সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: এবারের বিধানসভা নির্বাচনে হয়ত সবথেকে ধনী প্রার্থী করণদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বিনয় দাস। নির্বাচন দফতরে হলফনামায় তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৬৫৪ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে ভোটে দাড়ালেও কোনওবারই তিনি জিততে পারেন নি। তবুও ভোট দাঁড়ান। ভোটে দাঁড়ানোই তাঁর শখ ও নেশা।


তিনি নির্দল প্রার্থী। থাকেন ভাড়া বাড়িতে। কিন্তু পৈতৃক সূত্রে তাঁর একাধিক বাড়ি আছে। আবার তাঁর সাধারণ জীবনযাত্রা। তবে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা বিনয়কুমার দাস সাড়ে ৬০০ কোটিরও বেশি টাকার সম্পত্তির মালিক। 


বিনয় দাস। বয়স ৮১ বছর। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। মালদা জেলায় তাঁর পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। ১৯৬৫ সালে তিনি ডিষ্টিংশন মার্কস নিয়ে বিএসসি পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি আইনও পাশ করেন। নিজের জেলা অর্থাৎ মালদা জেলা শাসক দফতরে তিনি আপার ডিভিশন ক্লার্ক পদে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিনয়বাবু মালদা জেলা শাসক দফতরে কর্মরত থাকার পর উত্তর দিনাজপুর জেলা শাসক দফতর রায়গঞ্জে বদলি হয়ে আসেন। রায়গঞ্জে বদলি হয়ে আসার পর কর্নজোড়া কালীবাড়িতে নিজের বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন। মালদা জেলায় থাকাকালীনই ভোটে দাঁড়ানো ছিল তার শখ। সেই শখ থেকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবু বরকত গনিখান চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ৯ হাজার। কোনও রকম প্রচার ছাড়াই মালদা জেলার জাদরেল কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে লড়ে নয় হাজার ভোট পাওয়াও ভোটে দাঁড়ানোর জন্য তাঁকে আরও উৎসাহিত করেছিল। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকবার জেলা পরিষদের প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রায় ২১ বছর আগে চাকরি জীবন থেকে অবসর নেন বিনয়বাবু। শ্রমজীবি মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে মার্কসিষ্ট কমিউনিষ্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া( এম সি পি আই) দলে যোগ দেন। সেই দল থেকেই গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি  প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন।  


গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রবল ঝড়ের মধ্যেও তিনি দশ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। এম সি পি আই রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি না থাকায় তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। বিনয় দাসের স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কর্নজোড়া কালীবাড়িতে দোতলা বাড়িতে তাঁর সবসময়ের সঙ্গী কুকুর এবং বেড়াল। তাদের নিয়েই এখন তাঁর দিন কাটে। বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। উত্তর দিনাজপুর জেলায় ষষ্ঠ দফায় ভোট। আগামী ২২ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুর জেলায় ভোট। রায়গঞ্জ এবং করণদিঘি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিনয় দাস। বিনয়বাবু হলফনামায় তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন ৬৫৪ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা। এই বিপুল পরিমান সম্পত্তি হলফনামায় দেখায় জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিনয়বাবুর জীবনযাত্রা একদম সাদামাটা। বিপুল পরিমান সম্পত্তির অধিকারি ব্যক্তি নির্বাচনে জয়ী হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবেন। সাধারন মানুষের এমন ভাবনাকে বিনয়বাবু ভেঙে দিয়ে জানিয়েছেন, নির্বাচনে এক টাকাও খরচ করবেন না। বন্ধুবান্ধবরা স্বেচ্ছায় ভালোবেসে তাঁর হয়ে প্রচার করতে আবেদন জানিয়েছেন। প্রচার করার জন্য কাউকে এক কাপ চাও খাওয়াবেন না তিনি। নির্বাচনে অর্থ খরচ না করে কেন তিনি প্রতিবার ভোটে দাঁড়ান?  এই প্রশ্ন করতেই বিনয়বাবুর সোজাসুজি জবাব ভোটে দাঁড়াতে তাঁর ভাল লাগে। ভোটে দাঁড়ানো তাঁর শখ। সেই শখ থেকেই তিনি ভোটে দাঁড়ান। হারা জেতা তাঁকে কোনও প্রভাব ফেলে না।