেই দড়ি টানাটানি আরও উচ্চগ্রামে পৌঁছল। রবিবার নন্দীগ্রামের গোকুলনগর ও সোনাচূড়ায় ছিল দু’পক্ষের জোড়া কর্মূসচি। সকাল সাড়ে দশটায় তৃণমূল, এগারোটায় শুভেন্দু অধিকারী। মাত্র আধ ঘণ্টার ব্যবধানে নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানায় দু’পক্ষ। শহিদ স্মরণের সময়ও আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির দড়ি টানাটানির সাক্ষী থাকল নন্দীগ্রাম।


শুভেন্দু বলেন, ‘নন্দীগ্রামে যাওয়ার গেটটা খুলে দিয়েছিল বিজেপি। মনে রাখবেন, রাজ্যের ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করেছিল এনডিএ।’


পাল্টা ব্রাত্য বলেছেন, ‘বিজেপি কোনওকালে নন্দীগ্রামে ছিল না। এখন আমাদের লোক ভাঙিয়ে শরিক হতে চাইছে।’


গোকুলনগরের পর সোনাচূড়ায় ৫০ মিটার ব্যবধানে শহিদ স্মরণ করে তৃণমূল ও বিজেপি । ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে ব্রাত্য বসুদের উদ্দেশে ওঠে গো ব্যাক স্লোগান। অন্যদিকে, সোনাচূড়ায় শুভেন্দু অধিকারীর পৌঁছনোর আগে ‘গদ্দার’ লেখা পোস্টার লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ।


সোনাচূড়ায় শুভেন্দু অধিকারী আসার আগে শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন তাঁর ভাই দিব্যেন্দু। তিনি বলেন, ‘কেউ বা কারা ভাড়া করা লোক এনে রাজনীতি করছে। আমি সাংসদ হিসেবে আমন্ত্রণ পাইনি। শুভেন্দুবাবু নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে ছিলেন।’


পাল্টা তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন বলেছেন, ‘নন্দীগ্রামের মানুষ জানেন কারা আন্দোলনে ছিল।’


গত ১৮ জানুয়ারি তেখালির সভা থেকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে এদিন তিনি ট্যুইট করেন, ‘শ্রদ্ধা জানাতে ও আমার নন্দীগ্রামের ভাই-বোনদের উৎসাহে আমি এবার নন্দীগ্রাম থেকেই ভোটে লড়ছি। এই ঐতিহাসিক স্থলে প্রার্থী হয়েছি আমি। বাংলা-বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের সুযোগ পাওয়া গর্বের বিষয়।’


নন্দীগ্রাম দিবসে বিজেপি ও তৃণমূলের এই আকচাআকচির মধ্যেই নিজের মতো করে জমি তৈরির চেষ্টায় সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের। নন্দীগ্রামের আমদাবাদে বাড়ি বাড়ি প্রচার করেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী।