কেন, সে প্রসঙ্গে জয়দীপ জানাচ্ছেন, ‘ভারতীয় হকি টিমের এই গল্পটা আমার অনেক দিন ধরেই বলার ইচ্ছে ছিল। ‘বান্টি অউর বাবলি’ হয়ে যাওয়ার পর যশরাজ ফিল্মসের কর্ণধার আদিত্য চোপড়া যখন জানতে চাইলেন আমি এরপর কেমন গল্পের কথা ভাবছ, তখনই ‘চক দে’-র আইডিয়াটি বলে ফেলি। গল্পটা শুনে আদি বলেন এই গল্পটা ফিল্ম হলে দেশের মানুষের সঙ্গে মহিলা অ্যাথলিটদের অন্দরমহলের একটা ব্রিজ তৈরি হবে। আদি জানান, এটা অত্যন্ত লজ্জার যে ওই হকি দলটার ভিতরকার এমন সব ঘটনা খুব কম মানুষই জানেন। তারপরই শুরু হয়ে যায় ফিল্মের জন্য গল্পটা লিখে ফেলার কাজ।‘
এ ব্যাপারে মনে করা যেতে পারে যে জয়দীপ যে সময়ে নতুন গল্প এনে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা গড়তে শুরু করেছেন, ঠিক তেমনই একজন অন্যরকম পরিচালক হিসেবে সে সময়ে নাম করতে শুরু করেছেন সিমিত আমিন। এই দুই তরুণ তুর্কীকে জুড়ে দেন আদিত্য চোপড়া। জয়দীপের গল্পকে পর্দায় রূপদানের দায়িত্ব তিনি তুলে দেন সিমিতের হাতে।আর এই বন্ধনটাই ক্লিক করে যায়।
সিমিতের প্রসঙ্গে জয়দীপ জানিয়েছেন,’ সিমিত আর আমি অনেকদিনের পুরনো বন্ধু। সেই রামগোপাল ভার্মার অফিসে আমি যখন ‘কোম্পানি’ লিখছি, ও তখন ‘ভূত’-এর এডিটিংয়ের কাজ সামলাচ্ছে। ‘আব তক ছাপ্পন’ দেখার পর আদি সিদ্ধান্ত নেন যে সিমিতই ‘চক দে’ পরিচালনা করবে। সেই মতো কথা হল। ছবিটার কাহিনি নিয়ে আদি আর সিমিতের মধ্যে এতোটাই আত্মবিশ্বাস দেখেছিলাম যে আমার কাজ করতে খুব সুবিধা হয়েছিল।আমার মনে হয়েছিল আমার গল্পটা সেফ-হ্যান্ডে যাচ্ছে।‘
জয়দীপ সাহনি
সংবাদমাধ্যমে ফিল্ম-বোদ্ধা এবং বক্স-অফিস বিশেষজ্ঞদের বার বারই একটা কথা বলতে দেখা গিয়েছে যে ‘চক দে’ একটা মাইলস্টোন ভারতীয় ছবি হলেও ছবিটা সময়ের খানিকটা আগে চলে এসেছিল। কয়েক বছর এলে বক্স-অফিস উপচে পড়ত সাফল্যে।এই প্রসঙ্গে জয়দীপের বক্তব্য, ‘অনেকে বলে বটে ছবিটা সময়ের আগে এসেছিল, কিন্তু আমি ঠিক ওভাবে বিচার করতে পারি না। দর্শক দিনে দিনে আরও ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। নতুন একটা বিষয়ের উপর ছবি যে অন্য রকম আনন্দ দিতে পারে সেটুকু ভেবে দেখারও যেন সময় নেই। কোন বিষয় নিয়ে যে ছবির গল্প বানাবো তা বাছতে গিয়ে আমরা গল্পকাররাও প্রায়ই চিন্তায় পড়ে যাই। মনে রাখতে হবে একজন গল্পকারের কাছে তিনি কোন বিষয়টা নিয়ে গল্প লিখছেন সেটা খুব বড় ব্যাপার। গল্পকার যদি কোনও বিষয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে লিখতে শুরু করেন, তবে একটা দিশা তিনি ঠিক পেয়ে যান কাহিনির।‘
এই বছরই বলিউডে ২০ বছর পূর্ণ হল জয়দীপ সাহনির। ২০০০ সালে তিনি রামগোপাল ভার্মার ‘জঙ্গল’ ছবির কাহিনি লিখেছিলেন। ক্রমে ২০০৫ সালে ‘বান্টি অউর বাবলি’ থেকে শুরু করে অনেকগুলো বছর কাজ করলেন যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গেও। এই জার্নিটা সম্পর্কে জয়দীপ বলছেন, ‘আমি বরাবরই কম্পিউটারে টাইপ করে গল্প বা চিত্রনাট্য লিখি। প্রথম ছবির কাজ করার সময় আমি যখন ঘরের পিছন দিকে বসে লিখতাম অনেকেই ভাবতো আমি বুঝি ইউনিটের কোনও ডিটিপি অপারেটর। এখন আমার ভাবতে ভালোলাগে যে ইন্ডাস্ট্রিতে এভাবে একেবারে পিছনের সারিতে বসে থাকা গল্প-স্ক্রিপ্ট এখন গুরুত্বের দিক দিয়ে অনেকখানি সামনে চলে এসেছে। স্ক্রিপ্ট এখন ছবির প্রাণ। এটা একজন চিত্রনাট্যকারের কাছে খুব আনন্দের তো বটেই!‘
জয়দীপের সংযোজন, ‘নানা পরিবেশ-পরিস্থিতির ব্যাকগ্রাউন্ডে, নানা আঞ্চলিক ভাষা, এমনকী স্ল্যাং ডায়ালগে ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের ফিল্ম লিখে এই দু দশকে যে খুব এনজয় করেছি সেটা সত্যি। নিজের তৈরি নানা চরিত্র, ডায়ালগ যখন মানুষের ভালো লেগেছে, তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি। মনে হয়েছে পরিশ্রম সফল।‘