কলকাতা: কুমোরটুলি বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সারি সারি প্রতিমা, আর মাটি মাখা পুরুষের হাত। একচেটিয়া এই ধারণা বদলেছিলেন কুমোরটুলিরই কয়েকজন মহিলা শিল্পী। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিমা গড়ে চলেছেন তাঁরাও। নারীর হাতে যদি প্রতিমার রূপদান হতে পারে, তবে সেই হাতেই প্রাণদান কেন নয়? রূপোলি পর্দায় এক মহিলা পুরোহিতের গল্পকে তুলে ধরেছিল 'ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি'।


করোনা পরিস্থিতি পেরিয়ে ইতিমধ্যেই দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছে অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি। শুধু কি তাই! ইন্ডিয়ান প্যানোরোমা অ্যাওয়ার্ডে এই বছরের মনোনীত মাত্র ২টি ছবির মধ্যে একটি হল 'ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি'। এটিই তালিকার একমাত্র নারীকেন্দ্রীক বাংলা ছবি। সাফল্যের পিছনে জড়িয়ে ছিল কত কী অজানা চ্যালেঞ্জ। উচ্ছাস প্রকাশের ফাঁকে ফাঁকেও অফ ক্যামেরার গল্প শোনালেন শর্বরী ওরফে ঋতাভরী চক্রবর্তী।

ইন্ডিয়ান প্যানোরোমা অ্যাওয়ার্ডের তালিকায় 'ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি' জায়গা করে নেওয়ায় 'খুব খুব খুব খুশি' ঋতাভরী। মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বললেন, 'অনেকগুলো ভালো ছবি ছিল প্রতিযোগিতায়। ব্রহ্মা জানেন সেগুলির তুলনায় স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি। তার ওপর পরিচালক, লেখক সবাই নতুন। সর্বোপরি এটা একটা নারীকেন্দ্রীক ছবি।  শিবপ্রসাদদা আর নন্দিতাদি (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়) অনেকটা ঝুঁকি নিয়েছিল এই ছবিটার জন্য। আমরা এর আগেই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলাম। আর ইন্ডিয়ান প্যানোরোমায় জায়গা করে নেওয়ার অর্থ ছবিটা বিশেষজ্ঞদের কাছেও সমাদৃত হয়েছে।’

শুধুই কি খুশি? ছবির বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট ভ্যালুর হিসেবনিকেশ, সুগম ছিল না 'ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি'-র পথ। ঋতাভরীর কথায় উঠে এল ক্যামেরার পিছনের গল্প। নায়িকা বলছেন, ‘এখনওনারীকেন্দ্রীক ছবি বানাতে গেলে অনেক হিসেবনিকেশ করতে হয়। সেইদিকটা ভাবলেও খারাপ লাগে। ভাবতে হয় যদি স্যাটেলাইট ভ্যালু কম আসে.. ছবিটা যদি না চলে..সেই জায়গা থেকে সাফল্য স্বীকৃতি সবই পেয়েছে। বাংলা ছবিতে এমন একটা বিষয়বস্তুকে তুলে আনার সাহসকে তো সবসময় সাধুবাদ দেব। এই ছবিটার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম ভাবলেই ভাল লাগে.. বরং বলব ছবিটা আমার কাঁধে ছিল এটাই আনন্দ দেয়। এই সময়ে দাঁড়িয়েও মেয়েদের স্যাটেলাইট ভ্যালুতে একটা ছবির ব্যবসা করা খুব কঠিন। পরিনীতা, ব্রহ্মা জানেন এত সাফল্য পেল, তবু হিরোইনদের স্যাটেলাইট ভ্যালু নেইই। হিরো যেমনই হোক, তার টানা ৪ বছর ছবি ফ্লপ হলেও কিছু যায় আসে না। স্যাটেলাইভ ভ্যালু সেই হিরোর নামেই আসে। বলিউডে এই ধারাটা এখন অনেকটাই বদলেছে। আশা করছি টলিউডেও ধীরে ধীরে বদল আসবে।’

ঋতাভরীর ছবি ছুঁয়ে গিয়েছে ঋতুস্রাব থেকে শুরু করে মহিলা পৌরহিত্য, সামাজিক কুসংস্কারের মত বিষয়গুলি। রূপোলি পর্দায় চরিত্রের মত বাস্তবেও সেটা নিয়ে বেশ খুশি নায়িকা। বলছেন, ‘এই ধরনের ছবির ক্ষেত্রে কেবল বাণিজ্যিক সাফল্য নয়, সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতাটাও গুরুত্বপূর্ণ। একা সমাজকে বদলানো সম্ভব নয়। আমরা ছবির মধ্যে দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারি মাত্র। এই ছবিও তেমনই একটা প্রচেষ্টা। তবে এই ছবিটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। এটাই তো পাওনা। আর নারীকেন্দ্রীক ছবি মানে নারীবাদী ছবি নয়। সেটা যে কোনও বিষয়ই হতে পারে। মেয়েদের এখনও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করা হয়। এই ধারণাটার বদল দরকার।’

রাত পোহালেই ক্রিসমাস। ১২টা বাজলেই সান্তা সাজবেন ঋতাভরী, উপহার খুলবেন। বন্ধুদের সঙ্গে মিলে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতেই আপাতত ব্যস্ত নায়িকা।