কলকাতা : একদিকে চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, অন্যদিকে ভোট পর্বের মাঝে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বেড়েই চলেছে হিংসাত্মক পরিস্থিতি। 'খেলা হবে'র নামে নিত্যদিন চলছে শাসক-বিরোধী লড়াই। করোনাকালের মাঝেই বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ দফা নির্বাচন হবে রাজ্যে। যেখানে চার জেলার ৪৩টি কেন্দ্রের ভাগ্য নির্ধারণ।



রাজ্যে নির্বাচনের মধ্যেই বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বঙ্গে করোনা বৃদ্ধির জন্য বিজেপিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে গেরুয়া ব্রিগেড। পশ্চিমবঙ্গে করোনার গ্রাফ বৃদ্ধির জন্য পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নিয়েছেন বিজেপির নেতারা। রাজ্যের নির্বাচনী পরিস্থিতি বলছে, বাকি দফায় করোনা ইস্যুকেই হাতিয়ার করবে সব দল। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ দফার নির্বাচন হতে চলেছে রাজ্যে।

নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, আগামীকালের নির্বাচনে ৪৩টি কেন্দ্রের ৩০৬জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ। যাদের মধ্যে রয়েছেন ২৭ জন মহিলা। নির্বাচন হবে উত্তর দিনাজপুরের ৯টি, পূর্ব বর্ধমানের ৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে। এছাড়াও ভোট হবে নদিয়ার ৯টি ও উত্তর ২৪ পরগণার ১৭টি কেন্দ্রে।

ষষ্ট দফায় ভোটারের সংখ্যা সব মিলিয়ে ১.০৩ কোটি। যার মধ্যে মহিলা ভোটার রয়েছেন ৫০.৬৫ লক্ষ। বাকি ২৫৬ জন রয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। এবারের নির্বাচনে রয়েছে ১৪,৪৮০টি পোলিং স্টেশন। নির্বাচনে উন্নয়ন ও বেকারত্বই হতে চলেছে মূল ইস্যু। যার ওপর ভিত্তি করে ভোট দেবেন ষষ্ট দফার ভোটাররা। রাজ্যের ভৌগলিক চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে, অন্যান্য জেলার তুলনায় পূর্ব বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগণা কিছুটা উন্নয়নের মুখ দেখেছে। কিন্তু এখানে শাসক দলের চিন্তার কারণ বেকারত্ব।

তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে কাটমানি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট ও তোষণের রাজনীতিকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি। এক্ষেত্রে শাসক দলের বিরুদ্ধেবিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার হাওয়া। পাল্টা বসে নেই তৃণমূল। প্রচারে দুয়ারে সরকার , স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী প্রকল্পকে তুলে ধরছে ঘাসফুলের নেতারা।

ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে ৪৩টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। সংয়ুক্ত মোর্চার অধীনে ৪৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রসে লড়ছে ১২টি আসনে। সিপিআইএম পেয়েছে ২৩টি ও ফরওয়ার্ড ব্লক লড়ছে ৪টি আসনে। বাকি ২টি আসনে লড়াই করছে সিপিআই। আগামীকালের বঙ্গ নির্বাচনে নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষায় নেমেছে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)। ৩৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তারা।

আগামী দফার ভোটে সবথেকে ওজনদার প্রার্থী বিজেপির মুকুল রায়। কৃষ্ণনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। অতীতে তৃণমূলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির ভোট স্ট্র্যাটেজিস্ট। পদ্মশিবিরে গিয়ে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন তিনি। অতীতে রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়াও কেন্দ্রের রেলমন্ত্রীর দায়িত্বপদ সামলেছেন মুকুল রায়। তাঁর বিরুদ্ধে টলিউড অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল।

ষষ্ঠ দফায় দমদম উত্তর থেকে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তাঁর বিরুদ্ধে এই কেন্দ্রে অর্চনা মজুমদারকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এখানে সিপিআইএম-এর প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য। রায়গঞ্জে এবার বড়সড় লড়াইয়ের মুখে। এখানে সিটিং কংগ্রেস এমএলএ মোহিত সেনগুপ্তর বিরুদ্ধে কানাইয়া লাল অগরওয়ালকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। পিছিয়ে থাকেনি বিজেপি। কৃষ্ণকল্যাণীকে ভোটয়ুদ্ধে নামিয়েছে গেরুয়া ব্রিগেড। এই প্রথমবার তৃণমূলের টিকিটে নিজের ভাগ্য পরীক্ষায় নামছেন নির্দেশক-প্রযোজক রাজ চক্রবর্তী। ব্যারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। 'ধুন্ধুমার' ভোট যুদ্ধ হবে হাবড়াতে। যেখানে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির রাহুল সিনহা।

রাজ্যে ইতিমধ্যেই পাঁচ দফা নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। আগামীকাল ষষ্ঠ দফার পর ২৬ ও ২৯ এপ্রিল রয়েছে সপ্তম ও অষ্টম দফা। ২ মে ভোট গণনার দিন।