অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও দীপক ঘোষ, কলকাতা: বিধানসভা ভোটে যে ওয়ার্ড লিড দেবে, সেখানে উন্নয়নের জন্য দেওয়া হবে স্পেশাল প্যাকেজ। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের নির্বাচনী বৈঠকে ফিরহাদ হাকিম এমনই প্রস্তাব দেন বলে সূত্রের দাবি। এনিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছে বিজেপি।
বিধানসভা ভোটে যে ওয়ার্ডে লিড, সেখানে উন্নয়নের জন্য এক কোটির স্পেশাল প্যাকেজ। ভোটের মুখে ভোকাল টনিক দিতে গিয়ে, ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরদের এমনই প্রস্তাব দিলেন ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূল সূত্রে এমনটাই দাবি।
আর যা ঘিরে জোরাল বিতর্ক। শুক্রবারই ২৯৪টি আসনের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে দিতে পারে তৃণমূল। তার আগে বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর বা ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের শীর্ষনেতারা। সূত্রের দাবি, সেখানেই পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম প্রস্তাব দেন, সামনেই বিধানসভা ভোট। তারপর কলকাতা পুরসভার ভোট হতে পারে। এখন ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যে ওয়ার্ডে ভাল ফল হবে, সেখানে উন্নয়নের জন্য এক কোটি টাকা করে স্পেশাল প্যাকেজ। কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ববিদা বলেছেন স্পেশাল প্যাকেজ থাকবে...৷’’
ফিরহাদ হাকিম অবশ্য তাঁর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অন্য যুক্তি দিয়েছেন। ভোটের মুখে এধরনের মন্তব্য এরাজ্যে একেবারেই নতুন নয়। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে একই রকম মন্তব্য করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক ও মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ২০১৮ সালে পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন শুভেন্দু অধিকারীই জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি মমতাদিকে বলেছি সব আসনেই আমি তাঁকে উপহার দেব। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস, কেউই কোনও আসন পাবে এখানে। আপনাদের সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে...নির্বাচনে যে পঞ্চায়েত বিরোধী শূন্য করতে পারবে, আমি এইচডিএ চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী বলছি, তারা এক বছরের জন্য ৫ কোটি টাকা পাবে ৷’’
এর ঠিক একছর পর একই সুর শোনা যায় পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির গলায়। তিনি বলেন, ‘‘৫ হাজার লিড দিতে পারে, তাহলে ১ কোটি টাকার কাজ অতিরিক্ত দেওয়া হবে। ৩ হাজার লিড দেয়, তাহলে ৫০ লক্ষ। ২ হাজার হলে ৩০ লক্ষ। ১ হাজার হলে ১০ লক্ষ টাকার। লিড দিতে না পারলে নিজে রিজাইন করব, আপনাদের কী হবে, আপনারা ঠিক করে নিন ৷’’
শুভেন্দু অধিকারী এবং জিতেন্দ্র তিওয়ারি দু’জনেই এখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে। আর সেই বিজেপি-ও ভোটের মুখে ফিরহাদ হাকিমের স্পেশাল প্যাকেজের প্রস্তাবকে হাতিয়ার করে সুর চড়াতে দেরি করেনি। সমালোচনায় সরব সিপিএম-ও। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯০টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল তৃণমূল ৫০টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর।