কলকাতা: ক্যামেরার পিছনে তিনি বেশ পরিচিত মুখ। তাঁর তৈরি ছবি সমালোচক থেকে দর্শক সকলেই খুব পছন্দ করেন। তবে তিনি চান, সিনেমার সঙ্গে জড়িত সমস্ত কিছুতে নিজেকে নিয়োজিত করতে। তাহলে অভিনয়ই বা নয় কেন? আর মঞ্চে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা যখন রয়েইছে! নিজের ছবিতেই এবার অভিনয় করবেন 'রসগোল্লা' ছবির পরিচালক পাভেল (Pavel)। এবিপি লাইভকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন, তাঁর অভিনয়ে আসার কারণ, জানালেন কীভাবে ছবির সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বভাবেও বদল এসেছে।
এবিপি লাইভ: আপনার পরিচালনা দর্শক পছন্দ করেন। এবার অভিনয়ে আসার মূল কারণ কী?
পাভেল: আমি ছোটবেলা থেকে থিয়েটার করতাম। ফলে অভিনয়টা আমার কাছে একেবারে নতুন নয়। আমি যখন নিজে ছবি তৈরি করি তখন অভিনেতাদের নিয়ে অভিনয়ের একটা ওয়ার্কশপ আমি নিজেই করাই। তাছাড়া একটা সিনেমা তৈরির পিছনে আরও যে সকল ডিপার্টমেন্ট কাজ করে, একজন পরিচালক হিসেবে সেই সব ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কেই খানিকটা করে জানতে হয়। আমার প্রধান দুটি দায়িত্ব লেখা ও পরিচালনা। আমি গানের লিরিক্সও লিখেছি বা লিখি। আসলে আমার সিনেমা সংক্রান্ত সমস্ত কিছু করতেই ভাল লাগে। কাল যদি আমি ক্যামেরার কাজ করি বা কোনও ফাইট সিক্যোয়েন্স কম্পোজ করি, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি সিনেমা নিয়ে বাঁচি, সিনেমা নিয়েই মরি।
আরও পড়ুন: Swastik Sanket Poster: প্রকাশ্যে পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের আগামী ছবি 'স্বস্তিক সংকেত'-এর পোস্টার
এবিপি লাইভ: আপনার 'মনখারাপ' (Monkharap) ছবির চরিত্রটি বেছে নেওয়ার কারণ কী?
পাভেল: 'মনখারাপ' ছবিতে আমার যে চরিত্রটি সেটা লিখতে লিখতে মনে হয়েছিল, 'আই শুড ডু ইট'। তারপর ভাবলাম এই চরিত্রের জন্য আরও একটু রোগা হওয়া দরকার। তখন আমি ওজন কমাই। ২৭ কেজি ওজন কমিয়েছি এই চরিত্রটার জন্য।
এবিপি লাইভ: চরিত্র সম্পর্কে আরও খানিকটা বিস্তারিত যদি জানানো যায়।
পাভেল: চরিত্র সম্পর্কে বলার সময় এখনও আসেনি। ছবি মুক্তি পেতে এখনও সময় আছে। তবে একটা কথা বলতে চাই। ছবির এই চরিত্রটার সঙ্গে বাস্তব জীবনে আমার একটা অসম্ভব মিল রয়েছে। আমাদের দু'জনেরই রেগে যাওয়ার সমস্যা আছে যাকে অ্যাঙ্গার ইস্যু বলে। আমি শান্তই এমনিতে। কিন্তু হঠাৎ করে রাগ হয়ে যায়। যদিও সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। সবচেয়ে বড় কথা এই চরিত্রটা লিখতে লিখতে আমার 'অ্যাঙ্গার ইস্যু' অনেকটা ঠিক হয়ে গেছে। কারণ 'মনখারাপ'-এ অঙ্কুশ (অঙ্কুশ হাজরা) যে সাইকোলজিস্টের চরিত্রটা করছে সেটা লিখেছি তো আমি। অর্থাৎ সে যে পদ্ধতিতে বাকিদের সুস্থ করবে সেগুলো আমিই ভাবছি। ফলে সেটা আমার নিজের জীবনে প্রচুর কাজে লেগেছে।
এবিপি লাইভ: অর্থাৎ ছবি তৈরির মাধ্যমে নিজেকেও নতুন করে পেয়েছেন?
পাভেল: একেবারে তাই। সেটাই তো সিনেমার সৌন্দর্য্য। সিনেমা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কখনও সেটা আমাদের বদলে দেয়, কখনও আমাদের জন্য সিনেমা বদলে যায়। আবার কখনও আমরা একে অপরকে বদলাই।
এবিপি লাইভ: অভিনয় কি তাহলে ফোকাসে?
পাভেল: এখন অভিনয় করছি বটে। তার মানে সারাক্ষণ অভিনয় করব তা নয়। আমার মূল কাজ লেখা ও পরিচালনা করা। এবং আমি সেটা করতেই ভালবাসি। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় অভিনয় করে বেশি আনন্দ না গান লিখে। আমি সবসময় বলব লেখা এবং অবশ্যই পরিচালনা।
এবিপি লাইভ: অনেকক্ষেত্রেই পরিচালকরা অভিনয়ে আসেন কিন্তু সবক্ষেত্রে দর্শকেরা যে তাঁদের সাদরে গ্রহণ করেন এমন নয়। সেই নিয়ে ভয় আছে?
পাভেল: না। একদমই ভয় নেই। আপনাকে একটা কথা বলি। এখানে আমাকে সকলে খুব ভালবাসেন। আমি প্রচণ্ড সৌভাগ্যবান। আমি তো বাইরে থেকে এসে কাজ শুরু করেছি! আমি প্রথম ছবির প্রযোজক পেয়ে গেছি মাত্র ২৪ বছর বয়সে। প্রথম ছবি মুক্তি পেল 'বাবার নাম গান্ধীজি'। প্রথম ছবির রিলিজের দিনই বুম্বা দা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়), জিৎ দা (জিৎ) একসঙ্গে ছবি দেখে গেছেন। ছবির দুর্দান্ত রিভিউ বেরোয়। বম্বেতে মহেশ ভট্ট ডেকে পাঠান। পরের যে ছবি করতে চেয়েছিলাম, 'রসগোল্লা', সেটাই করতে পেরেছি। শিবু দা (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়), নন্দিতা দি (নন্দিতা রায়) ভালবেসে আমাকে এত বড় বাজেটের ছবি করতে দিয়েছেন। সেই ছবিও লোকের এত পছন্দ হয়েছে। লোকজন আমাকে খুব ভালবাসেন বলে আমার বিশ্বাস। তাই অভিনয় দেখেও দর্শকের সেই ভালবাসাটা থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।
এবিপি লাইভ: পরবর্তীকালে সুযোগ এলে অন্য পরিচালকের হয়ে অভিনয় করবেন?
পাভেল: যদি আমার নিজের ছবির কাজ না থাকে এবং যদি দেখি যে সেই চরিত্রটি আমি পারব করতে তাহলে করতে পারি।
এবিপি লাইভ: 'মনখারাপ' ছাড়াও আপনার 'কলকাতা চলন্তিকা' (Kolkata Chalantika) ছবিতেও অভিনয় করছেন?
পাভেল: হ্যাঁ। তবে ওই চরিত্রটি খুবই ছোট। গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স বলা যেতে পারে। যদিও 'কলকাতা চলন্তিকা' ছবিটাই আগে মুক্তি পাচ্ছে। ছোট হলেও খুব ভাল একটি চরিত্র। একজন কবির চরিত্রে রয়েছি সেখানে। যেহেতু নিজে লেখালিখি করি আমি তাই এই চরিত্রটা করতে বিশেষ অসুবিধেই হয়নি। দীর্ঘদিন 'লিটল ম্যাগাজিন'ও করেছি। আমার ম্যাগাজিনে সেই সময় জয় গোস্বামী, শ্রীজাত দা (শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়), তসলিমা নসরিন লিখেছেন। ফলে এই চরিত্রটি করতে করতে সেই সময়কার কথা মনে পড়ছিল।
মুক্তির অপেক্ষায় পাভেলের 'কলকাতা চলন্তিকা' ও 'মনখারাপ'। দুটি ছবিতেই অভিনয় করেছেন পরিচালক। এবার দেখার দর্শক তাঁর এই নতুন অবতার কতটা সাদরে গ্রহণ করে।