আশাবুল হোসেন ও ঋত্বিক প্রধান, পূর্ব মেদিনীপুর ও কলকাতা: তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ রাখলে, তাঁকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। ফাঁসানো হবে মিথ্যে মামলায়। ভোটের মুখে বিস্ফোরক দাবি করলেন তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী। পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বোঝাই যাচ্ছে ওনার দেহ আর হৃদয় কোথায়। ।


 


শিশির অধিকারী অভিযোগ করেছেন,   বলা হয়েছে কেউ আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখলে বা আমার বাড়িতে এলে তাঁদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হবে, দল থেকে তাড়ানো হবে।


বিধানসভা ভোটের মুখে নিজের দলের বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী।আর এতেই অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের ফাটল আরও চওড়া হল।শান্তিকুঞ্জের মেজ ছেলে শুভেন্দু ও ছোট ছেলে সৌমেন্দু অধিকারী শিবির বদলে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।এরপর থেকেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে অধিকারী পরিবারের।ইতিমধ্যেই জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে, চেয়ারম্যান করা হয়েছে শিশির অধিকারীকে।


তিনি ও তমলুকের সাংসদ তথা শুভেন্দুর আরেক ভাই দিব্যেন্দু এখনও খাতায় কলমে তৃণমূলে থাকলেও, দলের কোনও কর্মসূচিতেই তাঁদের দেখা যায় না! এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের মুখে কাঁথির তৃণমূল সাংসদ তথা শুভেন্দু অধিকারীর বাবার চাঞ্চল্যকর দাবি ঘিরে নতুন বিতর্ক দানা বাঁধল। 


শিশির অধিকারী বলেছেন,  পূর্ব মেদিনীপুরে দলে কাদের প্রার্থী করা হতে পারে এনিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি, উল্টে বলা হয়েছে কেউ আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখলে বা আমার বাড়িতে এলে তাঁদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হবে, দল থেকে তাড়ানো হবে। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী হবেন এটা বহু চর্চিত, এনিয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলব না।


দলীয় সাংসদের এ হেন বিস্ফোরক অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল।তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বোঝাই যাচ্ছে ওনার দেহ আর হৃদয় কোথায়। উনি যেন দু’পা বাড়িয়ে আছেন। 
রাজনীতিতে পোড় খাওয়া শিশির অধিকারী দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি।কংগ্রেস ও তৃণমূল মিলিয়ে কাঁথি পুরসভায় সবচেয়ে বেশিদিন চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।কাঁথি দক্ষিণ থেকে দু’বার ও এগরা থেকে একবার বিধায়ক নির্বাচিত হন শিশির অধিকারী।



২০০৯ থেকে তৃণমূলের টিকিটে কাঁথির তৃণমূল সাংসদ তিনি।কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন শিশির অধিকারী। রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি বলেছেন, উনি এক বছর ধরে কোনও দলীয় কর্মসূচীতে যাচ্ছেন না। উনি কেন দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি? মিথ্যে মামলায় শুভেন্দু অনেককেই ফাঁসিয়েছেন। সেকথা ভেবে মনে করছেন আমরাও হয়তো তা করব।



শুভেন্দু অনুগামী ও বিজেপি নেতা কণিষ্ক পণ্ডা বলেছেন, শিশির অধিকারী রাজনীতির গুরু, উনি সবার অভিভাবক। অখিল গিরিও ওনার হাত ধরে এসেছেন, সেই জায়গায় শিশিরকে অপমান করে বোঝালেন, দলটা লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।


শুভেন্দু অধিকারী শেষপর্যন্ত নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে বাবা শিশির, ছেলের হয়ে প্রচারে নামেন, না কি দলনেত্রীর বিরুদ্ধে চুপ করেই থাকেন, সেটাই দেখার।