কলকাতা: আগামী বছর ৪০-এ পা রাখবেন তিনি। নাহ, বয়সে নয়, নায়ক হিসেবে। কিন্তু হালকা সোনালি কাজের পাঞ্জাবির ওপর যখন গাঢ় নীল জওহর কোট পরে উৎসব বাড়ির সবুজ মোড়া লনে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন তিনি, তখন তাঁর বয়স আন্দাজ করার সাধ্য কারও নেই। ছবি মুক্তির আগে বাড়িতে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। সদ্য পুজো শেষ করে উঠেছেন তখন, কপালে তখনও লেগে রয়েছে হোমের ফোঁটা। রোদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে তাঁর তারকাদ্যুতি। স্বভাবচিত হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন, আর তারপরে শুরু হল সাক্ষাৎকার। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের (Prosenjit Chatterjee) সঙ্গে।
আজই মুক্তি পেয়েছে তাঁর নতুন ছবি তাঁর নতুন ছবি 'কাবেরী অন্তর্ধান' (Kaberi Antardhaan)। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের (Kaushik Ganguly)-র পরিচালনায়। এর আগেও জ্যেষ্ঠপুত্র (Jyesthoputro) বা দৃষ্টিকোণ (Dristikon)-এ পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন অভিনেতা। এই ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? এবিপি লাইভের প্রশ্নের উত্তরে প্রসেনজিৎ বললেন, 'কৌশিকের সঙ্গে কাবেরী অন্তর্ধান আমার চতুর্থ ছবি। কিন্তু কেবল ছবি না, আমার সঙ্গে দীর্ঘদিনের ভাল সম্পর্ক ওর। দিন দিন সেই বোঝাপড়াটা আরও বাড়ছে। আমি ওর দিকে তাকালে বুঝতে পারি ও কি চায় আর একটা শটের পরে কৌশিকও আমার মুখ দেখে বুঝতে পারে বুম্বাদা আরও একটা শট চায়। এই সম্পর্কটা যেন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মতো। সেখানে মান অভিমান থাকে, ভালবাসা থাকে। আসলে আমরা তো একটা জিনিস সৃষ্টি করছি। আর এই সবটাই সেই কাজটাকে ভাল করার জন্য। ঠিক যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ঝগড়া অশান্তি হয় সংসারটা ভাল রাখার জন্যই।'
আরও দেখুন: পাড়ায় রোজ পাওয়া যেত লাশ, দীর্ঘদিন স্কুলে যেতে পারেননি প্রসেনজিৎ
বাবা সাফল্যের শীর্ষে, অন্যদিকে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে ছেলে মিশুক ওরফে তৃষাণজিৎও। পড়াশোনার সূত্রে বাইরে থাকতে হলেও বাড়ি ফিরলে একসঙ্গে সময় কাটান বাবা-ছেলে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বাবা হিসেবে মিশুককে এমন কী দিতে চান যা নিজে কখনও বাবার থেকে পাননি? বুম্বাদার সপ্রতিভ উত্তর, 'বাবার থেকে পাইনি এমন কিছু নেই। সব ঘরে ঘরেই বাবা ছেলের সম্পর্ক একই রকম হয়, আলাদা করা যায় না। তবে আমি যে আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, চেষ্টা করব মিশুককে যেন ওই কষ্টটা না করতে হয়। কিছুদিন আগেও মিশুক বাড়ি এসেছিল, আমায় বলল ও কোনও ছবির কাজে সহকারী হিসেবে থাকতে চায়। আমি বললাম, 'তাহলে তোমাকে প্রযোজক এডিটরের জন্য যে গাড়িটা দেবেন তাতে করেই যেতে হবে। তুমি যেখানেই যাচ্ছো, সেখানে জানবে তুমি বুম্বাদার ছেলে। কিন্তু তোমায় জানতে হবে আমাদের টেকনিশিয়ান বা পর্দার পিছনে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা ঠিক কতটা লড়াই করেন। একজন তারকার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইন্ডাস্ট্রিকে দেখলে চলবে না, শিকড়টা দেখতে হবে তোমায়। মিশুক ওই শিকড়টা জানুক, বুঝুক আগে, তার পরে কেরিয়ার বেছে নিক।'
মিশুক তারকাপুত্র, প্রসেনজিৎও। কিন্তু তারপরেও কি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছনোটা সহজ ছিল? একটু হেসে 'ইন্ডাস্ট্রি'-র উত্তর, 'একেবারেই না। আর সেই কারণেই এখন এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। খুব সোজা রাস্তা কারও থাকে না। ব্যাপারটা অনেকটা খাবার খাওয়ার মতো। খিদে পেলে সামনে রাখা খাবারের স্বাদ একরকম লাগে। কিন্তু খিদে পেয়ে, সারাদিন খেটে খাবার জোগাড় পরে সন্ধ্যায় যে সামান্য খাবার পাওয়া যায়, তার তৃপ্তিই আলাদা।'