পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা: পরিবারের ‘অনার’, মানে সম্মানই তো বজায় আছে। তাহলে আর ‘কিলিং’ কেন? জাতপাতের লড়াইয়ের মাঝে পড়ে ভালবাসার রক্তক্ষরণ আটকাতে বিয়ের আসরে এই কথাই জোর গলায় বলে ওঠে অদিতি। এক বিরাট হিমশৈলের গায়ে অদিতির এই কথাই চিড় ধরায়। বরফ গলে। উত্তাল সমুদ্র শান্ত হয়। কিছুটা পরিস্থিতির চাপে পড়ে হলেও বিয়েতে সম্মতি দেন দুই মেরুর দুই পরিবারের কর্তারা। এখানেই গল্পের মধুরেন সমাপয়েৎ।


বিক্রান্ত মেসি, কৃতী খারবান্দা অভিনীত ছবি ‘চৌদা ফেরে’ এই ক্লাইম্যাক্সের দিকেই যে কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তা বোঝা গিয়েছে ছবির শুরুতেই। জি ফাইভে শুক্রবার মুক্তি পেল ‘চৌদা ফেরে’। ছবিটির কাহিনি এগিয়েছে সঞ্জয় আর অদিতির ভালবাসাকে ঘিরে। সঞ্জয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত, আর অদিতির চরিত্রে কৃতী। সঞ্জয় রাজপুত পরিবারের ছেলে। অন্যদিকে জাঠ পরিবারের মেয়ে অদিতি। কলেজে ঢুকে সিনিয়র অদিতির প্রেমে পড়ে সঞ্জয়। তারপর ধীরে ধীরে এক মিষ্টি মোড়কে তাঁদের সম্পর্ক এগিয়ে যায়। তাঁরা দু’জনেই শুরু থেকে জানত যে, তাঁদের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেবে না। সেই মতোই নিজেদের পেশাদার জীবনে বিদেশে পাড়ি দিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্নও বুনে ফেলেছিল দু’জনে। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের পথেই বাধা হয়ে দাঁড়াল সঞ্জয়ের পরিবারে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা। সঞ্জয়ের দিদি পালিয়ে গিয়ে অন্য জাতের এক ডাক্তারের সঙ্গে ঘর বাঁধে। ব্যস, অনার কিলিংয়ের জন্য প্রস্তুতি চলতে থাকে সঞ্জয়ের পরিবারে। সঞ্জয়কেও ডেকে পাঠানো হয় বাড়িতে। বাড়ি পৌঁছেই সঞ্জয় বুঝতে পারে, জোর করে তাঁর বিয়ে দেওয়ার পুরো প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন তাঁর বাবা। এরপর নাটকের মঞ্চে হঠাৎ পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পায় সঞ্জয়। নকল পরিবার সাজিয়ে দু’তরফে দু’বার বিয়ের পরিকল্পনা করে ফেলে সে। তাঁদের এই বিয়ের পরিকল্পনাকে ঘিরেই নানা জট-জটিলতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায় ছবিটি। 


পরিচালক দেবাংশু সিং কমেডির মোড়কে ছবিটি বানাতে চেয়েছেন। কিন্তু চিত্রনাট্যে সূক্ষ্ণ হাস্যরসের অভাব প্রকট হয়ে পড়েছে। ছোট ছোট যে ঘটনাগুলোর নির্মাণ হয়েছে দর্শকদের হাসির খোরাক জোগানোর জন্য, সেই ঘটনাগুলির ভিত্তি বড়ই দুর্বল। আর চিত্রায়ণও বেশ কমজোরি। ‘অনার কিলিং’-এর মতো ঘটনার অবতারণা যে ভাবে করা হয়েছে এই ছবিতে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। পারিবারিক সম্পর্কের ছবিও জোরালো নয়। সঞ্জয় এবং অদিতিকে বাদ দিলে, ছবিটির অন্য সবক’টি চরিত্রই যেন ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। বাস্তবের সঙ্গে যাঁদের কোনও সম্পর্কই নেই। প্রবল পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সঞ্জয়ের মা চিরজীবন নিজের ইচ্ছে অনুচ্চারিত রাখলেও, সঞ্জয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে নিজের স্বামীকে সেই মোক্ষম কথাটি বলেই বসেন। পরিবারের সবাইকে খুন করে একলা কোন ‘সম্মান’ নিয়ে বাঁচতে চান তিনি? কিন্তু এই প্রবল প্রতিবাদও ঘটনার অতিনাটকীয় ঘনঘটায় মনে দাগ কেটে যেতে ব্যর্থ হয়।


অভিনয়ের দিক দিয়ে বিক্রান্ত, কৃতী, বিনীত সিংয়ের পারফরম্যান্স নজর কাড়ে। কিন্তু চিত্রনাট্য এত দুর্বল হলে অভিনেতারাই বা কী করবেন? বিশেষত, কর্মসূত্রে বিদেশে গিয়ে নিজেদের পরিবার শুরু করার যে সহজ রাস্তা ছিল, সেই রাস্তায় না হেঁটে কেন এক বিষম ফর্মুলায় সম্মতি দিল সঞ্জয় আর আদিতি, তা কিছুতেই বোধগম্য হয় না। কল্পনাতেও এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া কঠিন। এ যেন গল্পের গরু মাটিতে ঘাস না পেয়ে গাছে চড়ে বসেছে। তাঁরা লিভ-ইন করার সাহস রাখেন, কিন্তু পরিবারের অমতে বিয়ে করার সাহস রাখেন না? এই প্রশ্নই সারাক্ষণ ঘুরপাক খেয়েছে মনোজ কালওয়ানির লেখা ‘চৌদা ফেরে’-র কাহিনিকে ঘিরে। রাজীব বি ভাল্লা আর জ্যাম এইটের সুরে ছবির গানগুলি কিছু কিছু জায়গায় একঘেয়েমি কাটিয়ে কিছুটা অক্সিজেন জুগিয়েছে।